×

মুক্তচিন্তা

ড. কামালের খামোশ হুঙ্কার: স্তব্ধ স্মৃতিসৌধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:২৬ পিএম

একসঙ্গে দুটো ঘটনা দেখলাম মিডিয়ায়। প্রথমটি হামলার আগে। বাকিটা হামলার পরে। প্রথমটায় ড. কামাল হোসেন খুব উত্তেজিত। তিনি গিয়েছিলেন বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সেখানে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। এই সৌধ জাতির সবার। এরা আমাদের জাতির বীর ও পবিত্র সন্তান। যাদের রক্তধারায় শুদ্ধ হয়েছিল এই মাটি। রায়েরবাজার ঢাকা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। তখনকার এই নির্জন জায়গাটিকে বেছে নিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা।

ইতিহাস জানে রাও ফরমান আলীর পরিকল্পনায় বিদেশে পালিয়ে থাকা ঘাতক চৌধুরী মঈনুদ্দীনসহ দালালরা মিলে আমাদের সেরা সন্তানদের তালিকা করে তাদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল। ইসলামী ছাত্রসংঘের তখনকার নেতা ফাঁসিতে যাওয়া নিজামি ছিল এই বাহিনীর হোতা। তারা আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল। সে বাস্তবতা কাটিয়ে বাংলাদেশ আজ নিজের পায়ে দাঁড়ালেও ইতিহাসের এই ঘাতক দল মাঠ ছাড়েনি। নামে-বেনামে তাদের ষড়যন্ত্র চলছে।

স্মৃতিসৌধে যাওয়া সাংবাদিক মিডিয়া বা সাধারণ মানুষের মনে মনে যে ঘৃণা আর ক্রোধ তার বাইরে জামায়াত থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। এ কথা মানতে হবে পদ্মার পানিতে যেমন অনেক ঢেউ গড়িয়েছে তেমনি অনেক বিষয়ে দেশ ও জাতিতে ব্যাপক পরিবর্তনও এসেছে।

তার মানে এই নয় যে, আমাদের ইতিহাস বা অতীতের গর্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলা জায়েজ। এ দেশ পঁচাত্তর থেকে ছিয়ানব্বই পর্যন্ত নানাভাবে পাকি কায়দায় শাসিত হওয়ার কারণে একসময় মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল তারপরও তারা আবার গদিতে আসে আর হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চালু রাখে। কিন্তু ইতিহাস বা সময় ছেড়ে কথা বলেনি। তাই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়ে তাদের কাউকে কাউকে বিচারের মুখোমুখি করেছে। দিয়েছে চরম শাস্তি।

আমি বিশ্বাস করি এই কারণে শেখ হাসিনার প্রতি অন্ধ আক্রোশ আছে কিছু মানুষের। তার ব্যক্তিগত বিরোধী বা দলছুট নেতারা এর সুযোগ নিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। যার এখন পুরোভাগে আছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি ঐক্যফ্রন্টের হয়ে স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন ভালো কথা। যে তরুণ সাংবাদিক তাকে সহজ প্রশ্নটি করেছিল তার উত্তর কেন তিনি সহজভাবে দিতে পারলেন না? তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়া জামায়াত কি নির্বাচন করছে? করলে কি ভাবে? দেখলাম বয়সী কামাল হোসেন প্রচণ্ড রেগে গিয়ে সাংবাদিককে বলছেন, তাকে এ ধরনের প্রশ্ন করার জন্য কত টাকা দেয়া হয়েছে। এখানেই শেষ না। এত বড় একজন আইনজীবী দেশের সম্মানিত মানুষ একটি নিরীহ সাংবাদিককে বলছেন, নাম টুকে রাখলাম। দেখে নেব। খামোশ।

লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়। আইনজীবীদের শিরোমণি যদি এভাবে থ্রেট করে কথা বলেন মানুষ যাবে কোথায়? প্রশ্ন পছন্দ না হলে কিংবা আপত্তি থাকলে তিনি তা ভালোভাবেই জানাতে পারতেন। বলতে পারতেন আমি এর উত্তর দেব না। এই যে তিনি বললেন, শহীদ মিনারে এসেছ। শহীদদের সম্মান করো। এর মানে কি? শহীদদের তো তিনিই অপমান করলেন। তাদের রক্তপিপাসু ঘাতক দলের নাম শুনলেই রেগে যেতে হবে? একেই কি বলে, ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খাই না। কামাল হোসেন সাহেবরা ভালো জানেন তাদের আঁতাত কার সঙ্গে। বিএনপি ও জামায়াত যে একছত্রে একসূত্রে গাঁথা এটা তারা জানেন বলেই রেগে গেছেন। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে স্মৃতিসৌধকে বলছেন শহীদ মিনার। যে নেতা সৌধ আর মিনারের তফাৎ বোঝেন না তার কাছে শহীদের স্মৃতি কতটুকু নিরাপদ?

সামনে নির্বাচন। নির্বাচনের আগে কিসের জোরে কোনো বলে তারা এমন মারমুখী আচরণ করছেন? মানুষতো নির্বাচনের সময় নরম নেতাদের কোমল রূপ দেখতে অভ্যস্ত। তারা অন্য সময় রাগ করলেও এ সময় নরম থাকেন। ভোটের আশা থাকলে এমন আচরণ এমন উগ্রতা মানায় না। আমরা তাই ধরে নিতে পারি এর ভেতর কোনো কিছু রহস্য আছে। যা এখন বোঝা না গেলেও পরে টের পাওয়া যাবে। দেশের স্বাধীনতা সাতচল্লিশ বছরে দাঁড়ালেও দিকভ্রান্ত নেতাদের আচরণে এখনো বালখিল্যতা আর দেশপ্রেম নিয়ে সংশয় আছে।

এরপর দেখলাম ফেরার পথে তার গাড়িবহরে নাকি হামলা হয়েছে। আহত হয়েছেন আ স ম রবের ড্রাইভার। যারাই হামলা করুক বেচারি নিরীহ ড্রাইভারের জন্য মায়া লাগছে। স্বাভাবিকভাবেই এর দায় যাবে সরকারি দলের কাঁধে। তাদের অতিউৎসাহী ক্যাডাররা হামলা করলেও করতে পারে। যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

আবার রাজনীতির খেলায় নিজেরা হামলা করে সহানুভূতি কুড়ানোর চেষ্টাও বাদ দেয়া যাবে না। যেভাবেই হোক হামলা বাদ দিতে হবে। এর মাধ্যমে সবার অকল্যাণ আর নির্বাচনের বারোটা বাজানো ছাড়া কিছু নেই।

ড. কামাল হোসেনের আজকের আচরণে মর্মাহত হওয়ার পাশাপাশি মনে হলো সাধে কি শাস্ত্রে বলেছে চল্লিশের পর বানপ্রস্থে যাওয়ার কথা। কোন বয়সে ত্যাগ করতে হয় আর কোন বয়সে বাড়িতে থেকে সম্মান পেতে হয় সেটা ও গুলিয়ে ফেলেছে রাজনীতি। ড. কামাল হোসেনের বাচ্চা সাংবাদিককে দেখে নেয়ার আস্ফালনে স্তব্ধ স্মৃতিসৌধ কি ভাবছিল জানি না।

তবে শহীদের আত্মা নিশ্চয়ই মনে মনে বলছিল: এ জন্যই কি আমরা প্রাণ দিয়েছিলাম। যেমনটা গয়েশ্বর বলেছিল এক সভায়। শহীদরা নাকি বোকা মানুষ। না হলে তারা কেন চৌদ্দ ডিসেম্বর বাড়িতে বসেছিলেন। কেন তারা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বেতনে চলতেন? ধারণাটা এই সেসময় গয়েশ্বরের বাবার টাকা চালু ছিল দেশে। এই রাজনীতির উত্তরাধিকার বহন করতে হলে এমন অপ্রস্তুত হতেই হবে ড. কামাল হোসেন। বাকি চয়েস আপনার।

অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App