×

মুক্তচিন্তা

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অঙ্গীকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৩ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপরে প্রান্তিক মানুষ বিশেষ করে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। যদিও দেশের কোনো কোনো স্থানে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করা হয়েছে! ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের একটি বাড়িতে ও ফরিদপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কিন্তু বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এ দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা হয়েছে। স্বাধীনতার পর সত্তর-আশির দশকের বিভিন্ন নির্বাচনেও এ দেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ১৯৯০ সালে সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের সময়ও সংখ্যালঘুরা আক্রমণের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া ২০০১-এর নির্বাচন পরবর্তী ব্যাপক সহিংসতার শিকার হয় এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।

সে সময় সিরাজগঞ্জ, ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়! দুঃখের বিষয়, এসব ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি হয়েছে বলে শোনা যায়নি। ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার খবর আবারো পত্রিকার শিরোনাম হয়। শুধু নির্বাচনকে ঘিরে নয়, বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন সময় নির্যাতনের খড়গ নেমে এসেছে। ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামু, ২০১৩ সালে পাবনার সাঁথিয়ায়, ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরাবাদসহ অনেক স্থানে বিভিন্ন সময় এমন ঘটনা ঘটেছে।

কোনো কোনো সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আবার কোনো সময় জমিজমা দখল করতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা হয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৭৪ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক ছিল শতকরা প্রায় ১৪ ভাগ। পরে ১৯৮১ সালে তা এসে দাঁড়ায় প্রায় ১২ ভাগ। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ১০ ভাগ, সর্বশেষ ২০১১ সালের গণনা অনুযায়ী তা এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ ভাগে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়া। স্বাধীনতার ৪৮ বছরে এসেও সে লক্ষ্য কতটা পূরণ হয়েছে সেটা বিরাট প্রশ্নের বিষয়! বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে অনেকে সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকাকালীনও নির্যাতনকারীরা নিস্তার পেয়ে যাচ্ছে! বিচারহীনতার সংস্কৃতি নির্যাতনকারীদের আরো উসকে দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনে বহু মামলা হয়েছে। কিছু মামলার রায়ও হয়েছে, কিন্তু সংখ্যালঘুরা কেউ এখনো তাদের জমিজমা ফেরত পাননি। বাস্তবতা হলো, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নানাভাবে অত্যাচারিত, নিষ্পেশিত ও নির্যাতিত হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে অপরাধীরা চিহ্নিত হয়নি আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিহ্নিত হলেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন। আবার অনেক সময় ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানির ছবি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পোড়ানোসহ নির্যাতনের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।

এভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা একের পর এক ঘটতে থাকলে সেটা হবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য ব্যর্থতা! পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর ০.৫ শতাংশ হারে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে! বাংলাদেশের সংবিধানেও ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-মতাদর্শ নির্বিশেষে সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। তবে যাই হোক, সময় এসেছে ইশতেহার অনুযায়ী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেব না- সব রাজনৈতিক দলকে এমন অঙ্গীকার করতে হবে।

সাধন সরকার : সাবেক শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App