×

বিনোদন

বাতিঘরের নাটক ‘রেডক্লিফ লাইন’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:৪৮ পিএম

বাতিঘরের নাটক ‘রেডক্লিফ লাইন’
জাতীয় নাট্যশালার টিকেট কাউন্টারে গিয়ে কিছুটা চমকে যেতে হলো। বর্ডার গার্ডের পোশাক পরিহিত দুজন টিকেট বিক্রি করছেন। টিকেট কিনতে গিয়েই বোঝা গেল, এই নাটক আমাদের সীমান্তবর্তী কোনো এলাকায় নিয়ে যাবে। স্টুডিও থিয়েটার হলের সামনে গিয়ে দেখা গেল একই রকম পোশাক পরিহিত আরো একজনকে। তখন মনে হলো আমরা চলে এসেছি সীমান্তবর্তী কোনো এলাকায়। বলছি বাতিঘর প্রযোজনা ‘রেডক্লিফ লাইন’ নাটকের কথা। গত ১৬ ডিসেম্বর নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে নাটকটির দুটি প্রদর্শনী হয়। রাত ৮টায় নাটক শুরুর আগে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখা গেল মিলনায়তন প্রায় দর্শক পূর্ণ। মঞ্চে কাঁটাতারের বেড়া দেখে বুঝতে কারো সমস্যা হবে না এটা কোনো দেশের বর্ডার লাইন। ‘রেডক্লিফ লাইন’ নাটকের সঙ্গে এই কাঁটাতারের বেড়ার সম্পর্ক কী? একটু ইতিহাসে চোখ বুলিয়ে নিলে বুঝতে অসুবিধা হবে না। ভারতবর্ষ ভাগ করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন ব্রিটিশ কর্মকর্তা রেডক্লিফ। তিনি একই ভ‚খণ্ডের মানুষের মাঝে সীমান্ত দেয়ালের দাগ কেটে দিয়েছিলেন। ‘রেডক্লিফ লাইন’ মূলত ভারতবর্ষের কাঁটাতারের দেয়ালকে ঘিরে গল্প। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ‘নো-ম্যানস’ ল্যান্ডই এই নাটকের পটভূমি। নাটক শুরুর ঘণ্টা বেজে উঠলো, উঁচু একটা জায়গায় দুজন সীমান্তরক্ষী কথা বলছে, তাদের ভাষা শুনে বোঝা গেল তারা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী। এদেরই একজন সীমান্তে হঠাৎ একটা গরুকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে। অপরজন বলছে, যে করেই হোক সেই গরুটিকে ফিরিয়ে আনতে হবে। হুকুম পালন করার জন্য ভারতীয় সৈন্যটি গরু খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। হাঁটতে হাঁটতে ভারতীয় সৈন্যটি ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ চলে আসে। সেখানে এসে দেখে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীর পোশাক পরিহিত একজন তারই মতো গরুটিকে খুঁজছে। ‘নো-ম্যানস ল্যান্ড’ এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী ও বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী একে অপরকে দেখে লুকিয়ে পড়ে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশিকে দেখে গুপ্তচর ভেবে বসে। তারপর শুরু হয় দুজনের আড়ালে থেকে তর্ক এবং নানা রকম বাকবিতণ্ডা। তাদের তর্কের মধ্য দিয়ে উঠে আসে বাংলাদেশ-ভারতের ইতিহাসের নানা অধ্যায় এবং সাম্প্রতিক নানা বিষয়। দুই দেশের দুই সীমান্ত প্রহরীর তর্কের মধ্য দিয়ে উঠে আসে তারা আসলে একই ভূ-খন্ডের বাস করা মানুষ। যাদের আবেগ-অনুভ‚তি-ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি মূলত এক। কিন্তু কাঁটাতারের সীমান্ত রেখা তাদের ভাগ করে দিয়েছে। দুই সীমান্তরক্ষী যখন নাটকের শেষ প্রান্তে এসে বন্ধুত্বের আলিঙ্গন করতে চায়, তখনই বুলেটে বিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে তাদের দেহ। এমনই বিয়োগান্তক এক দৃশ্যে শেষ হয় নাটকটি। দর্শকের চোখ তখন পানিতে টলমল। নাটক শেষ হওয়ার পরও কয়েক মিনিট পুরো মিলনায়তন জুড়ে পিনপতন নীরবতা। এমন দৃশ্য দেখে বলার অবকাশ রাখে না যে ‘রেডক্লিফ লাইন’ নাটকটি দর্শকের হৃদয় ছুঁয়েছে। এই নাটকটির শিল্পীদের বাচ্যিক অভিনয়ের আলাদা করে প্রশংসা করতেই হবে। তবে নাটকের কোনো কোনো ক্ষেত্রে সঙ্গীতের অতি ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। দর্শক সারির সামনে সীমান্তের কাঁটাতার না দিলেও চলতো, মঞ্চের কাঁটাতারের মধ্য দিয়েই বোঝা যায় এটা সীমান্ত এলাকা। নির্দেশক বিশেষ কোনো চমকের মাঝে নাটকটির গল্পটিকে হারিয়ে যেতে দেননি। বরং গল্পটিকে সহজ ছন্দে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করেছেন। সব মিলিয়ে ‘রেডক্লিফ লাইন’ দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবার মতো নাটক। একই সঙ্গে সীমান্তের কাঁটাতারের এই বিভাজনের বিরুদ্ধে এক জোড়ালো প্রতিবাদ। ‘রেডক্লিফ লাইন’ নাটকের রচয়িতা ও নির্দেশক মুক্তনীল। নাটকটিতে নিয়মিত অভিনয় করেছেন শিশির সরকার, ফয়সাল মাহমুদ, সঞ্জয় হালদার, মনিরুজ্জামান ফিরোজ, সাফিন আহমেদ অশ্রু, খালিদ হাসান রুমি, স্মরণ বিশ্বাস ও মুক্তনীল। আলোক পরিকল্পনা করেছেন তানজিল আহমেদ, মঞ্চ পরিকল্পনা : খালিদ হাসান রুমি, পোশাক পরিকল্পনা : সায়মা করিম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App