×

জাতীয়

নতুন রক্ত সঞ্চালনের পদক্ষেপ!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৪৫ এএম

নতুন রক্ত সঞ্চালনের পদক্ষেপ!
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন এক যুগের সূচনা করলেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অভিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান নেতাদের বাদ দিয়ে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিয়েছেন একঝাঁক নতুন মুখ। এদের প্রায় সবাই বয়সে তরুণ ও নেতৃত্বে প্রতিশ্রুতিশীল। উড়ে এসে জুড়ে বসা নয়; ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। উচ্চশিক্ষিত ও মেধাবী। পারিবারিকভাবেও রয়েছে আওয়ামী ঘরানার ঐতিহ্য। এর মাধ্যমে দল ও সরকারে নতুন রক্ত সঞ্চালনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিলেন শেখ হাসিনা। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেননি দলের ডাকসাইটে প্রবীণ নেতাদের। যারা বাদ পড়েছেন তারাও বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় দলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছেন। সিনিয়র নেতাদেরও পরামর্শ দিয়েছেন তাদের পরবর্তী নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে। এমনকি তার নিজের বিকল্প খোঁজার জন্যও বলেছেন সর্বশেষ দলের সংসদীয় বৈঠকে। দল ও সরকারে তারুণ্যকে সম্পৃক্ত করার এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরাও। চমকের নতুন মন্ত্রিসভাকে ভাইব্রেন্ট, তারুণ্য, আঞ্চলিক সংখ্যানুপাতিক এবং জনপ্রত্যাশার রায় হিসেবেই দেখছেন তারা। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, নতুন মন্ত্রিসভায় নবীন-প্রবীণের মিশ্রণ হয়েছে। দলের সাংগঠনিক কাজের সঙ্গে জড়িতরা ঠাঁই পেয়েছেন। তরুণ প্রজন্ম মন্ত্রিসভায় আসায় নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা তৈরি হয়েছে। নবীনরা নীতিনির্ধারণী পদে আসছেন। নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট নিয়ে আসা আওয়ামী লীগ নতুন এই মন্ত্রিসভার মাধ্যমে জনগণের গণপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। এই শিক্ষাবিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু সংসদীয় গণতন্ত্রে তারুণ্যের গতিশীলতা পছন্দ করতেন। তার কন্যাও এটি পছন্দ করেন এবং বাস্তবায়ন করেন। এটি উল্লেখযোগ্য দিক। প্রধানমন্ত্রী দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের জনগণের মনোভাব ধারণ করে মন্ত্রিসভায় প্রতিটি অঞ্চলকে গুরুত্ব দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন জানিপপ চেয়ারম্যান ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতিটি অঞ্চলের জনগণ যাতে ভাবতে পারে মন্ত্রিসভায় তাদের প্রতিনিধিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সেই অনুভ‚তিকে সম্মান দিয়েছেন। এ ছাড়া শেখ হাসিনা তরুণদের গুরুত্ব দিয়েছেন। যোগ্যতা, দায়িত্ব, দলের প্রতি কর্তব্য, নেত্রীর প্রতি আনুগত্য সব বিবেচনায় মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন সরকারপ্রধান। ডক্টর কলিমউল্লাহ বলেন, মন্ত্রিসভা গঠনে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও দক্ষতা দেখিয়েছেন। যদিও মন্ত্রিসভার কাজ একটি টিমওয়ার্ক; তবুও নতুন মন্ত্রিরা প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই যথাযথভাবে নিজেদের কর্তব্য পালন করবেন। বাদ পড়েছেন যে হেভিওয়েটরা : নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন ২৪ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী। আজ সোমবার বিকেলে তাদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। গতকাল বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম নতুন মন্ত্রীদের তালিকা ঘোষণা করেন। নতুনদের জায়গা দিতে বাদ পড়েছেন বর্তমান মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা। বিগত মন্ত্রিসভার ২৫ মন্ত্রী, ৯ প্রতিমন্ত্রী ও ২ উপমন্ত্রী এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। আর আগের মন্ত্রিসভার জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মারা যান গত ৩ জানুয়ারি। নতুন মন্ত্রিসভায় বাদ পড়াদের তালিকায় রয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন তিনি অবসর নিতে চান। এবারের সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থীও হননি। বাদ পড়াদের তালিকায় আরো রয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পরিবেশমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ভ‚মিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, মৎস্যমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বিমানমন্ত্রী এ. কে. এম শাহজাহান কামাল ও ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান। ত্রাণ ও দুর্যোগমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। মন্ত্রীদের মধ্যে টেকনোক্র্যাট দুই মন্ত্রী নুরুল ইসলাম ও মতিউর রহমান ভোটের আগেই পদত্যাগ করেন। এদিকে প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক (চুন্নু), বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী। বাদ পড়েছেন দুই উপমন্ত্রীও। এরা হলেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আরিফ খান জয়। আরিফ খান জয় নির্বাচনে মনোনয়নই পাননি। নতুন মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির কেউ নেই। আগের মন্ত্রিসভায় দলটির তিনজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকার কারণে এবার তারা মন্ত্রিসভায় যোগ দেবেন না বলে শপথের পরদিনই দলটির চেয়ারম্যান এরশাদ জানিয়েছেন। এ ছাড়া মহাজোটের শরিক জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টির (জেপি) কেউই মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। আগের মন্ত্রিসভায় জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন ও জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ছিলেন। নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা যেন দেশ ও জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল থেকে নিজেদের দুর্নীতি মুক্ত রাখেন এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, নতুন মন্ত্রিসভা নতুন আকর্ষণ। নতুন ভাইভ্রেট। তবে মানুষের প্রত্যাশা তখনই পূরণ হবে, যখন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা নিজেদের দুর্নীতি মুক্ত রাখবেন এবং দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেবেন। ক্ষমতা পেয়েই নিজেদের সম্পদ বাড়ানো পুরনো দিনের এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আজ শপথের দিন থেকেই তাদের নিজেদের অঙ্গীকার হবে নিজেদের স্বচ্ছ রাখার। নিজের কাছে নিজের জবাবদিহি থাকার। প্রধানমন্ত্রী যেটি বারবার বলেন। জনগণ নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট তাদের দিয়েছেন আর প্রধানমন্ত্রী তাদের সম্মান দিয়ে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিয়েছেন। তারা যেন জনগণ এবং প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এই সম্মানটুকু ধরে রাখতে পারেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App