×

জাতীয়

তৃণমূলকে আরো শক্তিশালী করবে আওয়ামী লীগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:০৯ পিএম

তৃণমূলকে আরো শক্তিশালী করবে আওয়ামী লীগ
এবার সংগঠন গোছানোর দিকে নজর দিচ্ছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ। তৃণমূলে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করার উদ্যোগ নিচ্ছে দলটি। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ১৯ জানুয়ারি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্বাচন পরবর্তী বিজয় সমাবেশের পরই এ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করবেন তারা। গত শনিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত এক যৌথসভায় এমন নির্দেশনা দেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা যৌথসভায় অংশ নেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আসায় তৃণমূলে সংগঠন গোছানোর দিকে তেমন নজর দিতে পারেনি আওয়ামী লীগ। তবে বিগত ১০ বছরে দেশের কিছু কিছু জেলা ও উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি হয়েছে। সেগুলোরও মেয়াদ এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে। দলটির দায়িত্বশীল একজন নেতা ভোরের কাগজকে জানান, বর্তমানে তৃণমূলের সব ইউনিটের কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। কারণ দশম সংসদ নির্বাচনের পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর এবং দুয়েকটি জেলা ইউনিট ছাড়া নতুন কমিটি করা হয়নি। মহানগর কমিটি করা হলেও তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই ইউনিটের কমিটির ৩ বছর মেয়াদও শেষ হয়েছে। অথচ থানা ও ওয়ার্ডের কমিটিগুলো এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এ নিয়ে বিব্রত দলের হাইকমান্ডও। জানা গেছে, দল ও সরকারকে আলাদা করেই রাখতে চান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তারই অংশ হিসেবে নবগঠিত মন্ত্রিসভায় দলের কেন্দ্রীয় বেশিরভাগ নেতার ঠাঁই হয়নি। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সভাপতিমণ্ডলীর ১৫ সদস্যের মধ্যে শুধুমাত্র ড. আবদুর রাজ্জাক মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন। ৪ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে ডা. দীপু মনি, ৮ সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এ কে এম এনামুল হক শামীম ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, কার্যনির্বাহী সংসদের দুই সদস্য নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ও মুন্নুজান সুফিয়ান ঠাঁই পেয়েছেন মন্ত্রিসভায়। এবার মন্ত্রিসভায় যাদের ঠাঁই হয়েছে তাদের বেশিরভাগই নতুন মুখ। এ তালিকায় তৃণমূল থেকে উঠে আসা সাংসদদের সংখ্যাই বেশি। উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সদস্যকেও এবার মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতা ও সিনিয়রদের সংগঠনের কাজে সক্রিয় করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শেখ হাসিনা এমনটিই বলছেন নেতারা। আর এটি দলীয় প্রধানের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। যার বাস্তবায়ন শুরু করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে বলেন, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে তৃণমূলে সংগঠন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে- এটা ঠিক। তবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কখনোই থেমে থাকেনি। দল ও দেশের যে কোনো প্রয়োজনে এ দলের নেতাকর্মীরা জেগে উঠেছে। অনেকদিন ধরে সব ইউনিটে সম্মেলনও হয়নি। ফলে তৃণমূলে নতুন নেতৃত্ব তেমন একটা তৈরি হয়নি। এ জন্য যৌথসভায় আমাদের নেত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রত্যেকটি মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ইউনিট যেন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়, সে জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের করণীয় ঠিক করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। মেয়াদউত্তীর্ণ সব ইউনিটে সম্মেলন করা হবে। সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে যারা ত্যাগী ও পরিশ্রমী তাদের কমিটিতে আনা হবে। তবে প্রবীণদের বাদ দিয়ে নয়। সেইসঙ্গে প্রতিটি ইউনিটে যেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়, সে বিষয়েও এবার গুরুত্ব দেয়া হবে। মোট কথা আমরা সংগঠনকে একেবারেই ঢেলে সাজাতে চাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, আগামী অক্টোবরে আওয়ামী লীগের ২১তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে। সেই সম্মেলনও বড় ধরনের চমক থাকবে। বতর্মান কমিটিতে যারা আছেন, বিগত আড়াই বছরে প্রত্যেকের কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক দক্ষতা পর্যালোচনা করেছেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে যাদের পারফরমেন্স ভালো, তাদের নানাভাবে মূল্যায়ন করবেন। তবে আগামী কমিটিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের বেশিরভাগই ঠাঁই পেতে পারেন। যারা তরুণ, পরীক্ষিত, দলের ও নেত্রীর প্রতি কমিটেড, বিভিন্ন সময়ে জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং পরিচ্ছন্ন ইমেজ ও মেধাবী তাদের মধ্য থেকে অনেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাবেন। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনকি সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ভোরের কাগজকে বলেন, নেত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধাপে ধাপে আমরা সব ইউনিটেই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। মার্চে যেহেতু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরপরই আমরা কমিটি গঠনের কাজে হাত দেব। সংগঠনকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হবে। বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর সম্মেলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, আমাদের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রলীগের সম্মেলন গত বছর হয়েছে। যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও তাঁতী লীগের মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। এর বাইরে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। চলতি বছরেই মেয়াদোত্তীর্ণ এসব কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রতিটি ইউনিটেই এসব সংগঠনের নতুন কমিটি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ যত বেশি শক্তিশালী হবে, ঐক্যবদ্ধভাবে যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র আমরা মোকাবেলা করতে পারব। আগামীতে কোনো অপশক্তিই এ দেশে আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পাবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App