×

জাতীয়

জাপার ডিজিটাল প্রচারণা শুরুই হয়নি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:০০ পিএম

জাপার ডিজিটাল প্রচারণা শুরুই হয়নি
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অত্যাধুনিক তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ‘মেগাপ্রকল্প’ হাতে নিয়েছিল জাতীয় পার্টি (জাপা)। টার্গেট করা হয়েছিল নতুন প্রজন্মের প্রায় চার কোটি ভোটারকে। যাদের কাছে ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অ্যাপসভিত্তিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হবে এরশাদের বার্তা। সেই সঙ্গে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় নবীন-প্রবীণ সব ভোটারের কাছেও পার্টির নির্বাচনী অঙ্গীকার পৌঁছে দেয়া হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশে প্রথমবারের মতো এই অভিনব ডিজিটাল প্রচারণার মাধ্যমে ভোটারদের পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও চমকে দেয়ার কথা ছিল। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কয়েকশ নেতাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পর কোটি টাকা ব্যয়ে রূপকল্পও উপস্থাপন করা হয়। তবে ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেড়ো’র মতোই শেষ অবধি মাঠেই গড়ায়নি জাপার চোখ ধাঁধানো উদ্বোধনের সেই ডিজিটাল প্রচারণা। নির্বাচনী মাঠে নবীন বা প্রবীণ ভোটারদের জন্য শেষ অবধি পার্টির কোনো বার্তাই পৌঁছানো হয়নি। এ নিয়ে পার্টির ভেতরে বাইরে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ ঘটনার মাধ্যমে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ কারো কারো। তাদের সেই অভিযোগের তীর প্রকল্পের একমাত্র উদ্যোক্তা এরশাদের তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মুনিরের দিকে। যিনি পার্টিতে যোগ দিয়েই অবিশ্বাস্যভাবে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের উপদেষ্টার মতো বড় পদ লাভ করেন। শুধু তাই নয়, টাঙ্গাইল-৫ আসনে প্রার্থী হওয়ার সৌভাগ্যের অধিকারীও হয়েছেন। এরশাদের এই উপদেষ্টা বর্তমানে নিজ আসনে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। সূত্রমতে, ডিজিটাল প্রচারণার কলাকৌশল সম্পর্কে নেতাকর্মীদের প্রাথমিক ধারণা দিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানের ইমানুয়েলস মিলনায়তনে প্রথম কর্মশালার আয়োজন করেন এরশাদের তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা। সেখানে তিনি শীর্ষ নেতাদের সামনে উন্নত বিশ্বের আদলে নির্বাচনী প্রচারণার পুরো ব্যবস্থাপনা উপস্থাপন করেন। মুগ্ধ পার্টিপ্রধানের ব্যাপক আগ্রহে এর দুদিন পরেই ১৮ সেপ্টেম্বর চোখ ধাঁধানো শোডাউনের মাধ্যমে ‘পল্লীবন্ধুর হাত ধরে আরেকবার’ স্লোগানে রাজধানীর বসুন্ধরায় (এক্সপো জোন) ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে শুরু হয় দুদিনব্যাপী নির্বাচনী রূপকল্পবিষয়ক পর্যালোচনা অনুষ্ঠান। আয়োজনে মুগ্ধ তৎকালীন মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার পার্টির শাসনামলের ঐতিহ্য তুলে ধরতে গতানুগতিক নির্বাচনী প্রচারণার ধারা থেকে বের হয়ে ব্যতিক্রমী ও যুগোপযোগী ক্যাম্পেইন শুরুর তাগিদ দেন। পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও নির্বাচনী প্রচারণায় আধুনিক ব্যবস্থাপনা সৃষ্টির মাধ্যমে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করার কথা বলেন। যার মাধ্যমে দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে অতি সহজে এরশাদের আহবান পৌঁছে দেয়ার ওপর জোর দেন। এমনকি এরশাদও আবেগে আপ্লুত হয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন, পার্টিকে নির্বাচনে জয়লাভ করতে ও আধুনিক এবং প্রযুক্তিমনস্ক রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রমাণ করতে আমরা সক্ষম হবো। এর এক মাস পর গত ২৭ অক্টোবর বনানী কার্যালয়ে ডিজিটাল নির্বাচনী প্রচারণার উদ্বোধন করে এরশাদ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পার্টির অতীতের উন্নয়ন ও আগামীর পরিকল্পনার বার্তা কোটি কোটি ভোটারের কাছে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশনা দেন। ঐদিন পার্টিপ্রধানের সামনে তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মনির জানিয়েছিলেন, ডিজিটাল প্রচারণা টিমে ৪০ জন আইটি বিশেষজ্ঞ থাকবে। যারা প্রতিদিন তিন শিফটে ভাগ হয়ে ২৪ ঘণ্টা ধরেই প্রচারণা কার্যক্রমে সক্রিয় থাকবেন। প্রতিদিন চার কোটি ভোটারের কাছে পার্টি ও এরশাদের বার্তা তুলে ধরবেন। সে সময় ডিজিটাল ডিভাইস ও বিভিন্ন নির্বাচনী কনন্টেন্ট গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে তুলে ধরে তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা আরো জানিয়েছিলেন, প্রতিদিন সকালে ভোটারদের মোবাইল ফোনে যাবে এরশাদের সরাসরি কল। তিনি ভোটারদের শুভেচ্ছা জানাবেন, কুশল বিনিময় করবেন। এরশাদ নতুন এক রাজনীতির সূচনা করবেন বলেও জানিয়ে দেন। তবে বিশাল এই আয়োজন আর আশ্বাসের পর কেটে গেছে প্রায় দুই মাস। সামনে ভোটের আর মাত্র ছয়দিন। তবে এখন অবধি এরশাদের কোনো ফোন কলই যায়নি ভোটারদের কাছে। ডিজিটাল প্রচারণার কোনো আলামতও দেখতে পাননি নবীন-প্রবীণ ভোটাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, বিশাল শোডাউনের মাধ্যমে যেভাবে ডিজিটাল প্রচারণার ঢাকঢোল পিটানো হয়েছিল তার একভাগও চোখে পড়েনি। কোটি টাকার এ প্রকল্প মাঠে মারা গেছে। কেন বাস্তবায়ন হয়নি, কে এজন্য দায়ী এটা একমাত্র চেয়ারম্যান আর তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা ছাড়া কেউই বলতে পারবেন না। ওই নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সে সময় শতাধিক নেতাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে একশজনকে স্মার্ট ফোনের কথা বলে সাড়ে চারশ টাকার ফোন হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। যা দিয়ে ইন্টারনেট চালানো তো দূরের কথা, ছবিও তোলা যায় না। জানতে চাইলে ফেসবুকে লাঙ্গল প্রতীকের প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান ভোরের কাগজকে বলেন, ডিজিটাল প্রচারণা সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানা নেই। তবে সার্বক্ষণিক প্রচারণার জন্য সারা দেশে পার্টির ২০-২৫টি ফেসবুক পেজ চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ও প্রার্থীদের প্রচারণার ছবিই শুধু শেয়ার দেয়া হচ্ছে। নবীন-প্রবীণ ভোটারদের কাছে কোনো বার্তা পৌঁছে দেয়ার সুযোগ নেই। রাজ্জাক খানের অভিযোগ, ডিজিটাল প্রচারণার জন্য এসব পেজ চালু করতে বিলম্ব হয়েছে। সে কারণে ফেসবুকের এ প্রচারণা পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। একই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক খোরশেদ আলম খুশু বলেন, স্যারের বয়স হয়ে গেছে। তিনি খুব সহজ সরল মানুষ। সবাইকে বিশ্বাস করেন। এ সুযোগে অনেকেই স্যারকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সুযোগ সুবিধা আদায় করে নেয়। জানতে চাইলে এরশাদের তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মুনির নিজেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অন্যকোনো দল হলে এমন প্রকল্পকে লুফে নিত। আমি সবই করে দিয়েছি কিন্তু জাতীয় পার্টিই এর বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তিনি মনে করেন, এরশাদ সুস্থ থাকলে সবই স্বাভাবিক থাকত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App