×

জাতীয়

আওয়াজ বেশি নৌকার ধানের শীষ নীরবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৪২ এএম

আওয়াজ বেশি নৌকার ধানের শীষ নীরবে
ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লার সঙ্গে নির্বাচনে লড়ছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ নবী। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে এ এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকা মার্কার সমর্থনে প্রতিদিন সকাল-বিকেল মিছিল-মিটিং করছেন। প্রতিনিয়ত মাইকে ভেসে আসছে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনার শব্দ। নৌকার প্রার্থীও চষে বেড়াচ্ছেন প্রতিটি অলিগলি। তবে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে বিএনপির প্রচারে। শুধু বিএনপির প্রার্থী যেখানে যাচ্ছেন, সেখানেই ধানের শীষের প্রচারণা চলছে। বাকি নির্বাচনী এলাকায় নীরবে চলছে ধানের শীষের প্রচারণা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮, ৪৯ ও ৫০নং ওয়ার্ড এবং ডেমরা, দনিয়া, মাতুয়াইল ও সারুলিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান মোল্লার প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির প্রার্থী নবীউল্লাহ নবী। এ আসনে আরো ৮ জন প্রার্থী থাকলেও তাদের মধ্যে হাতপাখা নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আলতাফ হোসেন ছাড়া বাকিদের কোনো তৎপরতা নেই। সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় মাতুয়াইলের আমান সিটি এলাকায় নৌকার পোস্টার লাগাচ্ছিলেন কয়েক জন। প্রচার কেমন চলছে, জিজ্ঞাসা করতেই রাসেল নামের একজন জানালেন, প্রতিটি অলিগলিতে পোস্টার সাঁটানো ছাড়াও মাইকিং করা হচ্ছে, পথসভা করা হচ্ছে, বাড়ি বাড়ি লিফলেট, হ্যান্ডবিল পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। নৌকা প্রতীকে কেন ভোট দেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকার পাশে হলেও এ আসনের অধিকাংশ এলাকা ছিল অবহেলিত। রাস্তা ছিল না বললেই হয়। এখন সব জায়গায় পাকা রাস্তা হয়েছে। বিদ্যুৎ আছে। প্রচুর লোক এ এলাকায় থাকে। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বাড়ির মালিকরা এখন বেশি টাকায় বাসা ভাড়া দিতে পারছেন। আসনটিতে ক্ষমতাসীন দলের হাবিবুর রহমান মোল্লার প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির নবীউল্লাহ নবীর পক্ষে পোস্টার, মাইকিং বা নির্বাচনী ক্যাম্প তেমন একটা চোখে পড়ে না। তবে প্রার্থী নিজে তার অনুসারীদের নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ করছেন। তিনি ও তার সমর্থকরা বিতরণ করছেন লিফলেট। আসনের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি অলিগলিতে নৌকা প্রতীকের পোস্টার টাঙানো আছে। সাদাকালো ব্যানার টাঙানো দেখা গেছে বিভিন্ন স্থানে। মাতুয়াইলে ছোট একটি বাজারে চায়ের দোকানে কথা হলো স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দার সঙ্গে। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা কেমন চলছে, জিজ্ঞাসা করতেই একজন বললেন, নির্বাচন হবে তো? ভোটাররা নিরাপদে কেন্দ্রে যেতে পারবে তো? বিএনপির প্রচার চোখে পড়ছে না কেন? জানতে চাইলে ফোরকান নামে স্থানীয় একজন বলেন, বিএনপির সমর্থকরা প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামছে না। তবে গোপনে প্রচার চালাচ্ছে। পোস্টারের পরিবর্তে লিফলেট ও হ্যান্ডবিল দেয়া হচ্ছে বাড়ি বাড়ি। তবে ধানের শীষের প্রার্থী প্রতিদিন মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ করছেন। বিএনপির পক্ষে কী বলে ভোট চাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা বলছে খালেদা জিয়া জেলে। নেতাকর্মীরাও বন্দি। ভোট দিলে তাদের মুক্তি মিলবে। এ ছাড়া উন্নয়নের পেছনে ক্ষমতাসীনরা ব্যাপক দুর্নীতি করেছে বলেও অভিযোগ করছে তারা। কথা হয় এ এলাকার বিএনপির প্রার্থী নবী উল্লাহ নবীর সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, কোথাও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। আমাদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে অতিউৎসাহী কিছু পুলিশ। তারা চায়, আমরা মাঠ থেকে বিদায় হয়ে যাই। তারা সরকারের নির্দেশে এ কাজ করছে। আমরা দিনে পোস্টার লাগাই, রাতে আওয়ামী লীগের লোকজন সেগুলো খুলে নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে পুলিশও গাড়ি নিয়ে আসে। সব নিয়ে চলে যায়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান মোল্লা বলেন, আমরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। তাদের বলছি, আমি কী করেছি এলাকার জন্য। পথসভা করছি, পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট বিতরণ করছি। আপনার ১০ বছরে এলাকায় কী কী হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে রাস্তাঘাট ভাঙা ছিল। ব্যাপক জলাবদ্ধতা ছিল। এসব সমস্যা দূর হয়েছে। মসজিদ-মন্দিরে অনুদান দিয়েছি। আরো নানা ধরনের উন্নয়ন কাজ করেছি। হাবিবুর রহমান মোল্লা ১৯৯৬, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে এ আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন। হেরেছেন কেবল ২০০১ সালে। সর্বশেষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে ২০০৮ সালে তিনি বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদকে ৫৩ হাজার ১৩৮ ভোটে হারিয়েছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া প্রত্যেকবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বিএনপির সালাহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। কিন্তু এবার সালাহ উদ্দিন আহমেদ নির্বাচন করছেন পার্শবর্তী ঢাকা-৪ আসন থেকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App