×

বিনোদন

আমদানিনির্ভর ঢাকাই সিনেমা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৫:৩৫ পিএম

আমদানিনির্ভর ঢাকাই সিনেমা!
২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে কলকাতায় নির্মিত ছবি ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ঢাকায় মুক্তি পাওয়ার পরপরই বদলে যায় ঢাকাই সিনেমার চেহারা। উল্লিখিত ছবিটি টালিগঞ্জের ছবি হলেও যৌথ প্রযোজনার সিল লাগিয়ে মুক্তি পায় এ দেশে। যৌথ প্রযোজনার নামে প্রতারণার বিরুদ্ধে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে এফডিসি। যৌথ প্রযোজনায় নিয়মনীতি ফাঁকি দিয়ে ছবি করিয়েদের সাজাও দেয়া হয় চলচ্চিত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে। সেই আন্দোলনের রেশ এখনো ইন্ডাস্ট্রিতে আছে। অব্যাহত আছে যৌথ প্রযোজনার ছবি মুক্তিও। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারতীয় বাংলা ছবির আমদানি। দেশের প্রদর্শক নেতারা মনে করেন, কলকাতার ছবির সঙ্গে জুড়ে থাকাই এখন বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলোর বেঁচে থাকার মূল মন্ত্রণা। ওপারের ছবির সঙ্গে প্রযোজনার মাধ্যমে জুড়ে থাকা অথবা সরাসরি ছবি আমদানি করে সিনেমা হলগুলোতে দর্শক ফেরানো সম্ভব বলে হল মালিকরা মনে করেন। এমন ভাবনা থেকেই ঢাকাই সিনেমা ক্রমশ হয়ে পড়ছে আমদানিনির্ভর। গত পাঁচ বছরে যৌথ প্রযোজনায় দুই ডজনের বেশি ছবি তৈরি হয়েছে। ভারতীয় বাংলা ছবি আসছে বানের জলের মতো। গত মাসে তিনটি ভারতীয় বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে। একসঙ্গে এতগুলো আমদানি ছবির মুক্তি এবারই প্রথম। এর আগে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আমদানি ছবি মুক্তি পেলেও একত্রে এত ছবি মুক্তি পেতে দেখা যায়নি। ডিসেম্বরে ‘ভিলেন’, ‘আমি শুধু তোর হলাম’ এবং ‘গার্লফ্রেন্ড’। ছবিগুলোতে কলকাতার তারকা সোহম, অঙ্কুশ, শ্রাবন্তী প্রমুখ তারকার উপস্থিতি দেখা যায়। নতুন বছরও শুরু হয় আমদানি ছবি মুক্তির মধ্য দিয়ে। জয়া আহসান অভিনীত আলোচিত ছবি ‘বিসর্জন’ মুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু মুক্তির প্রক্রিয়া সারতে সারতে দেরি হয়ে যায়। ছবিটি যে দিন ঢাকায় মুক্তি পায়, একই দিনে কলকাতায় মুক্তি পায় ‘বিসর্জনে’র সিক্যুয়েল ‘বিজয়া’। দেখা যাচ্ছে, ধারাবাহিকভাবে আমদানি ছবিতে প্রেক্ষাগৃহগুলো জমজমাট হয়ে উঠছে। অথচ প্রচারণায় আমদানি ছবির যে হুঙ্কার, সিনেমা হলে তার কোনো ছায়া নেই। দর্শক সমাগমে দেশীয় ছবির চেয়ে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে আমদানি ছবি। নতুন হোক, পুরনো হোক, কোনো আমদানি ছবিই ব্যবসা করতে পারছে না। সিনেমা হলে দর্শক ফিরিয়ে আনার যে প্রত্যয়ে আমদানি ছবির এত রমরমা, সেই আমদানি ছবি প্রদর্শকদের খুশি করতে পারছে না। প্রযোজকের খাতা থেকে নাম ফেলে অনেকেই এখন পরিবেশকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। এই পরিবেশকরা কেউ লাভের মুখ দেখতে পারছেন না। আমদানি ছবি ব্যবসা না করতে পারলেও আমদানির উদ্যোগ বন্ধ নেই। আমদানিতে অনেক জটিলতা থাকার পরও পরিবেশকরা উদ্যম হারাননি। ভারতের শীর্ষ প্রযোজকদের প্রায় সবার ছবিই আনা হচ্ছে এ দেশে। ব্যয়বহুল ছবি থেকে শুরু করে কম বাজেটের ছবি, কোনো ধরনের ছবিই বাদ যাচ্ছে না আমদানি থেকে। কিন্তু ‘বিসর্জন’র মতো প্রশংসিত ছবিও যেমন দর্শকরা সিনেমা হলে গিয়ে দেখতে চাইছেন না, তেমনই ‘ভিলেন’র মতো নাচ-গান-অ্যাকশনের ছবির থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কোনো ছবিই দর্শকদের আগ্রহের কারণ হতে পারছে না। আমদানি ছবির এই মুক্তির জোয়ারে দেশীয় ছবিকে দেখা যাচ্ছে কোণঠাসা চেহারায়। প্রতি সপ্তাহে ভারতীয় বাংলা ছবির পোস্টার-বিলবোর্ডে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। টিভি চ্যানেলগুলোতে থাকছে ওসব ছবির আলোচনা। আমদানি ছবির এই দাপটের অন্যতম কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা চিহ্নিত করেন দেশীয় ছবির নির্মাণ কমে যাওয়াকে। গত বছর রেকর্ড সংখ্যক কম ছবি মুক্তি পেয়েছে। এ বছরও ছবির সংখ্যা কমবে বলে আগাম ধারণা করা যাচ্ছে। ফলে গত বছরের মতো আমদানি ছবির সংখ্যাও এ বছর বাড়বে বৈ কমবে না। এতে আমদানিনির্ভর ঢাকাই সিনেমার চেহারাটি আর লুকানো থাকছে না। দেশীয় ছবির এত আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ায় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। আমদানি ফর্মুলায় শেষ পর্যন্ত ঢাকাই সিনেমার মন্দাদশা কাটবে কিনা তা নিয়েও তাদের সন্দেহ রয়েই গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App