×

মুক্তচিন্তা

প্রধানমন্ত্রীর কৌশল ও দূরদর্শিতার কাছে বিরোধীরা নস্যি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:২৮ পিএম

বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে রেখে সুকৌশলে ড. কামালের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছিল। এখন জামায়াত সম্পর্কে ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামালের অবস্থানে আত্মরক্ষার শেষ খড়কুটোটাও স্রোতে ভেসে যাওয়ার উপক্রম। তবুও দলটি যতটুকু সচল থাকতে পারত, তারেক রহমানের মনোনয়ন বাণিজ্য সেই সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিয়েছে। সুদীর্ঘ বছর বিভক্ত ছত্রখান ও অচল থাকার পর যদি মনোনয়ন বাণিজ্যের জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলীয় অফিস আক্রমণ করে, তবে আর দলের থাকেটা কী!

নতুন বছরের শুরুতে মূলত নতুনদের নিয়ে গঠিত হয়েছে মন্ত্রিসভা। ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে নির্বাচনের পর অন্যান্য ছোট ছোট দল নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পঁচাত্তরের পর এই প্রথম সংসদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠাতা নিয়ে একক দল আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে। বিগত পাঁচ বছর জাতীয় পার্টি না ঘরকা না ঘাটকা অর্থাৎ সরকারেও ছিল বিরোধী দলেও ছিল। এবারেই প্রথম জাতীয় পার্টি সংসদে প্রধান বিরোধী দল। এদিকে বিএনপি সংসদে যাবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। যদি শেষ পর্যন্ত শপথ নিয়ে সংসদে যায়, তবে এই প্রথম খালেদা জিয়া সংসদে দলটির সঙ্গে থাকবে না এবং সংখ্যার কারণে দলটির অবস্থান হবে ক্ষীণ ও দুর্বল। উল্টোদিকে যদি সংসদে না যায়, তবে এরশাদ আমল ও বিগত পাঁচ বছরের মতো আবারো সংসদে দলটি থাকবে না। বহু বছর পর এবারই সংসদ জামায়াত শূন্য। সংসদে রাজনৈতিক দলগুলোর এই অবস্থা রাজনীতির গতিপথকে বেশ ভালোভাবেই প্রভাবিত করবে বলে ধারণা করা চলে।

তবে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানও রাজনীতিকে কমবেশি প্রভাবিত করবে। গণফোরাম আগে আর কোনো সময়ে সংসদে ছিল না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় দলটি ঐক্যফ্রন্ট বজায় রেখে বিএনপিকে নিয়ে সংসদে যেতে ইচ্ছুক, তবে বিএনপি না গেলেও দলটি যেতে পারে। এই অনিশ্চয়তার সঙ্গে আরো একটি অনিশ্চয়তা আছে। জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব না পেলে সংসদে কোন ধরনের অবস্থান নিবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অনেক কিছু সুস্পষ্ট না হলেও দলগুলোর উল্লিখিত অবস্থা ও অবস্থান পর্যবেক্ষণে এটা সুস্পষ্ট যে, সংসদের ভেতরে তা যেমন তেমনি সংসদের বাইরে সম্পূর্ণ এক নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।

প্রসঙ্গত এটা বোধকরি বিতর্কের ঊর্ধ্বে হবে যে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশবাসীর মনে একটা ভীতি ও শঙ্কা কাজ করছিল। ঘর পোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায় তেমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। কেননা হত্যা-ক্যু-পাল্টা ক্যুর ভেতর দিয়ে চলমান রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির শাসনের অধ্যায় পার হওয়ার পর বিগত নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে সংসদীয় পদ্ধতির দেশ শাসনের যে ধারা শুরু হয়, তাতে একটি ছাড়া আর সব কয়টি নির্বাচনের আগেই অস্থিতিশীলতা অরাজকতা ও অনিশ্চয়তার পরিবেশ ছিল। কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার পর ২০০১ সালের অক্টোবরে নির্বাচনের আগে তেমনটা হয়নি। কিন্তু ১৯৯৬, ২০০৬, ২০০৮, ২০১৪ সালে নির্বাচন সামনে রেখে অস্থিতিশীলতা, অরাজকতা ও অনিশ্চয়তা চরম রূপ নেয়।

এবারে তেমনটা হয়নি। প্রতিবারের মতো এবারো নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ হয়েছে কি না প্রশ্নে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য থাকলেও পূর্বাপর পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে। এটা জনগণের আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশারই প্রতিফলন। জনগণ অভিজ্ঞতা থেকে এখন এটা দৃঢ়ভাবে মনে করে অনিশ্চয়তা, অরাজকতা, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়, সংবিধান ও গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হয় এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ও জনগণের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়ে। উল্টোদিকে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেই কেবল ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে গণতন্ত্র স্বচ্ছ ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে এবং গণতন্ত্র কখনো কোনো দলকে আজীবন ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি সৃষ্টি করে না। তাই গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সব সমস্যার সমাধান চায়। এমনটা চায় বলেই সব দলের অংশগ্রহণ ভেতর দিয়ে যেমন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তেমনি নতুন সরকারও যথা সময়েই কাজ শুরু করে দিয়েছে।

অবস্থাদৃষ্টে বলার অপেক্ষা রাখে না, শুরুটা আওয়ামী লীগ ভালোই করেছে। নতুন মন্ত্রিসভায় বিতর্কিতদের স্থান হয়নি। এবারের ইশতেহারে বলা হয়েছে যে, নতুন প্রজন্মই এই অঙ্গীকারকে ‘অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ সহজেই ধারণা করা যায়, এই বিবেচনায় নতুনদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং অভিজ্ঞতা ও গতির সমন্বয় করতে প্রবীণ ও নবীন মিলিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রীরা সবাই একত্রে বাসে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধুর কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শপথ গ্রহণ করে নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইশতেহার বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞার ঐক্য চিন্তার ঐক্য কাজের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিশাল অবদান রাখার সহায়ক হয়েছে। সর্বোপরি শপথ গ্রহণের পর মন্ত্রিসভার সদস্যরা যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তাও জনগণের মনে আস্থা ও বিশ্বাসকে দৃঢ়তর করেছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কমবেশি সব মন্ত্রীর কথার ভেতর দিয়ে সামনে এসেছে। দেশবাসীর ভাবনা ও সমালোচনা, যাকে বলা যেতে পারে মনের কথা, তার প্রতিফলন ঘটেছে মন্ত্রীদের কথায়। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জমান যখন বলেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সম্পত্তির হিসাব দিতে হবে; আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যখন বলেন সুবিচার সুনিশ্চিত হবে; শিক্ষামন্ত্রী যখন ভর্তিতে চাঁদা প্রদান বা নকলের বিরুদ্ধে কথা বলেন, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক যখন বলেন পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা হবে, গৃহায়নমন্ত্রী যখন রাজউকের অব্যবস্থাপনার কথা বলেন প্রভৃতি; তখন দেশবাসীর মনে দারুণ আশা সঞ্চারিত হয়। যে যায় লঙ্কা সে হয় রাবণ প্রবাদ, যা দেশবাসীর মনের অনেকটা জুড়েই স্থান করে নিয়েছে, তা এবারে সর্বোতভাবে মিথ্যা প্রমাণ হবে বলে দেশবাসী মনে করতে শুরু করেছে।

প্রসঙ্গত বাস্তবতা ও প্রচার যে কারণেই হোক কেন, ব্যাংকিং খাত নিয়ে মানুষ বেশ উদ্বিগ্ন। এই পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে আশা জাগানিয়া কথা বলেছেন, অর্থমন্ত্রী আ ফ ম মুস্তাফা কামাল। তিনি ‘ঋণখেলাপি’ ইস্যুকে ‘একদফা’ হিসেবে সামনে এনে বেসরকারি ব্যাংক মালিক ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেছেন, ‘তারা আমাকে আশ্বস্ত করেন, তাই বলছি, আজকের পর থেকে খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না ইনশাল্লাহ।’ দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞতা বিশেষত ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’-এর ধারাবাহিকতায় ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরত না দেয়াটা যেখানে সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে দেশবাসীকে এতটা আশ্বস্ত করা নিঃসন্দেহে সাহসের পরিচায়ক। দেশবাসী সর্বান্তকরণে চাইবে, এই কথাটা সত্য প্রমাণ হোক। প্রসঙ্গত, ‘ঋণসহ ব্যাংক জালিয়াতি কঠোর হস্তে দমন’ করা এবং খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা’ বিষয়ে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ওয়াদাবদ্ধ। অর্থমন্ত্রী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্য থেকেই যথাযথভাবে ঋণখেলাপি বন্ধ করার জন্য আইনের সংস্কার করতে চাইছেন। অভিজ্ঞতা বিবেচনায় বলা যায়, আইন ও আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া এ বিষয়ে কিছুতেই কিছু হবে না। আশ্বস্ত হওয়া যাচ্ছে যে, তিনি খেলাপিদের নামের তালিকাও সংগ্রহ করছেন। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যদি কঠোরভাবে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবে দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ছাপ পড়বে। পড়ার সম্ভাবনা যে আছে, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান থেকে আরো সুস্পষ্ট। প্রার্থী মনোনয়নে, মন্ত্রিসভা গঠনে তিনি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেই প্রেক্ষাপটে ‘দুর্নীতি যেন প্রতিবন্ধক না হয়’ এবং ‘কঠোর নজরদারিতে রাখব’ বক্তব্যে দেশবাসীর মনে গভীর আস্থা ও বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে।

এই আস্থা ও বিশ্বাস বেড়ে যায়, যখন নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ব ও উপমহাদেশের দেশগুলোর সঙ্গে তুলনামূলক আন্তর্জাতিক মূল্যায়নের ভালো সংবাদপত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিশ্ব ব্যাংকের মতে, বিশে^র সবচেয়ে দ্রুত অগ্রসরমান দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশ হচ্ছে ভারতের পরই দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ১৯১৮-১৯ অর্থবছরে সারা বিশে^ বাংলাদেশসহ মাত্র নয়টি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্য গার্ডিয়ানের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলে দিয়েছে, বর্তমান অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৭.৯। গণতন্ত্র সূচকে (এর মাপকাঠি নির্ধারিত হয় নির্বাচন পদ্ধতি ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারের কার্যকারিতা, মানুষের অংশগ্রহণ, জনগণের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রভৃতি দিয়ে) চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ১৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ৮৮তম, গতবার ছিল ৯২তম। বর্তমান বিশে^র ৪১তম অর্থনীতির দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ এবং ২০২৩ সালে হবে ৩৬তম। কেবল তাই নয়, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সংস্থা দ্য গ্লোবাল ইকোনমিস্ট ফোরাম বলেছে, ২০১৯ সাল বাংলাদেশের সুখের বছর। অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগ বাড়া মনে নতুন কর্মসংস্থান, রপ্তানি বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। সাফল্য মানেই নতুন প্রাপ্তির জন্য সরকার ও জনগণের সম্মিলিত উৎসাহ-উদ্দীপনা। বলাই বাহুল্য এই ইতিবাচক পরিস্থিতি সরকারকে নতুন উদ্যমে ইশতেহার বাস্তবায়নে অনুপ্রেরণা জোগাবে।

এখানে বলতেই হয় যে, পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সামরিক শাসনামলে রাষ্ট্রযন্ত্রের ছত্রছায়া ও মদদে এন্টি আওয়ামী বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী যে ধারা পরিপুষ্ট হয়, যাকে নতুন বোতলে পুরনো মদের মতো বলা যেতে পারে বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভূতের ধারা, সেই ধারা এই প্রথমবারের মতো জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ও নেতৃত্বহীন এবং পরাভূত ও বিধ্বস্ত হয়েছে। বিএনপি পড়েছে শাঁখের করাতের মধ্যে। সংসদে গেলে ভাঙন অনেকটাই অনিবার্য আর সংসদে না গেলে বিগত সময়ের মতো সংসদের বাইরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে উল্টোপাল্টা নানা কথা বলা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। বিএনপির সামনে এখন কেবলই অন্ধকার, আলোর শেষ রেখাটিও তিরোহিত।

বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে রেখে সুকৌশলে ড. কামালের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছিল। এখন জামায়াত সম্পর্কে ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামালের অবস্থানে আত্মরক্ষার শেষ খড়কুটোটাও ¯্রােতে ভেসে যাওয়ার উপক্রম। তবুও দলটি যতটুকু সচল থাকতে পারত, তারেক রহমানের মনোনয়ন বাণিজ্য সেই সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিয়েছে। সুদীর্ঘ বছর বিভক্ত ছত্রখান ও অচল থাকার পর যদি মনোনয়ন বাণিজ্যের জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলীয় অফিস আক্রমণ করে, তবে আর দলের থাকেটা কী! বর্তমান বিএনপির পতিত দশার উৎস হলো নৈতিক শক্তি হারানো। আগে অর্থ আত্মসাৎ-লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচার, হত্যা-খুনসহ হাওয়া ভবনের অপকর্ম-দুষ্কর্ম আর সেই সঙ্গে বর্তমানে একদিকে জামায়াত আর অন্যদিকে ড. কামালকে রেখে দিকনির্দেশহীন জগাখিচুরি মার্কা রাজনৈতিক ঐক্য প্রভৃতির ফলে বিএনপির নেতাকর্মীদের নৈতিক শক্তি সম্পূর্ণ রূপে তছনছ ও বরবাদ হয়ে গেছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, নির্বাচনের পর বিএনপি এখন আর রাজনৈতিক শক্তি নয়, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বিএনপিই এখন বিএনপির শত্রু। এদিকে জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার দিন গুনছে। জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদে অবস্থান নিলেও এই দলের ওপরে সচেতন মানুষের বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। অসুস্থ ও বয়সের ভারে আক্রান্ত এরশাদের পর এই দলের কি হবে তা ঠিক নেই। এদিকে এবারে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের পক্ষের বামশক্তি মন্ত্রিত্ব না পেয়ে নিঃসন্দেহে রয়েছে সমস্যার মধ্যে। আর আওয়ামী লীগ বিরোধী বামশক্তি কার্যকলাপের ভেতর দিয়ে রাজনৈতিকভাবে বিএনপির সঙ্গে বন্ধনীযুক্ত হয়ে আছে। ইসলামী দলগুলো নির্বাচনের ভেতর দিয়ে তাদের অন্তঃসারশূন্যতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। হেফাজত রাজনৈতিক দল না হলেও নিঃসন্দেহে একটা সামাজিক শক্তি। নির্বাচনের পর নিজেদের অবস্থান জানান দিতে গিয়ে নারী শিক্ষা নিয়ে কথা বলে পড়েছে গণনিন্দার মধ্যে। গাছেরটাও খাবে, তলারটাও কুড়াবে- এই মধ্যযুগীয় নীতি কৌশল চালু রেখে এই শক্তি নিঃসন্দেহে সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

সার্বিক বিচারে রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ এখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নীতি-কৌশল, সাহস-একাগ্রতা, প্রত্যুৎপন্নতা-দূরদর্শিতার ফলে বিরোধী সব রাজনৈতিক দল শক্তি মহল এবং এমনকি নিরপেক্ষ দাবিদার সুশীলরাও কোণঠাসা ও বিচ্ছিন্ন। বিরোধী সবাই হয়ে গেছে নস্যি! পিতা শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় এবং বিরোধীদের করেছিলেন গণবিচ্ছিন্ন।

প্রায় অর্ধ শতক পর কন্যা শেখ হাসিনা উন্নয়ন ও দুঃখী মানুষের হাসি ফোটানোর সংগ্রামের ভেতর দিয়ে একই অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। সরকার যদি নীতিতে সুদৃঢ় ও কৌশলে নমনীয় থেকে বিশেষ ভুল না করে, ক্ষমতা ও বিদেশ নীতিতে যদি ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে, ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকে যদি অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে পারে, সাংগঠনিকভাবে নিচে ওপরে ঐক্যবদ্ধ ও সচল থাকতে পারে, শ্রেণি-পেশার দাবিদাওয়া ও আন্দোলনকে যদি যথাসময়ে সামাল দিতে পারে, সর্বোপরি আগামী ৫ বছর যদি ইশতেহার বাস্তবায়নে লক্ষ্যাভিমুখী অগ্রসর হতে পারে; তবে দেশ আর সেই সঙ্গে দলকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। জাতি মানচিত্র পেয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, এবারে মানচিত্রের ওপরে বুক উঁচিয়ে গর্বভরে দাঁড়ানোর সংগ্রামেও আওয়ামী লীগই নেতৃত্ব দিবে।

শেখর দত্ত : রাজনীতিক ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App