×

জাতীয়

সৈয়দ আশরাফের জন্য অঝোরে কাঁদলেন ওবায়দুল কাদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:০১ পিএম

সৈয়দ আশরাফের জন্য অঝোরে কাঁদলেন ওবায়দুল কাদের
সৈয়দ আশরাফের জন্য অঝোরে কাঁদলেন ওবায়দুল কাদের

রাজনীতিতে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন তার অগ্রজ অভিভাবক, দীর্ঘদিনের সহকর্মী। সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান বা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আশরাফ যে দায়িত্ব সামলাতেন, সে দায়িত্বই এখন তার কাঁধে। মুক্তিযুদ্ধকালীন রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফের সঙ্গে যে স্মৃতি জমেছিল, সেই স্মৃতি হৃদয়পটে ভেসে উঠতেই কেঁদে ফেললেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কাদেরের পাশাপাশি আশরাফের স্বজনদের কান্নায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের অন্য নেতাকর্মীরাও।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইট ‘মেঘদূত’যোগে ব্যাংকক থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ। তার মরদেহ নিতে মরহুমের স্বজন এবং মন্ত্রী-নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন কাদের।

মেঘদূত রানওয়েতে অবতরণ করার আগেই দলীয় নেতাকর্মী ও সৈয়দ আশরাফের স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে রানওয়ের পাশে এসে দাঁড়ান ওবায়দুল কাদের। বিমানের কার্গো ভোল্ট থেকে মরদেহ নামানোর পরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্য সদস্য ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সৈয়দ আশরাফের কফিন জাতীয় পতাকা মুড়ে দেন ওবায়দুল কাদের। এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি। এক পর্যায়ে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেননি। কেঁদে ফেলেন অঝোরে। পাশে থাকা দলীয় নেতাকর্মীদের সান্ত্বনাও থামাতে পারছিল না দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিভাবক হারানোর এই বেদনা।

বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে আসার পর সৈয়দ আশরাফ সম্পর্কে সাংবাদিকেরা মন্তব্য জানতে চাইলে প্রথমদিকে তাও বলেননি ওবায়দুল কাদের। বিষয়টিকে এড়িয়ে প্রতিবারই তিনি বলেছেন, এই কয়েকদিনে অনেকবার এই বিষয়ে কথা বলেছি। তার বিষয়ে কথা উঠলেই খারাপ লাগে। তাই আজ আর কিছু বলতে চাই না।

প্রসঙ্গত, গত ৩ জানুয়ারি ব্যাংককের একটি হাসপাতালে দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৈয়দ আশরাফ। সেখান থেকে তার মরদেহ মেঘদূতযোগে ঢাকায় আনা হয়। বিমানবন্দর থেকে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার বেইলি রোডের বাসায়।

বাড়ির ভেতরের খোলা জায়গায় সামিয়ানা টাঙিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ করে সেখানে সৈয়দ আশরাফের কফিন রাখা হয়। এরপর সারি ধরে দাঁড়িয়ে তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ, যাদের মধ্যে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নানা শ্রেণির পেশার মানুষ ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক প্রয়াত নেতার কফিনে ফুল দেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান নওফেল, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ, সংসদ সদস্য আসলামুল হক ও সাদেক খানসহ অনেক নেতাই উপস্থিত হন শ্রদ্ধা জানানোর মিছিলে।

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এই নেতাদের অধিকাংশই বিমানবন্দরে হাজির হয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফের মরদেহ গ্রহণের জন্যে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফ জনপ্রশাসন মন্ত্রী ছিলেন। তার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক শ্রদ্ধা জানাতে এসে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আমি আশরাফ ভাইয়ের সঙ্গে যে কয় দিন কাজ করেছি দুজনের মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল না। আমার আর উনার মতামতে মিল ছিল সব সময়ই। তিনি একজন অমায়িক মানুষ ছিলেন। উনি এতই ভালো মানুষ ছিলেন যে, পূর্ণমন্ত্রী হয়ে আশরাফ ভাই মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার পর যতো দিন আমার নতুন অফিসে মালামাল গোছানো না হয়েছে ততো দিন তিনি নিজের রুমে বসেননি। আমি আমার কক্ষে বসার পর থেকে তিনি ওই কক্ষে বসতেন। উনার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি অত্যন্ত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাহসী মানুষ ছিলেন।

বেইলি রোডের সরকারি বাসভবন থেকে নিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমাগারে রাখা হয়েছে আশরাফের মরদেহ। রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন হবে। এরপর হেলিকপ্টারে করে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তার জেলা কিশোরগঞ্জে। দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে সৈয়দ আশরাফের দ্বিতীয় জানাজা হবে।

এরপর তৃতীয় নামাজে জানাজা দুপুর ২টায় ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাঁ মাঠে সম্পন্ন হবে। সেখান থেকে মরদেহ ঢাকায় নিয়ে এসে বাদ আসর বনানী কবরস্থানে দাফন হবে সৈয়দ আশরাফকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App