×

জাতীয়

মাগুরার পলি ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে মৃত্যু পথযাত্রী এক নারী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৫৯ পিএম

মাগুরার পলি ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে মৃত্যু পথযাত্রী এক নারী

অভিযুক্ত পলি ক্লিনিকের মালিক ডা. মুক্তাদির রহমান

মাগুরা সদর হাসপাতাল থেকে সম্প্রতি অবসরে যাওয়া আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরএমও ডা. মুক্তাদির রহমানের মালিকানাধীন পলি ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে মৃত্যু পথযাত্রী এক নারী । গত ১৪ জানুয়ারি নিজে উপস্থিত না থেকে নার্সদের দিয়ে তার মালিকানাধীন পলি ক্লিনিকে মাগুরা সদরের আবালপুর গ্রামের অব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী তনু বেগম (৩৮) এর জরায়ু টিউমার অপারেশন করাতে যান। নার্সরা ওই নারীর পেট কেটে জরায়ু ও টিউমারে অতিরিক্ত চর্বি দেখতে পেয়ে ভয়ে ডাক্তার মুক্তাদিকে ফোন করন। মুক্তাদির গিয়ে রোগির অবস্থা খরাপ দেখে পেটে শেলাই দিয়ে দ্রুত ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে রেফার করেন। ডায়াবেটিক হাসাপাতাল হয়ে বর্তমানে ওই নারী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পান্জা লড়ছেন। ওই রোগির স্বামী আব্দুর রাজ্জাকের অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে শনিবার দুপুরে স্থানীয় এক সাংবাদিক অতি বিনয়ের সাথে তার বক্তব্য জানতে চাইলে ডাক্তার মুক্তাদির দেশের সাংবাদিক ও সংবাদপত্র সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করেন। আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, তিনি ১৪ জানুয়ারি তার স্ত্রীর জরায়ুর সমস্যা নিয়ে ডাক্তার মুক্তাদুর রহমানের কাছে পরামর্শ নিতে আসেন। ডাক্তার মুক্তাদির বলেন, কোন সমস্যা নেই গাইনী বিশেষজ্ঞ ও সার্জন দিয়ে কালই অপরেশ করে সুস্থ্য করে দেব। পরদিন তার পলি ক্লিনিকে নিজে উপস্থিত না থেকে ওটিতে পাঠিয়ে নার্সদের দিয়ে তার স্ত্রীর পেট কেটে জরায়ুর টিউমার অপারেশনের চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগির জরায়ু ও টিউমারে অতিরিক্ত চর্বি থাকায় নার্সরা ঘাবড়ে গিয়ে ডাক্তার মুক্তাদুরকে ফোন দেন। তিনি মিনিট ১৫ পরে এসে রোগির অবস্থা খারাপ দেখে নার্সদের পেট সেলাই দিতে বলেন। ওটি থেকে বেরিয়ে ডা.মুকাতাদির বলেন, রোগির অবস্থা ভাল না। দ্রুত ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে নিয়ে যান বলে, তিনি ক্লিনিক ত্যাগ করে। বাধ্য হয়ে আব্দুর রাজ্জাক তার স্ত্রীকে ফরিদপুর ডায়াবেটিক হ্সাপাতালে নিয়ে গেলে তারা সেখানে থেকে ফিরিয়ে দেন। পরে স্ত্রীকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে আশংকাজনক অবস্থায় সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তিনি এর উপর্যুক্ত বিচার চান। মাগুরা শহরের খান পাড়ার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের জেলা যুগ্ম সম্পাদক ঠিকাদার সেলিম খান অভিযোগ করেন, অতি সম্প্রতি ডা. মুক্তদির মাগুরা সদর হাসপাতাল থেকে অবসরে গিয়েছেন। তবে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হয়েও তিনি মাগুরা শহরে ক্লিনিক ব্যবসা করে আসছেন। মাগুরা শহরের পলি ক্লিনিকের মালিক মুক্তদির রহমানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ নিজে ও দালালদের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালে রোগী তার ক্লিনিকে নিয়ে অপারেশ করে চলেছেন। সার্জন না হয়েও সাধারণ মেডিকেল অফিসার হিসেবে অপারেশন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত তার হাতে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, সদর হাসপাতালে আরএমও’র দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক সার্টিফিকেট বানিজ্যর অভিযোগ রয়েছে। এক সময়ের ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ডা. মুক্তাদিদের বাবা-চাচা রাজাকার ছিলো। এক বড় ভাই একাত্তর সালে রাজাকার বাহিনীর সদস্য। স্কুল জীবনেই ডা. মুক্তাদির ওই বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিভিন্ন হিন্দু বাড়িতে লুটপাট চালিয়েছেন। তার নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে একাধিকবার বিচার চেয়েছি। কিন্তু কোন ফল পায়নি। বরং দিনে-দিনে ডাক্তার মুক্তাদির আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন। সার্বিক অভিযোগের বিষয়ে ডাক্তার মুক্তাদিরে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের প্রতি তির্যক মন্তব্য করে বলেন, সংবাদপত্রের কোন নিউজই সঠিক নয়। সাংবাদিকদের সম্পর্কে ডিজি সাহেবেরে ধরণা খুবই খারাপ। ডিজি সাহেবের সাথে আমার প্রায়ই কথা হয়। উনি বলেন, সাংবাদিকদের কোন কথা শুনবেন না। সাংবাদিকরা ভালো হলে সরকার কি ডিজিটাল আইন করতো। সাংবাদিকদের সায়েস্তা করতেই সরকার এই আইন করেছে। সরকারেই তো সাংবাদিকদের উপর আস্থা নেই। আপনার দায়িত্ব আপনি পালন করেন। সার্জন না হয়েও শুধু মেডিকেল ফিসার হয়ে কেন অপারেশন করেন ? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অহংকার করে বলছি, ‘আমার মত সার্জন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজেও একজন নেই’। নিউজ করে যা পারেন করেন-গে বলে সাংবাদিকদের অবজ্ঞা করেন এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা মোঃ ছাদুল্লাহ-কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাগুরা স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে স্থানীয় সাংবাদিকদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। তবে কোন চিকিৎসক যদি সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচারণ করেন সেটা দুঃখজনক। তবে, ডিজি স্যারের নাম ব্যাবহার করে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, সেটি উর্ধ্বতন মহলে জানানো হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App