×

মুক্তচিন্তা

ডা. দীপু মনির ওপর যে গুরুভার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৩৩ পিএম

ছোট্ট শিশুটি শিশির ভেজা ঘাসে কোমল পা ফেলে ধান ক্ষেতের আলপথ ধরে হেঁটে চলেছে। বুকে বই জড়িয়ে হেঁটে চলেছে স্কুলের পথে। এমন দৃশ্য চোখের শান্তি। যেন স্বপ্নের বাংলাদেশ হেঁটে চলেছে সম্ভাবনার পথ ধরে। তাই এ দৃশ্যই ভবিষ্যতের মেধাবী বাংলাদেশ। নানা কারণে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার আজ ভঙ্গুর দশা।

বিদেশি শিক্ষাপদ্ধতির আলোকে হ-য-ব-র-ল সৃজনশীল পদ্ধতি, দক্ষ শিক্ষকের অভাব, অভিভাবকদের অসচেতনতা, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের পাঠদানে অনীহা, কোচিং বাণিজ্য, সর্বোপরি প্রশ্নফাঁস কলঙ্কে জড়িয়ে দিশাহারা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আজ বিপর্যস্ত। প্রশ্নফাঁসের মতো ভয়াবহ ব্যাধির কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছি আমরা। যেন কিছুই করার নেই। এ অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি।

‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’-এর আগে স্বাধীন বাংলাদেশে আরো ছয়টি কমিশন রিপোর্ট প্রণয়ন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ হয়েছে দুটি ২০০০ ও ২০১০ সালে। বর্তমান শিক্ষানীতি-২০১০ জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী (চেয়ারম্যান) ও ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদের (কো-চেয়ারম্যান) নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রণীত হয়।

শিক্ষানীতির এ পর্যায় থেকে সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি আসে। মূলত শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইমুখী করতে এবং সৃজনশীলতার বিকাশে এ পদ্ধতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। যদিও সৃজনশীলতার বিকাশে এ পদ্ধতি অনন্য ভূমিকায় আবির্ভূত হতে পারত, কিন্তু প্রশিক্ষিত শিক্ষক ও যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব ও প্রশাসনিক দুর্বলতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এ পদ্ধতি।

শ্রেণিকক্ষে সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতিতে পাঠদানে শিক্ষকদের যথাযথভাবে তৈরি না করে ছাত্রদের সৃজনশীল পদ্ধতির দিকে ঠেলে দেয়া কতটা যৌক্তিক ছিল? পাসের হার বাড়ানোর বিষয়ে যতটা তৎপরতা দেখা গেছে, শিক্ষার গুণগত মান ততটা গুরুত্ব পায়নি। শিক্ষা খাতে এখন সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি চাই শক্ত মনিটরিং।

শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যদের স্থান করে দিতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে শ্রেণি শিক্ষক যথাযথভাবে পাঠদান করছেন কিনা তা যাচাইয়ে একাডেমিক এডভাইজার নিয়োগ করা জরুরি, যিনি নিশ্চিত করবেন শ্রেণি শিক্ষকের পড়ানো বিষয় ছাত্ররা কতটা অনুধাবন করতে পেরেছে এবং সে অনুযায়ী ছাত্ররা শ্রেণির খাতায় লিখতে পারছে কিনা।

তাহলেই শিক্ষকরা তৎপর হবেন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বিষয়ে। কোচিং দৌরাত্ম্যও দুর্বল হয়ে পড়বে। বাংলাদেশে এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে রয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ভালো অবস্থানে আছে। শিক্ষা খাতে সে উন্নতির প্রতিফলন জরুরি।

১৯৬০ সালের দশকে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো লক্ষ্য স্থির করেছিল যে, কোনো দেশের শিক্ষার জন্য ওই দেশের মোট জাতীয় আয়ের ন্যূনতম ৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে। বাংলাদেশ এই ন্যূনতম বরাদ্দ থেকে আজো অনেক অনেক দূরে। আমরা কবে সেই সামর্থ্য অর্জন করব?

২০১৬ সালে শিক্ষায় আমাদের মোট জাতীয় উৎপাদনের দুই শতাংশের অনেক কম খরচ করা হয়েছিল। ২০১৩ সালেও সেটা প্রায় দুই শতাংশ ছিল। ২০০৬ সালে খরচ করা হয়েছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর আমরা একজন নারীকে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে পেয়েছি। যিনি এর আগে সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনেও ছিলেন সফল। শিক্ষিকা মায়ের কন্যা নারী শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নিশ্চয়ই নতুন করে ভাববেন বর্তমানের বেহাল দশা নিরসনে।

ইতোমধ্যেই তিনি বলেছেন, শিক্ষা খাতে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা তিনি মোকাবেলা করবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূত অতিরিক্ত ফি নেয়া হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। বছরের প্রথমদিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়াসহ শিশুদের স্কুলমুখী করা এবং ঝরেপড়া রোধে শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কাজ করবেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেনেবুঝেই তার ওপর দিয়েছেন এ গুরুভার। যা সফল হলে মানবিক ও দক্ষ জনসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠবে আগামী প্রজন্ম। আমরা শিক্ষা খাতে নৈরাজ্য আর দেখতে চাই না।

কাজী নুসরাত শরমীন : শিক্ষক, সাংবাদিক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App