×

জাতীয়

ঘরে ঘরে বিজলি বাতির চমক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:০১ পিএম

ঘরে ঘরে বিজলি বাতির চমক
হাওর পাড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম মজুমধারী। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ঘেঁষা সুনামগঞ্জ জেলার এই ছোট্ট গ্রামটির সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক গ্রামের মতোই এই গ্রামটিও ছিল বিদ্যুৎবিহীন, আলোহীন। গত ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নতুন উপহার হিসেবে ‘বিদ্যুৎ’ পান গ্রামবাসী। শুধু মজুমধারীই নয়, সারা দেশেই এখন বিজলি বাতির চমক। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালানোটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশের প্রায় ৯২ ভাগ মানুষই ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ পেয়ে গেছেন। টার্গেট ২০২১। এর মধ্যেই শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে সরকার। মূলত, এক যুগ আগে বিদ্যুৎ সুবিধাবঞ্চিত ছিল দেশের মাত্র ৬৫ ভাগ পরিবার। ৩৫ শতাংশ পরিবার তখন বিদ্যুতের আওতাধীন থাকলেও ছিল লোডশেডিংয়ের ভয়াবহ যন্ত্রণা। আওয়ামী লীগ সরকারের এক দশকে বদলে গেছে বিদ্যুতের মাঝে মাঝে আসার কানামাছি খেলা। সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৫৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নজিরবিহীন রেকর্ড করেছে সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। সরকারের ১০ বছরে ৩৫ লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০৭ কিলোওয়াটে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৮ হাজার ৭৫৩ মেগাওয়াট। ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। প্রত্যেক ঘরে থাকবে বিদ্যুতের ঝলমলে আলো। আর ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা সামাল দিতে প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার আরো ৬৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে আরো ১৫ হাজার ৯৬৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে ২০টি কেন্দ্র থেকে আসবে ৭ হাজার ৮৫৭ মেগাওয়াট। আর বেসরকারি খাতের ৪৩টি উৎপাদন কেন্দ্র থেকে আসবে আরো ৮ হাজার ১১০ মেগাওয়াট। গত ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের অগ্রগতি বিষয়ে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা নিয়ে এক কর্মশালায় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, দেশের ৯২ ভাগ লোক বিদ্যুৎ পাচ্ছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান ভবিষ্যৎ অগ্রগতিতে কীভাবে আরো ভ‚মিকা রাখতে পারবে এসব বিষয়ে কাজ চলছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সরকার ২০০৯ সাল থেকেই ২০৩০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় এবং মাস্টার প্ল্যান ২০১০ অনুমোদন করে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান ২০১০ (পিএসএমপি) অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা সামাল দিতে প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার আরো ৬৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে আরো ১৫ হাজার ৯৬৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে ২০টি কেন্দ্র থেকে আসবে ৭ হাজার ৮৫৭ মেগাওয়াট। আর বেসরকারি খাতের ৪৩টি উৎপাদন কেন্দ্র থেকে আসবে আরো ৮ হাজার ১১০ মেগাওয়াট। জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ভোরের কাগজকে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৯ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে ৬৯৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। পাশাপাশি ২০২০ সাল থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ কেনারও পরিকল্পনা রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড : গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ পরিমাণ ১১ হাজার ৫৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী জানান, দেশে এ পর্যন্ত এটিই সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন। এর আগে ১৮ জুলাই সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৩৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছিল। এ ছাড়া এ বছরের ৭ জুলাই দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রথমবারের মতো ১১ হাজার মেগাওয়াটের মাইলফলক অতিক্রম করে। এ দিন ১১ হাজার ৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছিল। পরে ১১ জুলাই ১১ হাজার ২১০ মেগাওয়াট ও ১৪ জুলাই ১১ হাজার ৩০৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App