×

মুক্তচিন্তা

নতুন মন্ত্রিসভার সাফল্য কামনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:১২ পিএম

বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে। তবে একটি উন্নত সমৃদ্ধিশালী দেশ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেয়া এখনো সম্মুখের চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ এবারের নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে দেখিয়েছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি যদি নির্বাচিত হতে পারেন তাহলে ২১০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য ঠিকই উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি ভূমিকা রাখবেন। জনগণ তার এই প্রতিশ্রুতির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে। এখন নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর সময়ক্ষেপণ না করে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার মাধ্যমে উন্নয়ন ও সুশাসনের কর্মযজ্ঞ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু করা একান্তই জরুরি।

সোমবার বিকেলবেলায় বঙ্গভবনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছেন। এতে ২৪ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ জন উপমন্ত্রী স্থান পেয়েছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় নতুনদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, বয়স্ক এবং হেভিওয়েট বলে খ্যাতদের অধিকাংশই স্থান পাননি। তাদের শপথগ্রহণের মাধ্যমে অবসান ঘটেছে বহু প্রতীক্ষার।

এ ক’দিন নানা জল্পনা-কল্পনা থাকলেও তেমন কেউ আন্দাজ করতে পারেননি কারা নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন। সবার মধ্যে যে কথাটি আলোচিত ছিল তা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী আগামী পাঁচ বছর দেশ পরিচালনায় যাদের নিয়ে সফল হতে পারবেন তেমন সদস্যদের নিয়েই মন্ত্রিপরিষদ গঠন করবেন। তাতে অভিজ্ঞ এবং নতুন প্রতিশ্রুতিশীল সদস্যের সমন্বয় ঘটবে।

আমাদের ধারণা অনেকটা তাই ঘটেছে। এখন কে কোন পদ পেলেন, পেলেন না, কারা বাদ পড়লেন তা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হচ্ছে গঠিত মন্ত্রিপরিষদ প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্পের ইশতেহার বাস্তবায়নে এখন থেকে কতটা আত্মনিয়োগ করবেন, সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করবেন, দেশকে উন্নয়ন ও সুশাসনে প্রত্যাশার কাক্সিক্ষত স্থানে শুধু পৌঁছানোই নয়- অতিক্রম করতেও তৎপর থাকবেন সেটিই দেখার বিষয়।

কেননা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত পূর্বেকার তিনটি মন্ত্রিপরিষদ বাংলাদেশে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখাতে পেরেছিল। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে। তবে একটি উন্নত সমৃদ্ধিশালী দেশ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেয়া এখনো সম্মুখের চ্যালেঞ্জ।

এই চ্যালেঞ্জ এবারের নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে দেখিয়েছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি যদি নির্বাচিত হতে পারেন তাহলে ২১০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য ঠিকই উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি ভূমিকা রাখবেন। জনগণ তার এই প্রতিশ্রুতির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে।

এখন নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর সময়ক্ষেপণ না করে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার মাধ্যমে উন্নয়ন ও সুশাসনের কর্মযজ্ঞ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু করা একান্তই জরুরি।

গত দুই মেয়াদে শেখ হাসিনা যে মন্ত্রিসভা নিয়ে কাজ করেছিলেন তাদের সম্পর্কে তেমন কোনো দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। কোনো কোনো মন্ত্রী অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তার কারণে ব্যক্তিগতভাবে তারা যেমনি সমালোচিত হয়েছিলেন, শেখ হাসিনার সরকারকেও কিছুটা বিভ্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিল।

তবে এই সংখ্যাটি খুবই সীমিত ছিল। আমরা আশা করব নতুন মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যই অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলে মানুষের মনের মধ্যে বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবেন না। শুরু থেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়কে কীভাবে আগের চাইতে অধিকতর কার্যকর, দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং সুশাসনে দৃষ্টিকাড়া অবস্থানে নেয়া যায়, সে ধরনের উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে কাজে আত্মনিয়োগ করবেন।

একইসঙ্গে তদবির, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ইত্যাদিকে দূরে ঠেলে দিয়ে মানুষের সুযোগ-সুবিধা যথাযথ নিয়মে পাওয়ার ব্যবস্থা করার ধারা প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করবেন। সদ্য প্রয়াত মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদের জন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। আমরা আশা করব তার এই দৃষ্টান্ত নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা নিজ নিজ পন্থায় অনুসরণ করবেন এবং নিজেরাও দেশ ও জাতির কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের প্রাক্কালে যে ইশতেহার জাতির উদ্দেশে প্রচার করেছেন সেটি সব মহলের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। এর আগে ২০০৮ ও ২০১৩ সালে প্রদত্ত ইশতেহার শেখ হাসিনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, ইশতেহার শুধু প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি নয় বরং দেশ ও জনগণের সামগ্রিক কল্যাণে পরিকল্পিত কর্মপদ্ধতি বাস্তবায়নের উপায়।

সেই ইশতেহার দুটো বাস্তবায়নের ফলেই বাংলাদেশ গত ১০ বছরে অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সব ক্ষেত্রে সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছে, দেখাতে সক্ষম হয়েছে জনজীবনে উন্নয়ন ও পরিবর্তনের স্বপ্নের বাস্তবতা।

সে কারণে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার দেয়া ইশতেহারকে সচেতন মহল আস্থায় নিয়েছে এই ভেবে যে, অতীতের ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা উন্নয়ন ও সুশাসনের যে ফর্মুলা উপস্থাপন করেছেন সেটি মোটেও কাল্পনিক নয় বরং খুবই প্রয়োজনীয় শর্ত যা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ খুব কম সময়ের মধ্যেই পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহের কাতারে উঠে আসতে সক্ষম হবে।

বাংলাদেশ গত ১০ বছর যে উন্নয়ন সাধন করেছে তা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা প্রশংসা করেছে এবং বাংলাদেশ উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই উন্নত সমৃদ্ধিশালী দেশে রূপান্তরিত হতে সক্ষম হবে। এটি এখন বাংলাদেশের জন্য খুবই বাস্তবায়নযোগ্য উন্নয়ন ধাপ।

তবে এর জন্য শেখ হাসিনা যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন সেটি বাস্তবায়ন ও যুগোপযোগী করার মাধ্যমে জনগণের জীবনমানের ধারাবাহিক উন্নয়ন ঘটানো, ন্যায়বিচার লাভের সুযোগ ঘটানো তথা স্বস্তিদায়ক কর্মজীবনের পরিবেশ সৃষ্টি করা মোটেও সহজ কাজ নয়। এখানে পদে পদে অসংখ্য পশ্চাৎপদতা, অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, নিয়মকানুনের অনভ্যস্ততা, স্বার্থপরতা, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি অপশক্তি রয়েছে- সেগুলোকে দূর করা অত্যাবশ্যকীয় কাজ।

তার স্থলে রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে আইন, বিচার, শৃঙ্খলা, নিয়মকানুন, সততা, নিয়ম-নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, মেধা, মননশীলতা এবং সৃজনশীলতার উন্মেষ ও বিকাশ ঘটানো অপরিহার্য। এসব পরস্পরবিরোধী বাস্তবতাকে একসঙ্গে মোকাবেলা করে ইতিবাচক গতিপ্রবাহকে সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করা এই সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নেতৃত্ব আমাদের সম্মুখে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখন প্রয়োজন এর বাস্তবায়নে কাজ করা। সে ক্ষেত্রে স্ব-স্ব বিষয়ের ও প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। নতুন নতুন সম্ভাবনার উদ্ভাবন ঘটানো। জনগণকে এর সঙ্গে যুক্ত করা, তাদের মধ্যে বিরাজমান পশ্চাৎপদতাকে নিষ্ক্রিয় করা। একইসঙ্গে সম্ভাবনাময় বাস্তবতাকে জীবন্ত করা।

এর মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্র যুগোপযোগী পরিবর্তনের ধারায় বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। সেটি ঘটলেই কেবল আমরা বলতে পারব বাংলাদেশে উন্নয়ন সুশাসনের পথ সমান্তরালভাবে রচনা করতে সক্ষম হয়েছে। উন্নত দেশ বলতে উন্নয়ন ও সুশাসনের দেশকেই বুঝায়। যেখানে প্রতিটি মানুষ নাগরিক অধিকার সম্পর্কে অবহিত হবে এবং এগুলোর যথাযথ ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।

এর মাধ্যমে জীবন মানের উন্নয়ন ঘটে, চিন্তার প্রসার ঘটে, আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নাগরিক সমাজ গঠিত হয়- যারা বৈষম্যহীন, সুষম, উন্নয়ন ও জীবনযাত্রায় দেশকে উদ্ভাসিত করতে সক্ষম হয়।

শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত আধুনিক, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে সুযোগ পেয়েছে সেটি তখনই জনগণের কাছে সমাদৃত হবে যখন তারা এই দায়িত্ব পালনে সফল হবেন। এর জন্য মন্ত্রিপরিষদের সব প্রবীণ-নবীন সদস্যকে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে।

দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ইত্যাদিকে যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করতে হবে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে শেখ হাসিনার এই মেয়াদের মন্ত্রিপরিষদ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। সেটি মানুষের প্রত্যাশা। এই কাজে তারা সফল হবেন, ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই- সেটি সবাই বিশ্বাস করছে।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App