×

জাতীয়

বাড়েনি রেলওয়ের সেবার মান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:৫৫ পিএম

বাড়েনি রেলওয়ের সেবার মান
রেলের উন্নয়নে বিগত ৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৮টি প্রকল্প হাতে নেয়। যার অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে আবার কয়েকটি বাস্তবায়নাধীন। এ ছাড়া রেলের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন এবং রেলকে বিশ্ব মানে উন্নীত করতে বিশ বছর মেয়াদি মাস্টার প্ল্যানও গৃহীত হয়েছে। কিন্তু যতই পরিকল্পনা নেয়া হোক বা যত খরচ হোক না কেন বাড়েনি সেবার মান। বরং বিগত ১০ বছরে রেলের ভাড়া বেড়েছে দুবার। বেড়েছে রেলওয়ের লোকসান। তবে টানা তৃতীয় মেয়াদে রেলবান্ধব শেখ হাসিনার সরকার রেলের সেবার মান বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত পাঁচ বছরে রেলওয়েতে ১৩ হাজারের বেশি লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিনিয়োগের পথে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। বর্তমানে চলমান রয়েছে রেলের ৪৮টি প্রকল্প। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নতুন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের চিনকি আস্তানা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথ সংস্কারের কাজ শেষ। এদিকে টঙ্গী-ভৈরব পথে নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে। রেলের ইঞ্জিন ও বগি কেনার ডেমু প্রকল্প খুব দ্রুত গতিতে করা হয়। চীন থেকে প্রায় ৬০০ কোটি টাকায় ২০টি ডেমু কেনা হয়েছে। এত কিছু করার পরও রেলওয়ের সেবার মান বাড়েনি। কমেছে ট্রেনের গতিও। ২০০১ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের প্রায় পুরোটাতেই ৮০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করত। শুধু কুমিল্লার সদর রসুলপুর এলাকার কিছু অংশে ৭২ কিলোমিটার গতি ছিল। এখন পুরো পথেই ৬০-৭২ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলে। রেলের নথিপত্রে আন্তঃনগর ট্রেনের ৯০ শতাংশ সময় মেনে চলছে বলে দেখানো হয়েছে। আসলে প্রতিটি ট্রেনেরই চলাচলের সময় বাড়ানো হয়েছে। ফলে দেরিতে চললেও তা পুষিয়ে নেয়া যায়। এ ছাড়া ট্রেন লাইনচ্যুত হলে পুরো সপ্তাহের চলাচলের সময়সূচি উল্টে যায়। তখন আট ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে ট্রেন চলে। আর রেলে দুর্ঘটনার ৯০ শতাংশই লাইনচ্যুতির ঘটনা। বিগত বছরে রেলের পূর্বাঞ্চলেই ৫৬টি লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। সারা দেশে প্রায় শতাধিক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। বিপুল বিনিয়োগের পরও এভাবে লাইনচ্যুতির ঘটনাকে অস্বাভাবিকই মনে করেন রেলের অনেক কর্মকর্তা। লাখ লাখ কোটি টাকা খরচ করে প্রচুর প্রকল্প নেয়া হলেও যাত্রীবান্ধব হতে পারেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। বরং ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, বারে বারে রেল দুর্ঘটনা, টিকেট কালোবাজারি, প্রকল্পে ধীরগতি এবং নানা ধরনের দুর্নীতি, রেলের বগি অপরিষ্কার, বার্থরুমে পানি-আলো না থাকা, ট্রেনের সিট ভাঙা, সিটে ছারপোকা, বিনা টিকেটের যাত্রীদের যাওয়া আসা ইত্যাদি কারণে রেলের কাক্সিক্ষত সেবার মান বাড়ছে না বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলের ওপর সুনজর দিয়েছেন। চলতি বাজেটে ১৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। তবে লুটপাট ও পরিকল্পিত বিনিয়োগের অভাবে একই জায়গায় আটকে আছে রেলওয়ে। সেবার মান বাড়েনি। গতিও আগের মতোই আছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রকল্পগুলো যাতে সুনির্দ্দিষ্ট সময়ে ও অর্থে শেষ হয় সেজন্য স্বজন-পোষণ না করে যথাযথ মনিটরিংয়ের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। রেলওয়ের বর্তমান অবস্থায় হতাশ নন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। তিনি বলেন, রেল একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। লোকসানের কথা বিবেচনা না করে শতভাগ সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আগামী দুয়েক বছরের মধ্যে রেলের উন্নতি দৃশ্যমান হবে। আর ২০২০ সালের মধ্যে রেলের চেহারা পাল্টে যাবে। একই সুরে কথা বলেছেন রেলসচিব মোফাজ্জল হোসেন ও ডিজি কাজী মো. রফিকুল আলম। মোফাজ্জল হোসেন বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছি। ঢাকা চট্টগ্রাম-ঢাকা সিলেট ডাবল লাইনের কাজ প্রায় শেষ। গত ১০ বছরে রেলওয়ে প্রায় ২০টি আন্তঃনগর ট্রেন বাড়িয়েছে। প্রায় ১০০টি বন্ধ স্টেশন চালু করেছি। নতুন অনেকগুলো প্রকল্প চলমান তার মধ্যে পদ্মা রেল সেতু, দোহাজারী কক্সবাজার, ভাঙ্গা থেকে পায়রাবন্দর অন্যতম। এগুলো আগামী ২ বছরের মধ্যে চালু হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App