×

জাতীয়

‘টাকার গাছ’ আছে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবের?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:৩৯ পিএম

‘টাকার গাছ’ আছে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবের?

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান

মাহবুবুর রহমান, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তিনি। অঢেল সম্পদের মালিক। বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো রাখঢাক না করে ২০ পার্সেন্ট করে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। ঘুষের টাকার ভাগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তাদের দেয়া হয় বলেও বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাছে দাবি করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হবে না বলে ঠিকাদারদের হুমকি দেন। দুদকে জমা হওয়া এরকম ভয়াবহ অভিযোগসংশ্লিষ্ট চিঠির একটি কপি ভোরের কাগজের হাতে এসেছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল বিভাগের বর্তমান নির্বাহী প্রকৗশলী মাহবুবুর রহমান নারায়ণগঞ্জের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৗশলী থাকাকালীন শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ডল হাউজ নির্মাণে অঞ্জলী এন্টার প্রাইজ নামক একটি ভুয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দিয়ে কাজ করিয়ে নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করে কয়েক কোটি টাকা আত্মাসাৎ করেন। নারায়ণগঞ্জের ডল হাউস নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অঞ্জলী এন্টারপ্রাইজের কাগজপত্র এবং টেন্ডারের নথিপত্র তলব করলে আসল ঘটনা বের হয়ে আসবে। এ ছাড়া ঘুষ না দিলে তিনি কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেন না বলে অনেক ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন। ঠিকাদাররা দুদকে অভিযোগ দিতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকে তিনি ঘুষ নেয়ার সময়ই ঠিকাদারদের শাসিয়ে দেন, দুদকে অভিযোগ দিলেও তার কিছুই হবে না। কারণ তার ঘুষের টাকার ভাগ দুদক কর্মকর্তাদের দেয়া হয়। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঘুষের টাকায় মাহবুবুর রহমান নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জে একটি বিলাসবহুল বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর এবং রাজধানীর অভিজাত এলাকায় কয়েকটি প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে তার। এ ছাড়া তিনি প্রায় শত কোটি টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। স্ত্রী, নিজ পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের নামে বেনামে এফিডিআর সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন ব্যাংকে তার বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে বলে জানা যায়। এত টাকা কোথায় পেলেন? জানতে চাইলে মাহবুব বলেন, ‘আমি অর্জন করেছি’। তবে তার দপ্তরের কর্মচারীরা আড়ালে বলাবলি করেন, ‘মাহবুব স্যারের টাকার গাছ আছে’। নারায়ণগঞ্জের ডল হাউস নির্মাণে বিপুল পরিমাণ টাকা লোপাটের অভিযোগসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভোরের কাগজের পক্ষ থেকে গত শনিবার তার সঙ্গে মোবাইলে যোগযোগ করা হলে প্রথমে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কিছুক্ষণ পর তিনি প্রতিবেদককে ফোন করে একটি বিকাশ নম্বর দেয়ার অনুরোধ করেন। প্রতিবেদক তাকে সবিনয়ে এ ধরনের অফার ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, তার কোনো বক্তব্য থাকলে তিনি যেন অফিসে এসে অথবা ফোনে দিয়ে থাকেন। তিনি প্রতিবেদককে সোমবার ভোরের কাগজ কার্যালয়ে আসার কথা জানান। প্রতিবেদকের সঙ্গে তার মোবাইলে যোগাযোগের সব রেকর্ড ধারণ করা আছে। মাহবুবুর রহমান গত সোমবার ভোরের কাগজ কার্যালয়ে আসেননি। ফোনেও এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য দেননি। এ অবস্থায় এই প্রতিবেদক তার বক্তব্যের জন্য পুনরায় যোগযোগ করলে তিনি তার অফিসে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে প্রতিবেদক সোমবার বিকাল ৪টার সময় তার অফিসে গেলে তিনি এলোমেলো কথা বলতে শুরু করেন, কথা বলার একপর্যায়ে প্রতিবেদক তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি লক্ষ্মীপুর বলেন। কিন্তু প্রতিবেদক তাকে বলেন, আপনার তো নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জে একটি বাড়ি আছে। তখন তিনি দম্ভ করে বলেন, শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, আমার আরো কয়েকটি বাড়ি আছে। আমি করতে পেরেছি, আপনার সমস্যা কোথায়? আপনি রিপোর্ট করলেও কোনো লাভ হবে না। দুদকে আমারও লোক আছে। কথোপকথনের একপর্যায়ে তিনি প্রতিবেদককে এক বান্ডিল টাকা দিয়ে এ বিষয়ে রিপোর্ট না করার অনুরোধ করেন। এ অবস্থায় প্রতিবেদক হতভম্ব হয়ে যান এবং সবিনয়ে তার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে তার বক্তব্য জানতে চান। একপর্যায়ে তিনি তার চেয়ার থেকে উঠে এসে বারবার টাকা প্রতিবেদকের পকেটে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে তার কথোপকথনের রেকর্ড করা মোবাইল ফোন জব্দের চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় প্রতিবেদক কোনো রকমে তার অফিস ত্যাগ করেন। দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার বিষয়ে তার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি তাদের দিয়েও অনৈতিক কাজ করান। কিন্তু তারা ঊর্ধ্বতন বসের নির্দেশ মানতে বাধ্য হন বলেও জানান। তবে চাকরি যাওয়ার ভয়ে তারা নাম প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করেন। দুদকের পেছনেই গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল বিভাগের অফিস। তিনি এই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। অথচ দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন প্রতিষ্ঠানটির পেছনে বসে দেদারসে দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। কিন্তু দুদক টেরই পাচ্ছে না। এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এডভোকেট শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমি নিজেও দুর্নীতি করব না, কাউকে দুর্নীতি করতেও দেব না। যদি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এসে থাকে। আমি আশা করি, দুদক তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের অনুসন্ধান করবে। দুদকের অনুসন্ধানে যদি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই এ ধরনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App