×

মুক্তচিন্তা

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে ঔদাসীন্য কেন?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:১৩ পিএম

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ম্যুরালসহ কিছু স্থাপনা নির্মিত হলেও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানটি বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিশেষ ঘটনার স্থানগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণের জন্য আদালত থেকে নির্দেশনা দেয়া হলেও ৮ বছরেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের গৌরবের স্মারকচিহ্ন সংরক্ষণে আমাদের এই ব্যর্থতা এবং অবহেলা অমার্জনীয়।

বাঙালি জাতির জীবনের ভয়াবহ কষ্ট, বর্বর পাকিস্তানি হানাদার দখলদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার এবং তার ভয়াবহ তাণ্ডবলীলায় অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর আসে কাক্সিক্ষত বিজয়। ওই দিন সকালে মিত্রবাহিনীর আহ্বানে নিয়াজি আত্মসমর্পণের ইচ্ছা করলে মিত্রশক্তি ঢাকা প্রবেশ করে।

পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের দলিল এবং সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হয়। বিকেল ৪টার সময় ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান ও ভারত-বাংলাদেশ যুগ্ম কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল করিম খোন্দকার এবং ভারতের অপরাপর সশস্ত্রবাহিনীর প্রতিনিধিরা ঢাকা অবতরণ করেন।

এর আধ ঘণ্টা পর তখনকার রেসকোর্স ময়দান অর্থাৎ বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল হর্ষোৎফুল্ল জনতার উপস্থিতিতে মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সমরাধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি বাংলাদেশে অবস্থিত সব পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই ঘটেছিল মুক্তিযুদ্ধের বেশক’টি মাইলফলক ঘটনা। এই উদ্যান থেকেই বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চে ‘যার যা কিছু আছে তা নিয়ে’ মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

আর যুদ্ধ শেষে শত্রু বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধজয়ের আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন হয় এই উদ্যানেই। এই বিশেষ স্থানগুলো চিহ্নিত করাসহ এ উদ্যানটিকে বিশেষভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া জাতীয় দায়িত্ব ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত দিকে নিয়ে যাওয়ার, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস ভুলিয়ে দেয়ার, গৌরবের স্মারক চিহ্নগুলো মুছে ফেলার অপচেষ্টা চলে দীর্ঘ সময়।

এ অপচেষ্টারই অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেয়া, এমনকি উদ্যানের একাংশ নিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির নামে শিশু পার্ক নির্মাণ। পটপরিবর্তন ঘটে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় আসার পর। ঐতিহাসিক উদ্যানটি সংরক্ষণে বেশকিছু পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এর কিছু বাস্তবায়িত হয়েছেও। তবে এ কাজে গতি আশানুরূপ বলা যাচ্ছে না।

২০১০ সালের ৮ জুলাই হাইকোর্ট মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিশেষ স্থানগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু এই আদেশ বাস্তবায়নে সরকারের অগ্রগতি খুবই কম। রায় বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হলে আদালতে পুনরায় নির্দেশনা চাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সে ধরনের কোনো আবেদনও করেনি সরকার। আমরা চাই, দ্রুততম সময়েই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সেখানে স্মৃতিস্মারক নির্মাণ করা হোক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App