×

মুক্তচিন্তা

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিন

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:৪৪ পিএম

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সাধারণে মানুষের নাগালের বাইরে গেলে তা সরকারের ওপর মানুষের অসন্তুষ্টি তৈরি করে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সাধ্য অনুযায়ী সব উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে সবজি-পেঁয়াজ-কাঁচামরিচসহ নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে সীমিত আয়ের মানুষ দিশাহারা। এ অবস্থা যাতে দীর্ঘায়িত না হয় সে দিকে সরকারে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ নজর দিতে হবে।
বাজারে প্রায় সব ধরনের তরিতরকারির দাম বেড়েছে। মাঝে কয়েক দিন সবজির দাম খানিকটা কম থাকলেও এখন কিনতে রীতিমতো ঘাম ঝরছে ক্রেতাদের। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে। পেঁয়াজের পর এবার কাঁচামরিচের বাজারেও আগুন লেগেছে। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি বাজারে নেই। ঈদের পর থেকে ক্রমাগত চালের দাম বাড়ায় যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল তার রেশ এখনো কাটেনি। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়মিত তদারকির অভাবে বাজারে অনেক পণ্যের অস্বাভাবিক দাম রয়েছে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে শুধু নিম্নবিত্ত নয়, সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের নাভিশ্বাসও উঠেছে। সবজির দরবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা বরাবরের মতো সরবরাহের ঘাটতিকে অজুহাত হিসেবে দেখাচ্ছেন। তারা বলছেন, ভারি বর্ষণ ও বন্যার কারণে অনেক সবজির ক্ষেত মরে গেছে। নতুন করে আবাদ করা সবজি এখনো পুরোপুরি আসেনি, ফলে দাম বাড়ছে। রাজধানীর বাজারে ৫০-৬০ টাকার নিচে মিলছে না তেমন কোনো সবজি। সপ্তাহ ব্যবধানে পেঁপে ও পটোল ছাড়া অন্য সবজির দাম বেশ চড়া। বাজারে শিমের কেজি ১৫০-১৬০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও তা ১২০ টাকা ছিল। প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে বেগুন ধরনভেদে ৯০-১০০ টাকা হয়েছে। এখন গাজর ও টমেটো ১০০-১২০ টাকা কেজি; যা আগের সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। প্রতি কেজি বরবটি ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, পটোল ও করলা ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ ও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। প্রজনন মৌসুমের কারণে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ইলিশ ধরা ও বিপণনের ওপর চলছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এর প্রভাবে বাজারে ইলিশের দাম তো বেড়েছেই, সঙ্গে বেড়েছে অন্য মাছের দামও। বাজার অর্থনীতির যুগে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের খুব একটা ভ‚মিকা থাকার কথা নয়। তবে সিন্ডিকেটবাজি নির্মূল করা, বাজার মনিটরিং জোরদার করা, পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উপায়গুলো সচল রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারের ভ‚মিকা রাখার আছে। চালের বাজার অস্বাভাবিক বেড়েছিল মজুদদারির কারণে। সরকারের কড়া মনোভাবে চালের দাম কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সবজির দাম বাড়ার একটি কারণ চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত সবজি বাজারে না আসা। গত বন্যায় সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভয়াবহভাবে। নতুনভাবে চাষ করা সবজি তো ব্যাপকভাবে বাজারে না আসা পর্যন্ত সংকট কাটবে না। তারপরও কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অতিলোভ, অসাধুতা, কৃষি উৎপাদনে ব্যয়বৃদ্ধি, পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে ভ‚মিকা রাখছে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার কৃষি পুনর্বাসনে, পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ মনোযোগ দেবে এটাই প্রত্যাশিত। পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কোথাও যাতে ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজির শিকার না হয় সে দিকে নজর দিতে হবে। বন্যা-উত্তর এ সময়ে কৃষি পুনর্বাসনেও বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। এর পাশাপাশি তেল-ডাল-চিনি যা মূলত বিদেশ থেকে আমদানিনির্ভর পণ্যের বাজারে যাতে মুনাফালোভী সিন্ডিকেট কালো হাত বাড়াতে না পারে সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সাধারণে মানুষের নাগালের বাইরে গেলে তা সরকারের ওপর মানুষের অসন্তুষ্টি তৈরি করে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সাধ্য অনুযায়ী সব উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে সবজি-পেঁয়াজ-কাঁচামরিচসহ নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে সীমিত আয়ের মানুষ দিশাহারা। এ অবস্থা যাতে দীর্ঘায়িত না হয় সে দিকে সরকারে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ নজর দিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App