×

মুক্তচিন্তা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:১২ পিএম

মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। আর এই মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে সাহায্য করেছিল। মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রেখে আমাদের একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছেন।

নিজেদের স্বকীয়তা রক্ষা, বৈষম্যের অবসান এবং নানা ধরনের সামাজিক অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্তির জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রকাঠামো প্রয়োজন, যার শাসন ও পরিচালনার ভার নিতে হবে তাদের নিজেদের হাতে, এ ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। সে কারণে বাঙালি জাতি তথা মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তান ভূখণ্ডের পূর্ব পাকিস্তান অংশ আলাদা হয় এবং সেখানে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয় হয়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশটির নাম দেয়া হয় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। স্বাধীনতার জন্য এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছিলেন। সম্ভ্রমহানি ঘটেছিল লাখো মা-বোনের। দেশান্তরী হয়ে প্রতিবেশী দেশে শরণার্থীর মানবেতর জীবনযাপন করেছিলেন প্রায় এক কোটি মানুষ। উদ্বাস্তু হয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। অসংখ্য মানুষ পঙ্গু হয়ে আজো মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তাদের বলিদানের ওপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে। যদি তাদের আদর্শে দেশপ্রেমের বীজ নিজেদের বুকে লালন করতে পারি, দেশকে এগিয়ে নিতে পারি সোনার বাংলা হিসেবে তবেই তাদের যথাযথ সম্মান জানানো হবে।

নয় মাস যুদ্ধের পর বিজয় অর্জিত হয় ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের এই দেশটাকে গড়ে তুলতে হবে। একাত্তরে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের আদর্শ আজ নতুন করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। সে আদর্শে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে। অনেককে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে ঠিক এর বিপরীত কাজ করে যাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লাখো শহীদের যে ত্যাগ, সেই ত্যাগের মহিমায় তরুণ প্রজন্মকে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে নিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্রয়োজন।

একাত্তরে বাঙালি অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই ভবিষ্যৎ প্রজন্মও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাময় বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে সক্ষম হবে। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমরা অনেকদূর এগিয়ে এসেছি। আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ২০২১ ও ২০৪১ রূপকল্প নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে ও আন্তর্জাতিকভাবে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেমে থাকেনি। উঁচু প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে।

গার্ডিয়ান পত্রিকা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, ২০৫০ সালে প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছিলেন যে, ‘সামাজিক অধিকাংশ সূচকে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে’। বিদ্যুৎ ও কৃষি খাতে সাফল্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা অসাধ্য সাধন করছেন। নতুন বছরে তাদের শ্রমে-ঘামে-স্বপ্নে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করবে ২০ বিলিয়ন ডলার। প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিরা নিয়মিত বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সমৃদ্ধ রাখছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সঠিক নেতৃত্বকে ক্ষমতায় আনতে হবে।

১৯৭১ সালে যে চেতনা ধারণ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তা আজো বাস্তবায়িত হয়নি। জনগণের আত্মমুক্তির আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আর এর জন্য দরকার ভোটারদের সচেতনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমরা প্রত্যাশা করি যে, তারা উপযুক্ত নেতৃত্বকেই নিজেদের ভোট প্রদান করবেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করতে হবে স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের নিয়ে।

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App