×

জাতীয়

ঝিনাইগাতীতে টাকা ছাড়া মিলছে না পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:০৯ পিএম

ঝিনাইগাতীতে টাকা ছাড়া মিলছে না পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে টাকা ছাড়া পল্লী বিদ্যুতে সংযোগ মিলছে না গ্রাহকদের ভাগ্যে। প্রতি জন বিদ্যুৎ গ্রাহককে সংযোগ দিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছে ৫থেকে ৭ হাজার টাকা করে। আবার টাকা দিয়েও প্রতারিত হচ্ছে শত শত গ্রাহক। বছরের পর বছর ঘুরেও মিলছে না পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ। এতে ২০১৯ সালে মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ,কার্যক্রম পর্যবসিত হওয়ার আসংকা দেখা দিয়েছে। সরে জমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে , স্থানীয় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিরা মধ্যস্বত্বভোগীরা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সহজ-সরল নিরীহ মানুষকে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তারা পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে এসব টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছেন । জানা গেছে,পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পেতে ৫১৫ টাকা ভ্যাটসহ ব্যাংক একাউন্টে জমা দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার কথা গ্রাহকদের । কিন্তু এ উপজেলায় হচ্ছে তার উল্টোটা। অভিযোগ রয়েছে এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা হারে হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় ওই মধ্যস্বত্বভোগীরা । আবার টাকা দিয়েও বছরের পর বছর মধ্যস্বত্বভোগীদের পিছনে ঘুরেও বিদ্যুৎ সংযোগ মিলছে না গ্রাহকদের ভাগ্যে। উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বাকাকুড়া গ্রামের বাসীন্দা নবেশ খকশী জানান, উপজেলার সীমান্তে তাওয়াকোচা,পানবর, বাকাকুড়া, গজনী,হালচাটি,গান্ধিগাওসহ আদিবাসী পল্লীগুলোতে প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা হারে হাতিয়ে নিয়েছে। এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেও অনেকের ভাগ্যেই আজ জোটেনি বিদ্যুৎ সংযোগ। উপজেলার ছোট গজনী গ্রামের আদিবাসী নেতা ফিলিশন ও আব্রাহাম সাংমা জানান, পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার নাম করে ২০১৫ সালে ওই গ্রামের ৭০টি আদিবাসী পরিবারের কাছ থেকে ৫হাজার টাকা হাড়ে হাতিয়ে নেয় পল্লী বিদ্যুতের স্থানীয় এক মধ্যস্বত্বভোগী। কিন্তু দীর্ঘ ৩ বছরেও বিদ্যুৎ সংযোগ মিলেনি পরিবারগুলোর ভাগ্যে। গান্ধিগাঁও গ্রামের ইসরাফিল ও উমেদ আলী জানান, গান্ধীগাঁও, হালচাটি ও নকশি গ্রামের ২শতাধিক পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নাম করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় স্থানীয় কতিপয় মধ্যস্বত্বভোগী । কিন্তু আজও তারা বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি। তারা বলেন, এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। কাংশা ইউনিয়নের কারাগাও গ্রামের মহিলা ইউপি সদস্য মর্জিনা বেগম জানান, গত এ বছর পূর্বে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নাম করে তার গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবারের কাছ থেকে ৬ হাজার করে হাতিয়ে নেয় স্থানীয় এক মধ্যস্বত্বভোগী। তার মধ্যে ১০ টি বাড়ীতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলেও বাকী পরিবারগুলোর ভাগ্যে আজও জুটেনি বিদ্যুৎ সংযোগ। নলকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ফর্সা জানান, তার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে জিম্মি হয়ে পরেছেন গ্রামবাসীরা। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কাংশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জহরুল হক বলেন, তার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে র্দীঘ দিন থেকে এ অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে । কিন্তু কেউ সরাসরি অভিযোগ না করায় মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। এভাবে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দীর্ঘ দিন থেকে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হলেও এসব দেখার যেন কেউ নেই। পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তাদের সাথে মধ্যস্বত্বভোগী বলতে কারোও সাথে তাদের কোনো সর্ম্পক নেই বলেই দায় এরিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ওই মধ্যস্বত্বভোগীরা অবাধে চালিয়ে আসছে তাদের কর্মকান্ড। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময় প্রশানের গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করেও এর কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না গ্রামবাসীরা। এ ব্যপারে পল্লী বিদ্যুতের শেরপুরের জেনারেল ম্যনেজার মোঃ মাশরুল হক খানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রামে পৌছে দেয়ার দায়িত্ব ঠিকাদারের। আমাদের কাজ শুধু সংযোগের অনুমতি ও চালু করে দেয়া। তিনি বলেন, আমাদের আওতায় কোনো মধ্যস্বত্বভোগী নেই । তার মতে ৫১৫ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে যে কোনো গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে পারেন। ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবেল মাহমুদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,আমার কাছে কোনো অভিযোগ এলে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ নিয়ে ১৩ জানুয়ারী ভোরের কাগজ অনলাইন ও ১৫ জানুয়ারী ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশীত হলে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেছেন। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের নেয়া টাকার আদলেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কিছু সংখ্যক গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App