×

মুক্তচিন্তা

শিম উৎপাদনে প্রযুক্তির ব্যবহার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:২৪ পিএম

পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলে শিম চাষ হয়। শিমের প্রধান ক্ষতিকারক পোকা হচ্ছে জাব পোকা। এই পোকাটিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সারা পৃথিবীতেই টনে টনে কীটনাশক ব্যবহৃত হয়ে থাকে; যা পরিবেশ এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক এবং হুমকিজনক।

জাব পোকা হচ্ছে এক ধরনের ক্ষুদ্র, সবুজ এবং কালো রংয়ের পোকা। এরা লতাপাতার উপরিভাগে দলে দলে বসবাস করে এবং রস খেয়ে শিম গাছের ক্ষতিসাধন করে থাকে। এ কারণে গাছের বৃদ্ধি খুব ধীরে হয়। জাব পোকা শীত ও বর্ষাকালের চেয়ে অন্যান্য ঋতুতে বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। এরা রোগাক্রান্ত গাছ থেকে স্বাস্থ্যবান গাছে ভাইরাস সংক্রমণ করতে পারে।

জাব পোকা দেখামাত্র আঙুল দিয়ে চেপে মেরে ফেলতে হবে। ফসলের সারির মাঝ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে আক্রান্ত সব গাছের জাব পোকা হাত দিয়ে মেরে ফেলতে হবে। বেশিরভাগ জাব পোকা উড়তে পারে না, তাই তারা যে জায়গায় বাস করে, সেখানেই সহজেই সেগুলোকে মেরে ফেলা যাবে।

জাব পোকার আক্রমণ মারাত্মক হলে হোমিও ড্রামের ৫ মিলিলিটার কেরোসিনের সঙ্গে ১ কেজি ঠা-া, শুকনা ছাই মিশিয়ে খুব সকালে তা জাব পোকা আক্রান্ত গাছের ওপর ছিটিয়ে দিতে হবে। সকালে যখন গাছের পাতার উপরে শিশির থাকবে, তখন সেই ছাই ছিটিয়ে দিতে হবে।

পাতার উপরের শিশিরের সঙ্গে সেই ছাই লেগে থাকবে। ছাই পাতার ওপর আবরণ তৈরি করে, ফলে জাব পোকা পাতা থেকে রস চুষে খেতে পারে না। কেরোসিন ছাইকে অম্লীয় রাখে, ফলে তা সহজেই জাব পোকাকে মেরে ফেলে। কৃষকরা অনেক সময় জাব পোকা ধ্বংস করার জন্য ছাই ও কেরোসিন এক সঙ্গে ব্যবহার করেন? এখন আমরা দেখি, কৃষকরা কীভাবে এই ছাই ও কেরোসিনের মিশ্রণটি ব্যবহার করেন।

খুব সকালে ছাই ছিটিয়ে দিলে শিশিরের কারণে সেই ছাই পাতার উপরিভাগে লেগে থাকে। ছাই থাকার কারণে পাতার ওপর একটি আবরণ তৈরি হয়, ফলে জাব পোকা গাছ থেকে আর রস চুষে খেতে পারে না। গাছের পাতা, বাঁশের পাতা এবং সরিষা গাছ ও পাতার ছাই শাক-সবজির গাছের জন্য অম্লীয় হতে পারে; আর তাই শাক-সবজিতে পাতার ছাই ব্যবহার করা যাবে না। কাঠের ছাই বা ধানের খড়ের ছাই বা ধানের তুষের ছাই ব্যবহার করা যায়, কারণ এতে গাছের কোনো ক্ষতি হবে না।

জাব পোকা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাবানও ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি কাপড় কাচার সাবান নিয়ে বুদবুদ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এক বালতি জলে সাবান মেশাতে হবে। এই সাবান জল অম্লীয়। দিনে ১ বার করে যদি তিন দিন ধরে এটি প্রয়োগ করা যায়, তাহলে তা জাব পোকা ধ্বংস করতে সাহায্য করবে। শাক-সবজির জাব পোকা ধ্বংস করতে কৃষকরা নিমের মিশ্রণও ব্যবহার করে থাকেন। ২ কেজি নিম পাতা গুঁড়া করে তার সঙ্গে ৬ লিটার জল মেশাতে হবে। মিশ্রণটি ছেঁকে নিতে হবে, যাতে তা স্প্রে করা যায়।

নিমের স্বাদ তিতা এবং এটি অম্লীয় হওয়ায় সহজেই জাব পোকা ধ্বংস করতে সক্ষম। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, গোমূত্রও জাব পোকা ধ্বংস করতে পারে। ৪ ভাগ জল আর ১ ভাগ গোমূত্র মিশিয়ে ১৫ দিন ধরে গাজন দেয়া হয়। তাজা গোমূত্রের চেয়ে গাজন দেয়া গোমূত্র বেশি কার্যকর। জাব পোকা ধ্বংস করার জন্য দিনে ১ বার করে তিন দিন ধরে স্প্রে করতে হবে।

ড্রাগন ফ্লাইয়ের মতো লেডি বার্ড বিটলও জাব পোকা খায় এবং ধ্বংস করে। লেডি বার্ড বিটল গোল, কালো এবং লাল হয়ে থাকে। যখন এরা কমবয়সী থাকে, তখন এগুলোকে ছোট কুমিরের মতো দেখায়। কমবয়সী লেডি বার্ড বিটলও জাব পোকা খায়। লেডি বার্ড গুবরে পোকা বা ঢ্যালা পোকার দেহ লাল, সেই সঙ্গে কালো কালো ছিটযুক্ত হয়ে থাকে। এগুলো জাব পোকার বসবাসের জায়গায় ঘোরাফেরা করে। এগুলো জাব পোকা খায়।

লেডি বার্ড বিটল ফুলের মিষ্টি পরাগ রেণু খেতেও পছন্দ করে। এ কারণে লেডি বার্ড বিটলকে আকর্ষণ করার জন্য মূল ফসলের চারপাশে এক সারি তিল বা সরিষা লাগানো যেতে পারে, যাতে সেগুলো ফসলের কাছে এসে জাব পোকা খেতে পারে। মূল ফসল লাগানোর ৭ দিন পর সরিষা গাছ লাগাতে হবে। এভাবে ফুল বেশি দিন টিকবে। ফসল রক্ষা করার জন্য সরিষা গাছ নির্দিষ্ট সময়েই ফুল দেবে। জাব পোকা ধ্বংস করে ক্ষেত থেকে ভালো ফসল পেতে হলে এসব বিষয় মেনে চলতে হবে।

সমীরণ বিশ্বাস : কো-অর্ডিনেটর, কৃষি ও বীজ কর্মসূচি, সিসিডিবি, ঢাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App