×

গোলটেবিল

মুদ্রানীতির ভুলে কমানো যায়নি মূল্যস্ফীতি

Icon

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কাগজ প্রতিবেদক : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতির দুর্বলতা ও ভুলের কারণে মূল্যস্ফীতি কমানো যায়নি। সরকারের ঋণ অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় আগামীতে মূল্যস্ফীতি কমবে এমন আশাও নেই। নানা কারণে রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ‘মূল্যস্ফীতি’ নিয়ে ভুগছে দেশের অর্থনীতি। আর্থিক খাতে নৈরাজ্য বন্ধ করতে পারেনি সরকার। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, নিরাপত্তাসহ আছে নানা চ্যালেঞ্জ। এমন প্রেক্ষাপটে জনগণের আস্থা ধরে রাখতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এমনটাই মনে করেন বিশিষ্টজনরা। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সরব উপস্থিতির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন এগিয়ে নেয়ার কথাও জানান তারা। গতকাল শনিবার রাজধানীর ঢাকা গ্যালারিতে সম্পাদকদের শীর্ষ সংগঠন এডিটরস গিল্ড আয়োজিত ‘সরকারের ১০০ দিন : অর্থনীতি রাজনীতির চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এমন মতামত জানান আলোচকরা। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল বাবুর সভাপতিত্বে এ গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক হিসেবে ছিলেন ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ, সাবেক আইজিপি ও রাষ্ট্রদূত ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সাল, আইনজীবী ও গবেষক ড. ফারজানা মাহমুদ প্রমুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, এ সরকার কিন্তু একেবারে নতুন নয়। আগের সরকারেরই ধারাবাহিক। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে রদবদল দেখেছি। সরকারের অর্থনৈতিক নীতি এবং প্রয়োগের যে প্রক্রিয়া, মনে হয় না খুব বড় কোনো পরিবর্তন হয়েছে। আরেকটি দিক হচ্ছে, বড় ধরনের অর্থনৈতিক যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে বিশেষ করে করোনাপরবর্তী সময় উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সামষ্টিক অর্থনীতির নানা অস্থিতিশীলতা, এটার প্রকাশ নানাভাবে হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ খুব অল্প সময়ের মধ্যে অর্ধেকের কমে নেমে এসেছে। রাজস্ব আদায়ের দিকে তাকালে সরকারের বড় যে প্রকল্পগুলো সেগুলো বাস্তবায়নে উদ্বেগের মাত্রা বাড়ছে। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতির দুর্বলতা ও ভুলের কারণেই মূল্যস্ফীতি কমানো যায়নি। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আগামীতে মূল্যস্ফীতি কমার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। এর মূল কারণ হচ্ছে সরকার অনেক ঋণ করেছে বিদেশ থেকে। এটা পরিশোধ করা এত সহজ হবে না। কয়েকদিন আগে দেখলাম সরকার রাশিয়াকে অনুরোধ করছে, দুই বছর পরে কিস্তি নেয়ার জন্য। আমরা পরিশোধ করার সক্ষমতার বাইরে ঋণ করেছি। এখন যেমন পাকিস্তান একটা ঋণ নিয়ে আরেকটা শোধ করছে, বাংলাদেশের অবস্থা যদি সেদিকে যায়, আমি সরকারকে অনুরোধ করব ইন্টারন্যশনাল সোর্স থেকে আর যেন ঋণ না করে। আইএমএফও বলেছে, বাজেট ছোট রাখার জন্য। নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, গত ১০০ দিনের মধ্যে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে একটি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ হাইজ্যাক হয়েছিল সোমালিয়ার জলদস্যু দ্বারা। মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। সাবধানতা অবলম্বন করার কথা ছিল, তারা করেনি। শুধু আত্মসমর্পণ করে জাহাজটি তাদের কাছে তুলে দেয়া হয়েছে, এটা অনেক বড় ব্যর্থতা। কুকি চিনের তৎপরতাও উদ্বেগজনক। বিজিবির সদস্যরা সেখানে ছিল, তাদের সামনে দিয়েই চলে গেল ব্যাংক লুট করে, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেয়া হলো না। এগুলোর ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন আছে। এখন সেনাবাহিনী গেছে, অভিযান চলছে, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা ভুগছে। একই সময়ের মধ্যে হিজবুত তাহরীরের একটা উত্থানের বিষয় দেখা গেছে। আমার কাছে মনে হয়, অভ্যন্তরীণভাবে এগুলো আমাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। নির্বাচন হয়েছে তিন মাসও হয়নি, এর মধ্যে যদি চক্রান্ত দেখতে শুরু করে, তাহলে সংকটটা কী এবং কোথায়? আমরা বুঝতে পারি না সরকার নিজে নিজে কেন চক্রান্ত অনুভব করছে। নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, মার্চে দেশে একটি দুর্ভিক্ষ ঘটানোর চক্রান্ত আছে। মার্চ মাসে আমরা দুর্ভিক্ষ দেখিনি, চক্রান্ত কী ছিল জানলাম না। চক্রান্ত তত্ত্বকে সামনে রেখে সরকার বারবার একটা রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে। এটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে আর বিরোধী দল ব্যস্ত হতাশা, দুর্বলতা কাটিয়ে কীভাবে মাঠে থাকা যায় সে চেষ্টায়। ভারত বয়কট একটা সামাজিক আন্দোলন ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, সেখান থেকে বিএনপি নেতারা পিক করেছেন। কারণ বাংলাদেশে আসলে ভারতবিরোধী কোনো রাজনৈতিক দল নেই। ইসলামী দলগুলোও এখন ভারতের বিরোধিতায় কিছু বলে না। বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ১০০ দিনের সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য সারা পৃথিবীর স্বীকৃতি এই সরকার পেয়েছে। কোথাও সমস্যা কিন্তু দেখছে না, সবাই এখানে বাণিজ্য করতে চাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এখন কিন্তু বিএনপি কোনো বাধা নয়। কারণ তারা দল হিসেবে ভুল করেছে এবং তাদের অনেকেই এখন উপজেলা নির্বাচন করছে। বিএনপি যদি নির্বাচনে যেত তাহলে ৭৩ জনকে বহিষ্কারের চিঠি দিতে হতো না। এখন বিএনপি দল সামলাতেই ব্যস্ত। মাঠের কর্মীরা নির্বাচনমুখী, আর বিএনপি লন্ডনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে নাকি মির্জা ফখরুলের; সেটি নিয়ে ব্যস্ত। তৃণমূলের কেউ কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশ মানছে না। এটি কিন্তু আওয়ামী লীগের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। দলের সাধারণ সম্পাদক যখন প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হুঁশিয়ারি দেন, সেটি কি কেউ মান্য করছে? হুঁশিয়ারি কাজে না দিলে আরেকটি প্রেস কনফারেন্স করে জানাতে হয়, তারা ব্যবস্থা নেবেন! বিএনপি বহিষ্কার করে দেখিয়ে দিল, আগামী দিনে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত তৃণমূলে কেউ মানবে না, মন্ত্রী-এমপি মানবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App