×

জাতীয়

রামগঞ্জে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:১৬ পিএম

রামগঞ্জে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়

ইট ভাটা

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ২৩ টি ইট ভাটায় পরিবেশের আইন অমান্য করে ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ধানগাছ সহ ফসলি জমির মাটি কেটে ভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। এতে মাটির উর্বরা শক্তি কমে ফসল উৎপাদন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে জমির মাটি আনার নেয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রলির দানবীয় চাকায় পিষ্ট হচ্ছে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তাঘাট। সরকারী আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রকার সুবিধা দিয়ে ইটভাটা মালিকগণ তাদের এহেন কর্মকান্ড দীর্ঘদিন থেকে চালিয়ে আসলেও এ যেন দেখার কেউই নেই। এতে একদিকে যেমন ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের অন্যদিকে দীর্ঘসময় থেকে সংস্কার না হওয়া উপজেলার রাস্তাঘাটগুলো পিষ্ট হচ্ছে ভারী যানবাহনের চাকায়। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থারও চরম ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব ইটভাটাগুলো। সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ২৩ টি ইটভাটা। ফলে আশপাশের জমি থেকে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে উর্বর মাটি। একই সংঙ্গে ভাটাগুলোর জ্বালানী হিসাবে কয়লার পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ। এতে করে বনজ সম্পদও উজাড় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। জানা যায়, রামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম শোশালিয়া,হানুবাইশ,নোয়াগাঁও,কাটাখালি,হাজিরপাড়া,কাঞ্চনপুর, পানিয়ালা, মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ রোড, ভোলাকোট, চন্ডিপুর, লামচর, ভাদুর ও দরবেশপুর,কচুয়া,আলীপুর ইউনিয়নের আবাদি জমির ওপরের অংশ এক থেকে দুই ফুট গর্ত করে কাটা হয়েছে। কোথাও কোথাও কোমর সমান গর্ত করে মাটি তুলে নেয়া হচ্ছে ইটভাটার জন্য। রামগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে রোপন করা ধানী জমির ধানগাছসহ মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। মাটি কাটার কাজ দ্রæত করার জন্য রামগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় দানবীয় চাকার বুলডোজার ব্যবহার করা হচ্ছে কোথাও কোথাও। আর এসব মাটি অবৈধ ট্রাক্টর ও ট্রাকে,ট্রলিতে বোঝাই করে ইট ভাটায় নেয়া হচ্ছে। এতে অন্য জমিসহ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। একটি সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ২৩টি ইট ভাটায় প্রায় ৫শ থেকে ৫৫০ ট্রলি মাটি প্রয়োজন হয় এসব ইট ভাটায়। আর এই চাহিদা মেটাতেই আঙ্গারপাড়া গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী মোঃ মোশারফ ও ভাদুর গ্রামের মোঃ রিপনের নেতৃত্বে উপজেলাব্যাপী ট্রলি গাড়ীতে ফসলি জমির টপ সয়েল এবং সরকারী খালের পাড়ের মাটি কেটে ইটভাটাতে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীন সড়ক ব্যবহার করে কোন ভারী যানবাহন দিয়ে ইট বা ইটভাটার কাঁচামাল আনা নেয়া নিষিদ্ধ থাকলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষ তা বন্ধ করছেন না আর্থিক সুবিধা পেয়ে। ইটভাটাগুলোতে কাঠের পরিবর্তে কয়লা ব্যবহারের কথা থাকলেও কোন ভাটা মালিকই তার তোয়াক্কা করছেন না। মোঃ মাজেদ হোসেন নামের এক পরিবেশবিদ জানান, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী মজা পুকুর, খাল-বিল, নদ-নদী, চরাঞ্চল, পতিত ও আবাদী জমি থেকে মাটি কাটা নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছে না কেউই। সূত্রে মতে জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ২৩ টি ইটভাটার অর্ধেকেরই অনুমতি নেই স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের। তারপরও এসব ইটভাটা মালিকগন কিভাবে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন অনেকেই। ডাক্তার নামজুল হক জানান, শুধু ফসলি জমির মাটি নিয়ে জমির উর্বরতা হ্রাস করা হচ্ছে তা নয়। লোকালয় ও জনবসতির আশেপাশে ইটভাটা নির্মানের ফলে মানুষের শ্বাসকষ্টসহ মারাত্মক ঝুকিতে রয়েছেন ইটভাটা এলাকার লোকজনের। কলেজ শিক্ষার্থী আহম্মেদ নুর স্বপন জানান, বিগত কয়েকবছর অত্র উপজেলার রাস্তাঘাটগুলো সংস্কার না করার কারনে এমনিতেই ঝরাঝির্ন অবস্থায় রয়েছে সড়কগুলো। তার উপর ট্রলির দানবীয় চাকায় পিষ্ট হচ্ছে জরাঝির্ন হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে রাস্তাঘাটগুলো। বৃষ্টি হলে প্রতিদিনই দূর্ঘটনায় পড়ে জীবনহানীরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। রামগঞ্জ উপজেলার মাটি ব্যবসায়ী মোশাররফ ও রিপন জানান, গত চার ও পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন কারণে জমি বেচা-কেনা কমে গেছে। ইট ভাটা ও নিচু জায়গা ভরাটে মাটির চাহিদা বেশি থাকায় তারা মাটি বিক্রির দিকে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। কারণ জমির চেয়ে মাটির দাম বেশি। তাছাড়া কৃষকরা জমির মাটি না বেচলে জোর করে মাটি নিতে পারতাম না আমরা। বর্তমানে জমি না বিক্রি করে মাটি বিক্রি করলে তাদের অভাব দূর হয়ে জমির জায়গায় জমি থেকে দুই ধরনের লাভ হয়। উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ইটভাটা মালিক সানাউল্যা মিয়াকে সরেজমিনে তদন্ত করে মোবাইলে কল দিলে তিনি এ প্রতিবেদককে কোন তথ্য না দিলেও জানান, আমরা যথাযথ নিয়ম মেনে ইটভাটা নির্মান করেছি পারলে কিছু করেন। রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রেজাউল করিম বলেন, সরকারী আইন অনুযায়ী ইট ভাটায় ফসলি জমির মাটি ব্যবহার করা যায় না। বেশ কয়েকবার ইটভাটা মালিকদের এ বিষয়ে সর্তক করে দেয়া হয়েছে। তারপরও যদি কোথাও তা হয়ে থাকে সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রামগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ তানভির আহম্মেদ সরকার বলেন, কৃষকদের মাটি বিক্রি না করার বিষয়ে সচেতন করার পরও তারা কথা শুনছেন না। একবার মাটি কাটা জমিতে আগের মতো উর্বরা শক্তি ফিরে আসতে কমপক্ষে ১০-১৫ বছর সময় লাগে। আর এভাবে মাটি বিক্রি অব্যাহত থাকলে এক সময় ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। খাদ্য শস্যের ঘাটতি দেখা দিবে কোন এক সময়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App