×

মুক্তচিন্তা

নাট্যান্দোলন এবং চৌধুরী জহুরুল হক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৮ পিএম

‘আমার সহকর্মী চৌধুরী জহুরুল হক তাৎক্ষণিক খ্যাতি লাভ করেন ছোটগল্প লিখে এবং সেসব গল্পের রূপ ও রীতিকে চোঙা গল্প অভিধায় আখ্যাত করে। ইদানীং তিনি গান রচনায় হাত দিয়েছেন। তবে তার যথার্থ আসক্তি নাট্যকলায়। নাটক রচনায় এবং দেশি ও বিদেশি গল্পের নাট্যরূপ প্রদানে তিনি অকৃত্রিম ও অসাধারণ উৎসাহের পরিচয় দিয়েছেন।

দুটি একাঙ্কিকা নিয়ে তাঁর প্রথম নাট্যগ্রন্থ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। ‘কবি কাহিনী’ ও ‘চিঠি’ জাহাঙ্গীর তারেখের রচনার নাট্যরূপ। দুটিই প্রহসন। আমি ‘চিঠি’র পক্ষপাতী। যারা তীব্র ধরনের প্রহসন পছন্দ করেন, তাদের কাছে হয়তো ‘কবি কাহিনী’ বেশি ভালো লাগবে। তবে নাট্যকারের বিশেষ প্রবণতা ও স্বকীয় রচনাশক্তির পরিচয় দুটিতেই আছে। সে পরিচয় পেয়ে আমি আনন্দিত হয়েছি। -আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ২৮-১১-৮২

আজ ৩ জানুয়ারি ২০১৯, চৌধুরী জহুরুল হকের এগারোতম মৃত্যুবার্ষিকী। চট্টগ্রামের প্রথম (দেশেরও প্রথম দিককার) গ্রুপ থিয়েটার সংগঠন থিয়েটার ৭৩-এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন চৌধুরী জহুরুল হক। ড. আনিসুজ্জামান, ড. মুহম্মদ ইউনূস, মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, জিয়া হায়দার, চৌধুরী জহুরুল হক প্রমুখ বরেণ্য ব্যক্তিরা থিয়েটার ৭৩-এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন।

সংগঠনটি ১৯৭৬ সালে চৌধুরী জহুরুল হক রচিত ‘কবি কাহিনী’ এবং ১৯৭৭ সালে ‘স্বর্গ উপসর্গ’ নিয়মিত মঞ্চায়ন শুরু করে। এ ছাড়া শিল্প ও সাহিত্য পরিষদ চট্টগ্রাম গঠন, পরবর্তী সময় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে এই পরিষদ এবং পরিষদের সম্পত্তি (যা বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব সম্পদ) আত্মীকরণের মাধ্যমে চট্টগ্রামে শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন।

মানবজীবনের বহুমাত্রিক রূপের নান্দনিক রূপায়ণ দ্রষ্টব্য হয়ে উঠে তার বিস্তৃত নাট্য পরিম-লে। রূপান্তরিত ও মৌলিক সব মিলে চৌধুরী জহুরুল হকের নাটকের সংখ্যা চৌত্রিশটি, ক্ষুদ্রাকৃতির রঙ্গনাট্যের সংখ্যা পঁয়ত্রিশটি, রয়েছে ‘আনন্দ নাট্য কণিকা’ শীর্ষক পনের পর্বে একটি নাট্য সিরিজও। এ ছাড়া ‘পঞ্চরং’-এর কথাতো সবারই জানা।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নাটকের নানা বাঁক ও রূপ-প্রতিমার নানামাত্রিক নির্মাণ প্রক্রিয়ার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল পথিকৃতের। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম নাটকের স্রষ্টা তো তিনিই। একুশের নাটক রচয়িতার সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য চারজনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়জন, প্রথম জন মমতাজ উদ্দীন আহমদ এবং তৃতীয় ও চতুর্থজন হলেন যথাক্রমে আলাউদ্দিন আল আজাদ ও সৈয়দ শামসুল হক। উপরন্তু নাটকে নতুন আঙ্গিক ‘পঞ্চরং’- প্রবর্তনের কৃতিত্বের অধিকারীও তিনি।

বস্তুত সব মিলে মানবজীবনের বহু বৈচিত্র্যময় রূপায়ণে তার রয়েছে বিপুল ও বর্ণিল এক নান্দনিক নাট্যভুবন। কাজেই বাংলাদেশের নাট্য সাহিত্যের ইতিহাসে নাট্যকার চৌধুরী জহুরুল হকের অধিষ্ঠান হবে অতীব গৌরবোজ্জ্বল আসনে- এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু যারা স্বাধীনতা-উত্তরকালের বাংলাদেশের নাটকের ইতিহাস কিংবা নাট্যবিষয়ক প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা করেছেন, তারা কীভাবে ভুলে রইলেন নাট্যকার চৌধুরী জহুরুল হক ও তার নাটককে। আমাদের এই মানসিক দীনতা ও লজ্জার কাল আর কত দীর্ঘ হবে!

আজ ৩ জানুয়ারি ২০১৯ চৌধুরী জহুরুল হকের এগারোতম মৃত্যুবার্ষিকী। ‘নাট্যমঞ্চ’ আজ যে আয়োজনের সূচনা করল তা অব্যাহত থাকবে। নাট্যচর্চায় চৌধুরী জহুরুল হক স্যারের একনিষ্ঠ অবদানের অধ্যায় স্মরণ করে এই আয়োজন একান্ত জরুরি বলে ‘নাট্যমঞ্চ’ পরিবার মনে করে। নাট্যমঞ্চ পরিবার এও আশা করে, অন্যান্য সংগঠন চৌধুরী জহুরুল হক চর্চায় মনোযোগী ও সক্রিয় হবে। নাট্যব্যক্তিত্ব চৌধুরী জহুরুল হক স্যারের স্মৃতি সবার অন্তরে চির জাগরুক থাকুক এবং তার আত্মা চির শান্তিতে থাকুক।

কবি ও লেখক, চট্টগ্রাম

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App