×

খেলা

মুশফিকের টস ভাগ্য

Icon

শামসুজ্জামান শামস

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ১২:০৩ এএম

টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের টস ভাগ্য বরাবরই ভালো। এ পর্যন্ত যত ম্যাচ জিতেছেন তার চেয়ে ম্যাচের টসে জিতেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পচেফস্ট্রমে  টস জিতে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে কঠিন সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মুশফিক। ওই টেস্টের হারের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন পরের টেস্টে এমন ভুল আর হবে না। ব্লুমফন্টেইনে ঘুরে দাঁড়াবে তার দল। ভাগ্যবান টাইগার অধিনায়ক  ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে টস জিতে ফাফ ডু প্লেসির বাহিনীকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে কোটি কোটি সমর্থককে আবারো হতাশায় ডুবালেন। আগে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ফায়দা হাসিল করেছে স্বাগতিকরা। [caption id="attachment_1289" align="aligncenter" width="800"] মুশফিকুর রহিমের টস ভাগ্য বরাবরই ভাল[/caption] রানের পাহাড়ের নিচে চটপট করেছেন টাইগার বোলাররা। একই ভুলটা হয়েছিল পচেফস্ট্রমে টেস্টেও। টস হেরে যাওয়ার পরও প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে তো দারুণ অবাক হয়েছিলেন ডু প্লেসি। তখন বিষয়টাকে একটু স্বাভাবিকভাবে নিলেও ব্লুমফন্টেইন টেস্টে টসের পর মুশফিকের আবারো একই সিদ্ধান্ত দেখে মনে মনে হয়তো ডু প্লেসি হাসছিলেন, আর মনে মনে বলেছিলেন ছেলেটি বোধ হয় উইকেট চেনে না? মুশফিকের ক্রিকেট বোধ-বুদ্ধি নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। দীর্ঘদিন ধরে খেলছেন। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্বও দিয়ে যাচ্ছেন। সাফল্যের পাল্লাটাও তার অন্যদের তুলনায় বেশ ভারী। এ কারণে দলের মধ্যে তাকে অন্যতম বিচক্ষণ ক্রিকেটার হিসেবেও পরিগণিত করা হয়। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অন্তত টস জিতে এমন দুটি সিদ্ধান্ত তিনি নিলেন, তাতে মুশফিকের ক্রিকেট বোধ-বুদ্ধি নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। আগের ম্যাচেও তিনি উইকেট চিনতে ভুল করেছিলেন। পচেফস্ট্রমে  টেস্টের পর তিনি নিজেই স্বীকার করলেন, উইকেট চিনতে পারেননি। প্রথম টেস্টের পর উইকেট চিনতে পারেননি ভুল স্বীকার করলেও সেবার হারের দায়ী করেছিলেন মূলত বোলারদেরই। প্রথম ইনিংসে উইকেট না পাওয়ার কারণে বোলারদের ধুয়ে দেন তিনি। একই সঙ্গে হুমকি দেন, বোলার পরিবর্তনের। দ্বিতীয় টেস্টে ঠিকই পরিবর্তন করলেন। তামিম এমনিতেই নেই। তার পরিবর্তে আসলেন সৌম্য সরকার। বোলার তাসকিন, শফিউল আর মিরাজকে বাদ দিয়ে নিলেন রুবেল, শুভাশিষ রায়কে। শুক্রবার বাংলাদেশের বোলারদের ওপর আরো বেশি চড়াও হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার। বার বার বোলার পরিবর্তন করেও কোনো লাভ হলো না। মোট সাতজন বোলার ব্যবহার করেন মুশফিক। [caption id="attachment_1290" align="aligncenter" width="1400"] ২০১৩ সালে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিকুর রহিম[/caption] টস জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে বার বার হাসির পাত্র হচ্ছেন মুশফিক। শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসি টসের সময়ই বলেছেন, এ ধরনের উইকেটে ১০ বারের মধ্যে ৯ বারই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। এটা খুবই নরমাল একটা উইকেট। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর কমেন্টেটর বলেছেন, মুশফিককে বলব, আপনি যদি উইকেট চিনতে না পারেন তাহলে সবচেয়ে ভালো হয় টসে হারা। তাহলে অন্তত ভুল সিদ্ধান্তের অভিযোগে পুড়তে হবে না আপনাকে। ব্লুমফন্টেইন টেস্টের আগে বাংলাদেশের ভক্ত ও সমর্থকদের একটাই প্রশ্ন আচ্ছা দুই চালিকাশক্তি তামিম ও সাকিব ছাড়া কি আদৌ টেস্ট খেলতে পারবে বাংলাদেশ? কিংবা এদের ছাড়া টেস্টে শেষ কবে মাঠে নেমেছিল টাইগাররা? ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোয় সাকিব ও তামিম ছাড়া বাংলাদেশ শেষ টেস্ট খেলতে নেমেছিল। তামিম ও সাকিব এর আগে যে তিনটি মাত্র টেস্ট একসঙ্গে খেলতে পারেননি, তার দুটিতে হারলেও একটি টেস্টে দারুণ খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের মার্চে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে ম্যাচে মুশফিকুর রহিম ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন, মোহাম্মদ আশরাফুল যে টেস্টে ১৯০ রানে গিয়ে আউট হয়েছেন সেই টেস্টে বাংলাদেশ মাঠে নেমেছিল তামিম ও সাকিবকে ছাড়াই। ২০১৩ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ঘরের মাঠে দুই ম্যাচের সিরিজে ড্র দিয়ে শুরুর টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানো। বন্দর নগরীর চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট বীরের মতো লড়াই করে ড্র। দেশের বাইরে বাংলাদেশ টেস্টে প্রতিপক্ষের মাঠে ৪৯ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এসব ম্যাচে ৪৬০ উইকেট পেয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। ম্যাচপ্রতি ১০-এরও কম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ উইকেটগুলো বাংলাদেশ পেয়েছে ৫৩.০৫ গড়ে। আর শুধু বোলারদের কথা মাথায় আনলে গড়টা বেড়ে ৫৫.০৮তে ঠেকে। বোলিং গড়ে বাংলাদেশের মতো এমন করুণ দশা আর কোনো দলের নেই। জিম্বাবুয়েও প্রতিপক্ষের মাঠে ৫১১ উইকেট পেয়েছে, সেটাও বাংলাদেশের চেয়ে কম ম্যাচ (৪৬) ও অনেক কম গড়ে (৪২.২৫)। স্ট্রাইক রেট বিবেচনা করলেও বাংলাদেশের অবস্থা ভুলে যাওয়ার মতো। প্রতি ৯২.৩ বলে এক উইকেট পান বাংলাদেশের বোলাররা। বাংলাদেশের ধারে কাছে আছে শুধু জিম্বাবুয়ে (৮৫.২)। বিশ্বের অন্য কোনো দলকে উইকেট পেতে ৮০ বল অপেক্ষা করতে হয় না। [caption id="attachment_1291" align="aligncenter" width="900"] টস জিতে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিসের সঙ্গে করমর্দন করছেন মুশফিক[/caption] স্পিননির্ভর বোলিং আক্রমণ দেশের বাইরে খারাপ করছে তাই নয়। পেস-বান্ধব উইকেটেও বাংলাদেশের পেসারদের পারফরম্যান্স প্রশ্নবিদ্ধ। ব্লুমফন্টেইন টেস্টের আগে খেলা ৪৯ টেস্টে ২৪৫ উইকেট পেয়েছেন পেসাররা। উইকেট-সংখ্যায় স্পিনারদের পেছনে ফেলছেন বটে, কিন্তু গড়ে (৫৮.১৭) কিংবা স্ট্রাইক রেটে (৯২.৫) পেসাররা পিছিয়েই থাকছেন। কোর্টনি ওয়ালশ দলের বোলিং দায়িত্ব নেয়ার পর নিউজিল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও পেস বোলারদের পারফরম্যান্স খুব একটা আশা দেখাচ্ছে না। শুক্রবার প্রথম শেষে  দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ উইকেট হারিয়ে ৪২৮ রান সংগ্রহ করেছে। প্রোটিয়াদের যে ৩টি উইকেটের পতন হয়েছে তার ২টি তুলে নিয়েছে শুভাশিষ রায় অপরটি রুবেল হোসেন। এখানে দুই পেসার সফলতার পরিচয় দিয়েছেন।    

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App