×

অর্থনীতি

দুই বছরেই একক অঙ্কে খেলাপি ঋণের হার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:১৪ পিএম

দুই বছরেই একক অঙ্কে খেলাপি ঋণের হার
দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি বঙ্গে/এইখানে কিছুক্ষণ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বড় ছবিতে লেখা এ পঙ্ক্তিটি দেখা যাবে অগ্রণী ব্যাংকের ৬ষ্ঠ তলায় বঙ্গবন্ধু কর্নারে। ব্যাংকের বোর্ডরুম, চেয়ারম্যান ও এমডির ফ্লোরে এই ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ১১৭ কেজি ওজনের আবক্ষ ভাস্কর্য?। রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা প্রায় ৪০০ বই। বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত টাকা। বঙ্গবন্ধুর একটি বড় ছবি। বঙ্গবন্ধু কর্নারের প্রতিষ্ঠাতা অগ্রণী ব্যাংকের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু কর্নার প্রতিষ্ঠার ভাবনা থেকে এর আদ্যোপান্ত। পাশাপাশি ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি ও আগামীর চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ভোরের কাগজের সঙ্গে। ব্যাংক সম্পর্কে বলেন, এখন আর আগের মতো অবস্থা নেই, অগ্রণী ব্যাংকে শতভাগ পরিশুদ্ধতা এসেছে। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, অগ্রণী ব্যাংক অগ্রে থাকবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটানোর চেষ্টায় আছি। বিস্তারিত- অগ্রণী ব্যাংকের ৬ষ্ঠ তলায় উঠলেই চোখে পরে বঙ্গবন্ধু কর্নার। এই কর্নার নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছেন ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম। বঙ্গবন্ধু কর্নার সৃষ্টি সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানালেন, জাতির পিতাকে ভালোবেসে এই কর্নারটি তৈরি করেছেন মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম। প্রতিদিন কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো যায় সেই ভাবনা থেকেই বঙ্গবন্ধু কর্নারের ধারণা। তিনি বলেন, সাত বছর আমি দেশের বাইরে ব্যাংকিং করেছি। ক্যারিয়ারের ১৬ বছর চট্টগ্রামে কাটিয়েছি। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি আমি জিএম পদোন্নতি পেয়ে প্রধান কার্যালয়ে আসি। সে সময় আমাকে হেড অব আইডি করা হয়। একই সঙ্গে সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। জিএম পদটি দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে একটি সম্মানজনক পদ হিসেবেই স্বীকৃত। সিলেট যাওয়ার পর আমার মনে হলো, দেশ স্বাধীন না হলে আমি জিএম হতে পারতাম না। হয়ত হাবিব ব্যাংকের এসপিও পর্যন্ত যেতে পারতাম। যার জন্য দেশটি স্বাধীন হলো, আমি জিএম হতে পারলাম, সেই বঙ্গবন্ধুর সম্মানে কিছু করার ইচ্ছে হলো। আর এ পরিপ্রেক্ষিতেই ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’-এর ধারণা মাথায় আসে। তার একান্ত এ ধারণাকে সরকারের কাছে ইতোমধ্যে গ্রহণযোগ্য করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এখন সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই কর্নার স্থাপন করা হচ্ছে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এটি স্থাপন করছে। ইতোমধ্যে সারা দেশে প্রায় দুই হাজার বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাস ও বিভিন্ন মিশনে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপনের প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি। শামস-উল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন নিয়ে ব্যাংকের ভেতরে নানা সমালোচনা ছিল। সেসব উপেক্ষা করে তিনি এটা করেছেন। ইতোমধ্যে রাজশাহীতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে এক হাজার ৯৮০টি বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও বেশ কয়েকটি বঙ্গবন্ধু কর্নার তৈরি করা হয়েছে। সর্বশেষ গভর্নর ফজলে কবিরের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রায় একই আদলে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এ রকম উদ্যোগ নিচ্ছে। তিনি বলেন, অনেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক সংগঠন করে। আমি তাদের সঙ্গে দেখা হলে বলি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আগে বই পড়। বঙ্গবন্ধু যে কত বিশাল সেটা সম্পর্কে জানো। তাদের বলি বঙ্গবন্ধু কত বিশাল ওনাকে আবিষ্কার না করতে পারলে তুমি তো ফলোয়ার হতে পারবে না। আজ হয়ত কেউ এখানে এলো কোনো কাজে, এসে বঙ্গবন্ধু কর্নারে রাখা বই নিয়ে জাতির জনক সম্পর্কে কিছু জানাল, সেটাই আমার সার্থকতা। নতুন বছর, নতুন সরকার, নতুন চ্যালেঞ্জ। নতুন বছরে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অগ্রণী ব্যাংক কী ভূমিকা পালন করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে নতুন বছরে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দেশে শিল্পায়নের জন্য ব্যাংকে ঋণ ও আমানতে সুদের হার ৯ ও ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, সরকারি ব্যাংক এটি শতভাগ বাস্তবায়ন করলেও বেসরকারি ব্যাংক সেভাবে কার্যকর করেনি। এটি সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকে সমানভাবে কার্যকর করতে হবে। তা না হলে ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। দেশের স্বার্থে ঘোষিত সুদের এ হার সবাইকে কার্যকর করতে হবে। সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যাংকের অর্থায়ন অব্যাহত রাখতে হবে। এ সময় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে রেমিটেন্স তথা প্রবাসী আয়ও বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে রেমিটারদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে। এভাবেই আয়-ব্যয় সমান করতে হবে, অন্যাথায় বৈষম্য সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দিতে হবে। অগ্রণী ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সামস-উল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ঋণের বিপরীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ রয়েছে ১৮.৭৭ শতাংশ। তবে বছরে তের-চৌদ্দ শতাংশে নেবে আসবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সিঙ্গেল ডিজিটে আনা হবে। তিনি জানান, বর্তমানে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ রয়েছে ৫ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। গতবছর আদায় করা হয়েছে ১ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ থেকে ৯৭৮ কোটি টাকা ও অবলোপন থেকে ৪৭ কোটি টাকা আদায় করা হয়। এর মধ্যে নগদ আদায় হয় ৩৯৮ কোটি টাকা। আমানত ও ঋণের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে বলেন, ২০১৭ সালে অগ্রণী ব্যাংকের আমানত ছিল ৫২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। সে হিসাবে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা বা ১৮ শতাংশ। একইভাবে ২০১৭ সালে ঋণ ছিল ৩১ হাজার ৯১২ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৯ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। তাতে ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ শতাংশ। ২০১৭ সালে আদায় করা হয়েছিল ২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ আদায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৯৫০ কোটি টাকা, গত বছরে তা কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৯৫৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও মূলধন ঘাটতিতেও রয়েছে ব্যাংকটি। এসব হিসাব চ‚ড়ান্তের পরই প্রকৃত মুনাফার হিসাব হবে। ২০১৮ সালে অগ্রণী ব্যাংকের আমদানি, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বেড়েছে। তবে সুদবিহীন আয় কমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে আমদানি বাণিজ্য হয়েছিল ১৩ হাজার ২৬৬ কোটি টাকার, গত বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকায়। ২০১৭ সালে রপ্তানি বাণিজ্য হয়েছিল ৭ হাজার ৫৮ কোটি টাকার, গত বছরে তা বেড়ে হয় ৮ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। একইভাবে প্রবাসী আয়ও ১০ হাজার ৬০৫ কোটি থেকে বেড়ে গত বছর শেষে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৬৮০ কোটি টাকায়। তবে সুদবিহীন আয় ৪৪৯ কোটি থেকে কমে দাঁড়ায় ৩৯৯ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে লোকসানি শাখা ৪৪ ছিল যা ২০১৮ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২১টিতে বা প্রায় ৫০ শতাংশ। ব্যাংকটির বর্তমান টার্গেটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের স্বল্পমেয়াদি টার্গেট হলো, লো কস্ট ডিপোজিট বাড়ানো। সেরা হওয়ার জন্য আমরা কিছু রণকৌশল প্রণয়ন করেছি। আগে সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের কাছে যেত না, বরং গ্রাহকরা ব্যাংকারের কাছে আসত। কিন্তু যুগ পাল্টেছে। সত্যিকারের ব্যাংকিং সেবায় আমরা গ্রাহকদের হৃদয় জয় করতে চাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App