রোহিঙ্গা ইস্যু ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৭:০৮ পিএম
রোহিঙ্গা ইস্যু এখন যে মাত্রায় আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছে, তাতে বাংলাদেশের তরফ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে যে প্রস্তাবগুলো রেখেছেন, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যেই। আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ছাড়া এই প্রস্তাবগুলো এগিয়ে নেওয়া বা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার কাজটি সহজ হবে না। ফলে বলা যায়, বাংলাদেশের কূটনীতির সাফল্যের ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অনেক দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলেছেন। আবার বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অনেক দেশের নেতাদের মুখে এ ব্যাপারে কিছু শোনা যায়নি, যা কার্যত মিয়ানমারের পক্ষেই গেছে। এই অধিবেশন শেষ হওয়ার পর সাত সদস্যদেশ মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা নিয়ে আলোচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছে। এই সাত দেশের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যদেশের তিনটি—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স রয়েছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের সম্ভাব্য বৈঠক সামনে রেখে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক উদ্যোগ বাড়াতে হবে।
এটা এখন পরিষ্কার যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ছাড়া মিয়ানমারকে আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন ও গণহত্যা বন্ধে বাধ্য করা যাবে না। শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতেও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ জরুরি। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে যে নীতি নিয়েছে, তা কেন অগ্রহণযোগ্য, সেটা বিশ্বসম্প্রদায়কে বোঝাতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে এখন এটা তুলে ধরা জরুরি যে দেশটির রোহিঙ্গাবিরোধী নীতির কারণেই দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাটি চলছে। এই সমস্যার কোনো দায় বাংলাদেশের না থাকলেও জনবহুল এই দেশটিকে ১০ লাখ শরণার্থীর ভার বইতে হচ্ছে এবং এর একটি স্থায়ী সমাধান জরুরি।
বাংলাদেশের তরফ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এটা আরও জোরালোভাবে তুলে ধরা দরকার যে রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা বা জঙ্গি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দেশটি জিরো টলারেন্সের নীতি নিয়েছে। কারণ, অনেক দেশই মিয়ানমারের রোহিঙ্গাবিরোধী জাতিগত নির্মূল নীতির সঙ্গে ইসলামি চরমপন্থার বিষয়টিকে গুলিয়ে ফেলেছে বলে মনে হয়। মিয়ানমার শুরু থেকেই আরাকান রাজ্যে বর্তমানে চলমান রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান ও গণহত্যাকে ‘মুসলিম জঙ্গিদের’ তৎপরতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে আসছে। সফল ও কার্যকর কূটনীতিই পারে এ ধরনের ভুলগুলো ভেঙে দিতে।
আমরা আশা করছি, সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি সামগ্রিক ও কার্যকর কূটনৈতিক কৌশল গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।