×

জাতীয়

পার্থক্য গড়ে দিতে পারে সংখ্যালঘু ও চা শ্রমিকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০১:২৩ পিএম

পার্থক্য গড়ে দিতে পারে সংখ্যালঘু ও চা শ্রমিকরা
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের হিসাব-নিকাশ। অন্যান্য আসনের মতো সিলেট-১ আসনেও ভোটারদের আগ্রহ ধানের শীষ আর নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে ঘিরে। এ আসনে মহাজোট মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন। আর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তার প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপি জোটের খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। দুজনই ভোটারদের কাছে গিয়েছেন, নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। পিছিয়ে ছিলেন না ছোট দলের প্রার্থীরাও। তারাও প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন সাধ্যমতো। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিকে ধরা হয় ক্ষমতার ‘নির্ণায়ক’ হিসেবে। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে যে দল জিতেছে পরবর্তীতে তারাই সরকার গঠন করেছে। তাই এ আসনে জয় নিয়ে নানা ছক কষছে নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারী বড় জোটগুলো। সিলেট-১ আসন মূলত সিলেট মহানগরী ও সিলেট সদর উপজেলাকে নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩০ জন। যার মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার সংখ্যালঘু ভোটার। যার ২৫ থেকে ৩০ হাজার চা শ্রমিক। ভোটের ফলাফল নির্ধারণে এই ভোটাররা বিরাট ভ‚মিকা রাখতে পারেন বলে মনে করেন নির্বাচনের প্রার্থী ও বিশিষ্টজনরা। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সিলেট জেলা সমন্বয়ক আবু জাফর বলেন, সংখ্যালঘু ও চা শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় আশি হাজার ভোটার। বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে এ ভোটগুলো যে পক্ষেই গেছে তারা ভোটের মাঠে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে গেছেন। এবারের নির্বাচনে এটা বিরাট প্রভাব রাখবে বলে আমি মনে করি। দীর্ঘদিন চা শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা এ নেতা বলেন, আগে দেখা যেত এই ভোটারদের ভোট নির্দিষ্ট একটা পক্ষে যাচ্ছে। কিন্তু এখন আর সেই পরিবেশ নেই। এখন এরা তাদের অধিকার নিয়ে সচেতন। তাই তারাও যাচাইবাছাই করে ভোট দেবেন। এক্ষেত্রে কোনো দলই হলফ করে বলতে পারবে না সব সংখ্যালঘু ভোটই তাদের। এদিকে ভোটের প্রচারণায় বেশিরভাগ প্রার্থীই সংখ্যালঘু ও চা শ্রমিকদের কাছে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছেন। সিলেট-১ আসনে মহাজোট প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন বেশ কয়েকবার চা শ্রমিক ও নগরীর সংখ্যালঘু ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। তিনি ও তার দলের প্রত্যাশা এই ভোটারদের ভোট তাদের বাক্সেই পড়বে। বর্তমান সরকার আমলেই চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারিভাবে তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও তাদের অধিকার রক্ষায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। যে কারণে ভোটের মাঠে তাদের সমর্থন আদায় করে নেয়াটা অনেকটাই সহজ বলে মনে করেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের আমলে সংখ্যালঘু ও চা শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণে প্রচুর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু চা শ্রমিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা তাদের শিক্ষা, বাসস্থান, ও চিকিৎসেবা নিশ্চিতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। এমতাবস্থায় আমরা মনে করি, তারা দেশের উন্নয়নের স্বার্থে, নিজেদের অধিকারের স্বার্থে নৌকাকেই বেছে নেবেন। এদিকে সংখ্যালঘু চা শ্রমিকদের নিজের দিকে টানতে কম চেষ্টা চালাননি বিএনপি প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরও। বেশ কয়েকবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। ভোটে জিতলে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করবেন, চা শ্রমিকদের ভ‚মি অধিকার বাস্তবায়নসহ বেশ কিছু লোভনীয় প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। সিলেট জেলা বিএনপি সভাপতি আবুল কাহের শামীম বলেন, আমরা সকল নাগরিকের সমান সুযোগ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই আন্দোলন করছি। তাই এ নির্বাচনে অধিকারবঞ্চিতরা আমাদের সমর্থন করবেন বলেই বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু ও চা শ্রমিক আলাদা নয়, সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, সবারই অধিকার সমান। বর্তমান বাংলাদেশে কারোরই নিরাপত্তা নেই, বাকস্বাধীনতা নেই। বিএনপি নির্বাচিত হলে, সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। সিলেটে চা শ্রমিকদের নেতা রাজু গোয়ালা বলেন, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের চা শ্রমিকদের একটা প্রতীকের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে। আমাদের ভোটাধিকার, শিক্ষা, চিকিৎসা, মজুরি বৃদ্ধিসহ বেশকিছু সুবিধা আমরা এই সরকারের কাছ থেকে পেয়েছি। তাই নৌকার দিকে যে আমাদের ঝোঁক আছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে আমরা এখনো অনেক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এক্ষেত্রে যদি কেউ আমাদের সমঅধিকার বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেয়, তবে কিছু ভোট যে অন্যদিকে পড়বে না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেশ কয়েকবার এলেও বিএনপির প্রার্থী তাদের কাছে আসেনি বলে জানান এই নেতা। বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন কুমার দে জানান, সিলেটের সংখ্যালঘু ভোটাররা এখন নিজেদের অধিকার নিয়ে অনেক সচেতন। আগের মতো দল বেধে একটি প্রতীকে ভোট দেবেন বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, বিগত সরকারগুলো মুখে অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে আমরা অনেক কিছুরই প্রতিফলন দেখতে পাইনি। এখনো ভোট এলে সংখ্যালঘুদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করে। তাই আমাদের অধিকার বাস্তবায়নে যারা কাজ করবেন আমরা তাদেরই ভোট দেব। তবে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি যাই হোক ভোটের মাঠে সংখ্যালঘু ও চা শ্রমিকদের ভোট যেদিকে ঝুঁকবে তার পাল্লা কিছুটা হলেও ভারী হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App