×

মুক্তচিন্তা

বেপরোয়া পরিবহন আর কত জীবন নেবে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৫ পিএম

নতুন বছরের প্রথম দিনে রাজধানীর মালিবাগে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই পোশাক শ্রমিক মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এভাবে একের পর এক প্রাণহানি ঘটছেই। কিন্তু এ দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই।

দুই শ্রমিক নিহত হওয়ার জের ধরে মালিবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতা প্রাইভেটকারসহ বহু যানবাহনে ভাঙচুর চালিয়েছে ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এটি অনভিপ্রেত। বেপরোয়া বাস চালকদের রেষারেষিতে করুণ পরিণতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বাস দুর্ঘটনায় কেউ হাত কিংবা পা হারাচ্ছেন আবার কারো প্রাণ যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানীতে বাস চলাচল বিপজ্জনক। মালিবাগ এলাকায় নির্বাচনোত্তর ফাঁকা সড়ক পেয়ে ফের পাল্লা দিয়েছিল যাত্রীবাহী দুটি বাস। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, বাসগুলো এখনো এত বেপরোয়া কেন? আন্দোলন, আইন করেও যদি তাদের নিয়মের মধ্যে আনা না যায়, তাহলে প্রতিকার কী?

কিছু চালকের সাময়িক উত্তেজনার বশে এভাবে মূল্যবান প্রাণ সড়কে ঝরতেই থাকবে! কয়েক মাস আগে রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠলে সড়কপথে দুর্ঘটনা এড়াতে এবং নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে বিআরটিএ ছাড়াও পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্তা-ব্যক্তিরা যানবাহন চালক ও তাদের সহযোগীদের সংযত করার পাশাপাশি নানা পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

মালিবাগে দুই গার্মেন্ট শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ছাড়াও সড়কপথে দুর্ঘটনার প্রতিদিনকার চিত্র এটাই প্রমাণ করে, এ সবকিছুই অরণ্য রোদনে পর্যবসিত হয়েছে। এমন দুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পরিবহন খাতে বিরাজমান বিশৃঙ্খলা। বেতনভুক্ত চালক দিয়ে লোকাল গাড়ি (বাস) চালালে মালিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নগরীর অধিকাংশ পরিবহন মালিক তাদের বাস-মিনিবাস চালককে চুক্তিতে চালাতে দিচ্ছে। চুক্তির কারণেই চালকরা বেপরোয়া। কারণ একই রুটের যে বাস আগে শেষ গন্তব্যে পৌঁছাবে সেই ফিরতি ট্রিপের সিরিয়াল পাবে আগে। এ কারণে একই রুটের বাসের মধ্যেই ভয়াবহ মরণ রেশ দেখা যায়। আর এ প্রতিযোগিতার কারণেই পরিণতি হয় দুর্ঘটনা।

সড়ক ব্যবস্থাপনার চিত্র এককথায় ভয়াবহ। একদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, অন্যদিকে অদক্ষ চালকের হাতে গাড়ি চালানোর ভার দিয়ে অসংখ্য মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দেশে আইন আছে, রয়েছে শাস্তির বিধান। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ সন্তোষজনক নয়। তাই সড়ক দুর্ঘটনার দায়ে অভিযুক্ত চালকদের সাজা ভোগের নজিরও দেখা যায় না।

সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা কঠিন কোনো বিষয় নয়। এ জন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। সড়কপথে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হলে দুর্ঘটনার হার অনেক কমে আসবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ জন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন হতে হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App