×

মুক্তচিন্তা

নির্বাচনে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির গুরুত্ব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:০০ পিএম

বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিশ্বপরাশক্তির দেশগুলোসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশের কাছে একান্তভাবেই কাম্য। আমাদের পাশেই রয়েছে দুটি বৃহৎ এবং শক্তিশালী রাষ্ট্র চীন এবং ভারত।

এদিকে ভারতের দ্বারা আমাদের দেশ বাংলাদেশ এর চারদিকের তিন দিক থেকেই পরিবেষ্টিত। চীনের সঙ্গে কোনো প্রকার সীমান্ত না থাকলেও চীন আমাদের খুবই নিকটবর্তী। চীন এখন থেকে কয়েক দশক আগেও বহির্বিশ্ব তথা আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাত না। তারা অভ্যন্তরীণভাবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থনৈতিক শক্তি অর্জনের দিকে মনোনিবেশ করে।

কিন্তু কালের প্রবাহে আজ চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি। সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের পরেই বিশ্বে তাদের অবস্থান। সামরিক দিক থেকেও চীন যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই তারা এখন বৈশ্বিক রাজনীতিতে পদচারণ শুরু করেছে। যার প্রাথমিক পদক্ষেপই শুরু হয়েছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপকে নিয়ে।

এই দেশগুলো স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকেই ভারত এসব দেশের ওপর স্বীয় রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রাধান্য বিস্তার করে আসছিল। ভারতের ইচ্ছায় এবং হস্তক্ষেপে এই দেশগুলোতে অনেক ঘটনা ঘটেছে।

যা ইন্ডিয়ান ডকটিন নামে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। ভারতের পাশাপাশি এই দেশগুলোতে চীনেরও পদচারণ বেড়েছে। চলছে ভারত চীন আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। এই লড়াইয়ে চীন ভারত থেকে অনেকটাই এগিয়ে। কারণ তারা অর্থনৈতিকভাবে ভারতের তুলনায় অধিক শক্তিশালী। স্বভাবতই বাংলাদেশ, চীন ও ভারতের এই প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগীর বাইরে নয়।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স মার্কেটসহ অর্থনৈতিক বাণিজ্য প্রায় সবটাই চীনের দখলে। বিপরীতে খাদ্যদ্রব্য এবং মসল্লার মার্কেট ভারতের দখলে। কিন্তু অর্থনৈতিক প্রভাব চীনের বেশি থাকলেও এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব বেশি বলে প্রতীয়মান হয়। কারণ ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে বাংলাদেশ ভারতের একদম ভিতরে অবস্থিত।

বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের প্রধান গুরুত্ব হলো, বাংলাদেশের পূর্ব দিকেই ভারতের সাতটি রাজ্য অবস্থিত। এই রাজ্যগুলো সেভেন সিস্টার নামে পরিচিত। এই রাজ্যগুলো বাংলাদেশের উত্তর সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত ‘চুঙ্গিভ্যালি’ নামক একটি অত্যন্ত সংকীর্ণ এবং অপ্রশস্ত করিডোর দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। আবার এই প্রদেশগুলোর সঙ্গেই রয়েছে চীনের সুবিশাল সীমান্ত যা ভারতের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়।

এ ছাড়াও এই রাজ্যগুলো ভারত থেকে মুক্ত হতে চায় গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে। এই গেরিলা যোদ্ধাদের ভারত সরকার বিচ্ছিন্নতাবদী হিসেবে পরিগণিত করে। কিন্তু সেই বিচ্ছিন্নতা বাদীদেরই অস্ত্র এবং ট্রেনিং দিয়ে সহযোগিতা করতে শুরু করে ভারতের শত্রু রাষ্ট্রগুলো। ভারত সরকার নিকট-অতীতে এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সফলতার সঙ্গে দমন করে।

আসাম রাজ্যে যখন এ ধরনের অস্থিরতা কাজ করছিল তখন বাংলাদেশে রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিল বিএনপি সরকার। আর ঠিক ওই সময়ই আমাদের চট্টগ্রাম পোর্টে ধরা পড়ে দশ ট্রাক অস্ত্র। স্বভাবতই ভারত সরকার ধরে নেয় যে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশের বিএনপি জামায়াত সরকার এই অস্ত্রগুলো আসামে পাচার হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছিল।

যা ছিল সব বাংলাদেশের জন্য তথা বিএনপি জামায়াত সরকারের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তাই তৎকালীন বিএনপি এবং জামায়াত দল ভারত সরকারের রোষানলে পড়ে যায়।

অনেকেরই ধারণা বিএনপি-জামায়াত ভারতের সঙ্গে সেই পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি। আমাদের দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল হলো আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। জনগণের তথা আমজনতার ধারণা যে, আওয়ামী লীগ ভারতপন্থি এবং বিএনপি চীনপন্থি। কাজেই আগামী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ভোট প্রদান করার সময় ভোটারদের যথাযথভাবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ আগামীতে যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়েই তাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।

লেখক, ঢাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App