×

পুরনো খবর

ঢাকায় ঢাকের শব্দে পূজার আয়োজন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০১:০১ পিএম

বাঙালি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ট থেকে দশম দিন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এই পূজা। একে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের সূচনা হয় মহালয়া দিয়ে। দুর্গাষষ্টী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়াদশমী মোট এই পাঁচ দিন চলে পূজার আয়োজন। দুর্গাপূজা মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হলেও বাংলাদেশে এটি সার্বজনীন উৎসব হিসেবেই পালিত হয়েছে বহু যুগ ধরে। এ বছর রাজধানী ঢাকাতে বিভিন্ন মঠ ও মন্দির মিলিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রায় ২৩১টি পূজা। ঢাকার কোথায় কোথায় দেখতে পারেন পূজা, চলুন জেনে নেওয়া যাক এবার। * ঢাকেশ্বরী মন্দির ঢাকা শহরের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম মন্দির এটি। খুব বড় আকারে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় এই প্রাচীনতম মন্দিরে। এ মন্দির ঘিরে প্রচলিত আছে অনেক জনশ্রুতি। কথিত আছে, রাজা বল্লাল সেন স্বপ্ন দেখেন দেবী দূর্গার একটি মূর্তি আছে বুড়িগঙ্গা নদীর পাশের জঙ্গলে। তিনি মূর্তিটি উদ্ধার করে মন্দির নির্মাণ করে দেবীকে সেখানে প্রতিষ্ঠিত করেন। অনেকের মতে, ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকেই ঢাকা নামের উৎপত্তি। এই মন্দির মূলত দেবী দুর্গার মন্দির। তাই এখানে দুর্গাপূজাও হয় খুব আড়ম্বরের মধ্য দিয়ে। * রামকৃষ্ণ মিশন ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন রোডে রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন মঠ। মিশনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৯ সালে। এখানকার দুর্গাপূজার মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। প্রতি বছর মহাঅষ্টমীর দিনে অনুষ্ঠিত হয় এই কুমারী পূজা। দেবীর আসনে একজন কুমারী কিশোরীকে বসিয়ে মাতৃরূপে পূজা করা হয়। এই দিন রামকৃষ্ণ মিশনের জমকালো এ পূজা দেখতে প্রচুর লোকের সমাগম ঘটে। * রমনা কালী মন্দির ঘটা করে দুর্গাপূজা হয় রমনা কালী মন্দিরেও। বর্তমানে এ মন্দিরে কালী মূর্তি ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- দুর্গা মন্দির, লোকনাথ মন্দির, রাধাগোবিন্দ মন্দির, মা আনন্দময়ীর মন্দির। এই মন্দিরটি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ধ্বংস করে ফেলে। দুর্গাপূজার সময় এখানে অস্থায়ী মন্দির নির্মাণ করে পূজা করা হয়। উল্লেখ্য, মোঘল আমলের শেষ দিকে মোঘল সেনাপতি মান সিংহের সহযোগিতা ও বার ভূঁইয়ার অন্যতম কেদার রায় এর অর্থে শাহবাজ মসজিদের উত্তর দিকে হরিচরণ গিরি ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন কৃপা সিদ্ধির আখড়া যা পরবর্তীতে ভদ্রাকালীবাড়ি এবং পর্যায়ক্রমে নামকরণ করা হয় রমনা কালী মন্দির হিসেবে। ১৮৫৯ সালের ঢাকার এক মানচিত্রে মন্দিরটিকে কৃপাসিদ্ধির আখড়া নামে অভিহিত করা হয়েছে। ঐতিহাসিক যতীন্দ্রমোহন রায়ের তাঁর ‘বিবরণ’ নামের একটা বইতে মন্দিরটির বেশ ভালো একটা বর্ণানা দিয়ে গেছেন, তিনি লিখেছেন- ১২টি সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরের বারান্দায় উঠতে হতো। বারান্দার মধ্যখানে কাঠের সিংহাসনে ছিল লাল পাড়ের শাড়ী পরা স্বর্ণ মনি-মুক্তার অলঙ্কারে ভূষিত কষ্ঠি পাথরের কালীক ও ভদ্র কালী মূর্তি। এই কালীমূর্তিটি বিক্রমপুরাধিপূত চাঁদরায়ের প্রতিষ্ঠিত বলে জনশ্রুতি আছে। * কলাবাগান মাঠের পূজা কলাবাগান এলাকায় কোনো মন্দির নেই। তাই সেখানকার খেলার মাঠে তৈরি হয় পূজামণ্ডপ। কলাবাগান ক্রীড়া চক্র তাদের মাঠটি সৌজন্যমূলক পূজার জন্য ব্যবহার করতে দেন। প্রচুর দর্শনার্থীর ফলে বেশ ভিড় হয় এই অস্থায়ী পূজা মণ্ডপটি। ধানমন্ডিতে বসবাসকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্যোগে মূলত এখানে পূজাটি অনুষ্ঠিত হয়। মনকাড়া প্যান্ডেল এবং আলোকসজ্জা এখানকার পূজার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও দৃষ্টিনন্দন বিষয়। * বনানী পূজামণ্ডপ ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় পূজামণ্ডপ তৈরি হয় বনানী মাঠে। পূজার আয়োজন করে গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজা পরিষদ। সেখানে পূজার প্রচলন হয় ২০০৮ সাল থেকে। বেশ ঘটা করেই সে বছর গুলশান-বনানীতে পূজা শুরু করেন কয়েকজন উদ্যোক্তা। শুরু থেকেই সেখানকার পূজা সব শ্রেণীর লোকের নজর কাড়তে শুরু করে। বনানী মাঠের পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল। দশমীর দিনে গুলশান-বনানী এলাকায় বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। তারপর বিসর্জনের জন্য দেবী দুর্গাকে নিয়ে যাওয়া হয় আশুলিয়ায়। * পুরোনো ঢাকার পূজা পুরোনো ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় অনেকগুলো পূজা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শাঁখারি বাজারের পূজা। মন্দির ছাড়াও এখানে রাস্তার দুপাশে অস্থায়ী মণ্ডপ তৈরি করে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজার সময় পুরো এলাকার রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পূজা উপলক্ষে ওই এলাকায় বসে মেলা। মেলায় মাটির খেলনা, প্রসাধনী, মণ্ডা-মিঠাইসহ পাওয়া যায় বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার। শাঁখারিবাজার ছাড়াও পুরনো ঢাকার তাঁতিবাজার, সুত্রাপুরের পূজাও খুব জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। এছাড়াও চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, জগন্নাথ হল, লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, ব্রাহ্মসমাজ মন্দির, রায়েরবাজার আখড়া মন্দির, জয়কালী মন্দিরের পূজা। সুত্র: রাইজিংবিডি

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App