×

আন্তর্জাতিক

নিউইয়র্কে সাহিত্য একাডেমির ৯৭তম আসর

Icon

শামীম আহমেদ

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৪৩ পিএম

নিউইয়র্কে সাহিত্য একাডেমির ৯৭তম আসর
নিউইয়র্কে সাহিত্য একাডেমির ৯৭তম আসর
নিউইয়র্কে সাহিত্য একাডেমির ৯৭তম আসর
নিউইয়র্কে সাহিত্য একাডেমির ৯৭তম আসর
নিউইয়র্কে সাহিত্য একাডেমির ৯৭তম আসর
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যথাযথ সম্মান জানিয়ে 'সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক'র নিয়মিত মাসিক ৯৭ তম এবং বছরের শেষ আসরটি গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন। আসরে সদ্য পরলোক গত কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী স্মরণে শোক প্রকাশ করা হয়। যাঁদের মূল্যবান আলোচনায় এবারের আসরটি ঋদ্ধ হয়েছিল তাঁরা হলেন প্রাবন্ধিক হাসান ফেরদৌস, লেখক ফেরদৌস সাজেদীন, কবি তমিজ উদদীন লোদী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কবি হোসাইন কবির, কবি কাজী আতীক, ছড়াকার মনজুর কাদের, লেখক এবিএম সালেহ উদ্দীন, লেখক সোনিয়া কাদের ও মোঃ আলী বাবুল। হাসান ফেরদৌস বলেন, শিল্প তৈরি হয় আড়াল থেকে। লুকিয়ে থাকার মধ্যেই শিল্প থাকে। কবি শামসুর রহমানের 'কাক' কবিতার উদ্ধৃতি টেনে তিনি বলেন এমন সিম্বলিক কবিতা আর পড়িনি। আজকের আসরে যাদের স্বরচিত কবিতা শুনেছি তাদের কবিতায় তেমন আড়াল খুঁজে পাই নি। দু'টো গল্পের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, কত মা-বোন একাত্তরে তাঁদের শেষ সম্বল তুলে দিয়েছেন দেশের স্বাধীনতার জন্য তার হিসেব নেই। একাত্তর আসলে এতটা ব্যাপক যা সাহিত্যে এখনো বিষদ ভাবে আসে নি। ফেরদৌস সাজেদীন সবাইকে প্রীতি ও বিজয়ের মাসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মধ্য সত্তরে এদেশে এসে দেখেছি কবিতা, নাটক, গান, সাহিত্য কিছুই নেই। এখন নাচ, গান, কবিতা, নাটক, সাহিত্যে এদেশের সর্বত্র যখন আমাদের সমৃদ্ধি দেখি তখন মনে হয় আমি বিজয় দেখছি। কোন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে শেষ চেয়ারটাও দখল হয়ে যেতে দেখলে তখন মনে হয় বাংলাদেশের বিজয় দেখি। প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার সাহিত্য একাডেমিতে এসেও আমি বিজয় দেখি। নির্ধারিত বিষয় 'সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ'র উপর আলোচনা করতে গিয়ে কবি তমিজ উদদীন লোদী বলেন, বিশ্বের সব যুদ্ধ নিয়েই সাহিত্য রচিত হয়েছে। যুদ্ধ মানুষকে কিভাবে বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত করে এরিক মারিয়ার বইতে তা উঠে এসেছে। টলস্টয়ের ওয়ারেন্ট পিচ পাঁচটি পরিবারের জীবনী নিয়ে লেখা উপন্যাসে যুদ্ধের কথা বিস্তৃতভাবে বর্ণনায় এসেছে। মহাভারত, রামায়ণে যুদ্ধের কথা বর্ণনা আছে। বাংলা সাহিত্যেও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিস্তর লেখা হয়েছে। গদ্য, গল্প, উপন্যাস সাহিত্যের সব শাখায় কোন না কোনভাবে মুক্তিযুদ্ধ এসেছে। পল্লীকবি জসিম উদ্দীন সহ সব কবির কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা এসেছে। বাংলাদেশ যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের কথা আসবেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কবি হোসাইন কবির বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুধুমাত্র কতিপয় মানুষের নয়। যে মা রান্না করে মুক্তিযোদ্ধাদের খাইয়েছিলেন তিনিও একজন মুক্তিযোদ্ধা। কবি, লেখকদের কথা বলতে হবে। কালো কে কালো, সাদা কে সাদা বলতে হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে চট্রগ্রাম শহরকে বলা হয় কবিতার শহর। তদ্রূপ নিউইয়র্ক শহরটাকে সাহিত্য একাডেমি বাংলার কবিতার শহর, সাহিত্যের শহর বানিয়ে ফেলেছেন। সাহিত্য একাডেমিতে আজ নিবিড় ভাবে সবার পড়া শুনেছি, আগের থেকে কবি, লেখকদের লেখায় অনেক উন্নতি হয়েছে। কাজী আতীক সবাইকে বড়দিন ও বিজয়ের মাসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের বিজয় একদিনে আসেনি।
১৯৭১ সালের আগে ১৯৪৮ সাল থেকে বিভিন্ন আন্দোলনে যাঁদের আত্মত্যাগ ছিল তাঁদের সকলকে সম্মানের সাথে স্মরণ করছি। সোনিয়া কাদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধ কালীন ভয়াবহ স্মৃতির কথা মনে উঠলে এখনো গা শিউরে উঠে। কিশোরী আমাকে মা পুকুরে কচুরিপানা দিয়ে ডুবিয়ে রাখতেন। ভালো থাকুক দেশ ভালো থাকুক সকলে ইউ, এস বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু সাঈদ রতন সবাইকে বিজয়ের রক্তিম শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, সাহিত্য একাডেমির নিয়মিত ৯৭ তম আসরের কবিতা শুনে সবাইকে আগের থেকেও বেশী আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ সবাই দেখেছি। সবার অনুভূতি আসুক সাহিত্যে। এবিএম সালেহ উদ্দীন সবাইকে বিজয়ের মাসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আমাদের সকলের আগামী দিনগুলো যেন আরো সুন্দর ও চমৎকার হয়। মোঃ আলী বাবুল বলেন, সাহিত্য একাডেমি একটি সুন্দর বাগান। এই বাগানে আসতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। বিপা'র কর্ণধার এ্যানি ফেরদৌস, ছড়াকার শামস চৌধুরী রুশো আসরে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। মহান বিজয়ের মাসের প্রতি শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা জানিয়ে আসরে যাঁরা কবিতা, ছড়া পড়েছেন তাঁরা হলেনঃ- শামস আল মমীন, মনজুর কাদের, লুৎফা শাহানা, তাহমিনা সাঈদ, উইলি মুক্তি, বেনজির শিকদার, ইশতিয়াক রুপু, আহম্মেদ হোসেন বাবু, জেবুন্নেসা জ্যোৎস্না, সুরীত বড়ুয়া, স্বপ্ন কুমার, শাম্মী আক্তার হ্যাপি, মাসুম আহম্মেদ, রিমি রুম্মান, আব্দুস শহীদ, সৈয়দ আহম্মেদ জুয়েদ, কামরুন নাহার রীতা, আবুল বাশার, মিশুক সেলিম, পলি শাহীনা প্রমুখ। আসরের ছোট্ট বন্ধু তামান্না আহম্মেদ শান্তির স্বরচিত আবৃত্তি সবাইকে মুগ্ধ করেছে। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী স্মরণে আসরে তাঁর কবিতা পাঠ করে শুনান ফেরদৌস সাজেদীন, রাণু ফেরদৌস ও মনিজা রহমান। এছাড়াও এবারের আসরে আরো যাঁরা আবৃত্তি করেন তাঁরা হলেন, পারভীন সুলতানা, লুবনা কাইজার, গোলাম মোস্তফা, তাহরিনা পারভীন, সেলিম ইব্রাহীম ও শুক্লা রায়। আসরে আরো উপস্থিত ছিলেন বাফার কর্ণধার ফরিদা ইয়াসমিন, পপি কুলসুম, রাহাত কাজী শিউলি, আহমাদ মাজহার, খালেদ সরফুদ্দীন, শামসাদ হুসাম, পারভীন হোসেন, নাসরিন চৌধুরী, মেরিনা রহমান, জাকির মিয়া, কানু দত্ত, শাহ চৌধুরী, সানি আলম, রাব্বানী, মোঃ মনিরুল ইসলাম, আল মাসুন জীবন, জাফর ফেরদৌস, জসিম সরকার, এম কে আলম, শেখ সোহেব সাজ্জাদ, নাসির শিকদার প্রমুখ। উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও ইংরেজী নতুন বছরের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে আসরের সমাপ্তি টানেন পরিচালক মোশাররফ হোসেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App