আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাঙ্গুনিয়ায় আওয়ামী লীগের একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন পেতে এক ডজন সম্ভাব্য প্রার্থীর দৌড়ঝাঁপ চলছে। যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, জনপ্রিয়তা ও দলের কাণ্ডারি হিসেবে নিজেকে হাইকমান্ডের কাছে তুলে ধরছেন প্রার্থীরা। উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের ব্যস্ততা দেখা গেলেও বিএনপি রয়েছে একেবারে নীরব। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশলে প্রচার চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন তারা। দলের হাইকমান্ড ও ভোটারদের মন জয় করতে আওয়ামী লীগের ১০ বছরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষাসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মো. সাদেক নূর সিকদার, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শাহ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক জেলা পরিষদ সদস্য কামরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা মো. আবু জাফর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ-বিষয়ক সম্পাদক বেদারুল ইসলাম বেদার, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ও চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আজগর, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। পোমরা ইউনিয়নের কৃষক রবিউল বলেন, বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে কিনা তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে। ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও বিএনপি প্রার্থিতার বিষয়ে নীরব রয়েছে। উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি অধ্যাপক কুতুবউদ্দিন বাহার বলেন, উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তাতে সবার মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী দেয়া হবে। উপজেলা বিএনপির অপর অংশের আহ্বায়ক মো. শওকত আলী নূর বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার প্রশ্নই আসে না। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শাহ গত ৫ বছর সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি এলাকার সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ খলিলুর রহমান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল হিসেবে অনেকে মনোনয়ন চাইতে পারে। রাঙ্গুনিয়ায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে হবে। দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কাজ করবে। রাঙ্গুনিয়া প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মো. সাদেক নূর সিকদার বলেন, সারাজীবন দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছি। দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছি বলে জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতনসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয়েছি বারবার। দলের হাইকমান্ড যদি আমাকে নৌকা প্রতীকে উপজেলা চেয়ারম্যানের মনোনয়ন সুযোগ দেয় তাহলে দলের পাশাপাশি ব্যক্তি জনপ্রিয়তায় বিপুল ভোটে জয়ী হতে পারব। উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদক মনোহর আলী তালুকদার বলেন, তৃতীয়বারের অপরাজিত সাংসদ ড. হাছান মাহমুদের নেতৃত্বে ১০ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় রাঙ্গুনিয়ার চিত্র পাল্টে গেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে ড. হাছান মাহমুদ তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। আগামী ৫ বছরে নিজ সংসদীয় এলাকায় আরো বেশি উন্নয়ন প্রকল্প ত্বরান্বিত করতে একজন জনপ্রিয়, দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা প্রয়োজন। উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে বিরাজ করছে আনন্দের আমেজ। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কুশল ও মতবিনিময় মাধ্যমে প্রার্থীরা বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। উল্লেখ্য, রাঙ্গুনিয়ার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটকেন্দ্র হচ্ছে ৮৮টি। উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৫৩ হাজার ২০৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩১ হাজার ২১০ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৯৯৮ জন।