×

মুক্তচিন্তা

ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:২৬ পিএম

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম যেমন করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে গুরুত্ব দিচ্ছে তেমনি বিশ্ব তথ্যসংঘ সমাজ জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা বাংলাদেশের জনগণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার সংগ্রাম করছি বলেই প্রযুক্তি ও সভ্যতায় পিছিয়ে থাকতে পারি না। একাত্তরে রক্ত দিয়ে যে দেশটাকে আমরা গড়েছি সেই দেশটা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ হবে এটিই জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। আমরা সেই স্বপ্নেই মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্নপূরণে তার জীবন ও কর্মকে উৎসর্গ করে যাচ্ছেন।

মাত্র ক’দিন আগে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার এক দশক পালন করেছি। গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস পালিত হয়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে পালিত এই দিনটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা’।

২০১৭ সালে দিনটি জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দিবস হিসেবে পালিত হয়। ২৬ নভেম্বর ২০১৮ মন্ত্রিসভা দিনটির নাম পরিবর্তন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস হিসেবে অনুমোদন প্রদান করে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দিবসটির উদ্বোধন করেন। তার সঙ্গে আমি এবং স্থপতি ইয়াফেস ওসমানসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলাম।

দিনটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ এর ১১তম জন্মদিনে ১১টি ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্মাননা প্রদান। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, এইচটি ইমাম, সজীব ওয়াজেদ জয়, মোস্তাফা জব্বার, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, নূহ উল আলম লেনিন, বিটিআরসি, এটুআই, হাইটেক পার্ক, ডিএমপি ও ওয়ালটনকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।

ডিজিটাল বাংলাদেশের শেকড় রোপণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি দেশটিকে আইটিইউর সদস্যপদ গ্রহণ করান ১৯৭৩ সালে। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন তিনি বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রোপিত বীজ থেকে জন্ম নেয়া চারা গাছটির বিকাশ দেখি ১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি স্পষ্টতই বলেছেন যে, ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাটি পেয়েছেন তিনি তার পুত্র এবং তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে।

বস্তুত ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-১৮ সাল অবধি দেশটির ডিজিটাল রূপান্তরের স্থপতি হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্থপতি, নেতা এর সবটাই সজীব ওয়াজেদ জয়েরই।

এই দেশে মো. হানিফউদ্দিন মিয়ার হাত ধরে পরমাণু শক্তি কমিশনে উপমহাদেশের প্রথম কম্পিউটার আসে ১৯৬৪ সালে। এরপর আদমজী জুট মিল, হাবিব ব্যাংক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে গণনার কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করা ছাড়া সাধারণ মানুষের সঙ্গে এই প্রযুক্তির কোনো সম্পর্ক ছিল না। সেসব কম্পিউটার প্রধানত প্রোগ্রামাররাই ব্যবহার করতেন।

বাস্তবতা হলো ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত কোনো সরকার বিশ্বের নবীনতম এই প্রযুক্তির প্রতি সামান্যতম নজরও দেয়নি। বরং দুঃখজনক বিষয় হলো- ১৯৯২-৯৩ সালে বাংলাদেশকে বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবল লাইনে সংযুক্ত করার একটি সুযোগ হাতছাড়া করে বেগম জিয়া দেশটাকে ১৪ বছর পিছিয়ে দেন। ১৯৯২ সালের সাবমেরিন ক্যাবল আমরা পাই ২০০৬ সালে। বেসরকারি খাতে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে।

১৯৭৬ সালে অ্যাপল পিসি ও ১৯৮১ সালে আইবিএম পিসি এবং ১৯৮৪ সালে মেকিন্টোস সাধারণ মানুষের জন্য কম্পিউটারের জটিলতাকে সহজ করে দিলে বিশ্বব্যাপী কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়তে থাকে। তবে সেই ঢেউ তখন বাংলাদেশে লাগেনি। বস্তুত ১৯৮৭ সালে প্রথম কম্পিউটার দিয়ে বাংলা পত্রিকার প্রকাশ এবং মুদ্রণ ও প্রকাশনায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার একটি মাইলফলক ঘটনা। ১৬ মে ১৯৮৭ তে কম্পিউটার দিয়ে সাপ্তাহিক আনন্দপত্র প্রকাশের পথ ধরে বাংলাদেশে ডেস্কটপ প্রকাশনা বিপ্লব ঘটে।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত বিজয় কীবোর্ড ডিটিপি বিপ্লবের নায়ক। বস্তুত ডিটিপি ও কম্পিউটারে বাংলা ভাষার ব্যবহার ডিজিটাল প্রযুক্তিকে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তোলে। তবে সার্বিক বিবেচনায় বস্তুত প্রকৃত ডিজিটাল বিপ্লব দৃশ্যমান হয় জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো দেশ শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন।

১৯৯৮-৯৯ সালের বাজেটে শেখ হাসিনা কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেন, মোবাইলের মনোপলি ভাঙেন, অনলাইন ইন্টারনেটকে সচল করেন ও দেশে বছরে দশ হাজার প্রোগ্রামার তৈরির নির্দেশনা প্রদান করেন। বাংলাদেশ থেকে সফটওয়্যার রপ্তানির উপায় উদ্ভাবনের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করে ৪৫টি সুপারিশ নিয়ে তার ২৮টি বাস্তবায়ন করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের কারণে সেই উদ্যোগ পরিত্যক্ত হয় যা ২০০৯ সালের পর আবার সক্রিয় হয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৫৭তম দেশ যাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট রয়েছে। ১২ মে ২০১৮ উপগ্রহটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং ৯ নভেম্বর ২০১৮ উপগ্রহটির টাইটেল বাংলাদেশকে হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশের সম্প্রচার মাধ্যম এটি এখন ব্যবহার করছে।

আগেই বলেছি আনুষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা জাতির সামনে পেশ করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বর্ণকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর তার দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

তার ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সাল হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঠিকানা। তবে একুশের জন্য অপেক্ষা না করে ২০১৮ সালেই সেই সময়সীমার কাছাকাছি আমাদের দেশটাকে ভাবতে পারছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ ছিল আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের অংশ।

২০০৮ সালের নির্বাচনটি ২০০৬ সালে হওয়ার কথা ছিল বলে নির্বাচনী ইশতেহারটির কাঠামো ২০০৬ এর আগেই তৈরি হয়েছিল। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে, এইচটি ইমাম ও নূহ উল আলম লেনিনের নেতৃত্বে রচিত ইশতেহারটিতে আমিসহ দেশের সব স্তরের বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করেন।

৬ ডিসেম্বর ২০০৮ বিকেলে দলটির ধানমন্ডির কার্যালয়ে দিনবদলের সনদ ইশতেহারে ২০২১ সালে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে এমন ঘোষণা যুক্ত করি। ১১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটি সেটি অনুমোদন করে এবং ১২ ডিসেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর সামনে সেটি ঘোষণা করেন। ধারণাটি নিয়ে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডও ছিল সেই সময়ে। বিশেষ করে দেশের প্রথম তথ্যপ্রযুক্তির বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির একটি বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল সেই সময়ে।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিতে আমার সহকর্মী বীরেন অধিকারী কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন। বীরেনের ভাষায়, সম্ভবত বিশ্বখ্যাত মার্কিন লেখক এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক ভবিষ্যৎ প্রবক্তা অ্যালভিন টফলারের ‘থার্ডওয়েভ’ বইটির সূত্র ধরে মোস্তাফা জব্বার বিশ্ব সভ্যতার তৃতীয় স্তর নিয়ে সভা সেমিনার করাসহ লেখালেখি শুরু করেন। তিনি তখন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি। ‘একুশের স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এই স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি বাংলা একাডেমির ২০০৮ সালের একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণ করে। বিসিএস একই স্লোগান নিয়ে নিয়মিতভাবে দেশব্যাপী আইসিটি অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম আয়োজন করে।

২০০৮ সলের ১৭-২১ নভেম্বর ‘টুয়াডর্স ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থিম নিয়ে ‘বিসিএস আইসিটি ওয়ার্ল্ড’ আয়োজিত হয় এবং এতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। মোস্তাফা জব্বার ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন সংক্রান্ত মিডিয়া কমিটির দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এ সুবিধার কারণে তিনি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ওই দলের দিনবদলের মহাপরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০২১’ শীর্ষক ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন। ওই প্রস্তাব আওয়ামী লীগের কর্তৃক গৃহীত ও কার্যকর হয়।

১২ ডিসেম্বর ২০০৮ আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা তার দিনবদলের সনদ ‘রূপকল্প ২০২১’ শীর্ষক ইশতেহার সরাসরি গণমাধ্যমে পুরো দেশবাসীর সামনে প্রকাশ করেন। এতে জাতীয়ভাবে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এরপর প্রতিটি নির্বাচনী জনসভায় বা গণমাধ্যমে শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণায় আলোড়ন সৃষ্টি এবং নির্বাচনে এর ব্যাপক প্রভাবের বিষয়টি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও অনুধাবন করেন। তিনি ২৩ ডিসেম্বর ২০০৮ কুমিল্লার এক নির্বাচনী জনসভায় ২০২১ সালের আগেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা প্রদান করেন। সেটি অবশ্য তিনি ও তার দল পুরাই ভুলে গেছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও তাদের নির্বাচনী প্রচারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানটি ব্যবহার করে ভোটারদের আকৃষ্ট করার প্রয়াস পান।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচিটি দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছে সবচেয়ে আলোচিত এবং জনপ্রিয় বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। নির্বাচনে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর পক্ষে গোটা জাতি রায় প্রদান করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা সরকারিভাবে গৃহীত অন্যতম প্রধান ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মসূচি।

২৭ জানুয়ারি আইসিটি খাতের প্রধান সংগঠন বিসিএসের সভাপতি হিসেবে মোস্তাফা জব্বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতে মিলিত হন। ওই সাক্ষাতের সময় জব্বার তার লিখিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি বিষয়ক একটি বই প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিসিএস সভাপতি দেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল কর্মপদ্ধতি, সেবা, প্রযুক্তি ও জীবনধারাভিত্তিক একটি প্রদর্শনী আয়োজনের প্রস্তাব করেন।

প্রধানমন্ত্রী ওই প্রদর্শনীর জন্য ‘ডিজিটাল এক্সপো’ নামকরণ করেন এবং তা তিনি ২৫ মার্চ ২০০৯ তারিখে উদ্বোধন করতে সদয় সম্মত হন। বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল এবং ইউএনডিপি ‘ডিজিটাল এক্সপো’ আয়োজনে বিসিএসকে সহায়তাদানে এগিয়ে আসে। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ২৫ মার্চ উদ্বোধনের পর ২৮ মার্চ ২০০৯ তারিখ পর্যন্ত দেশে এ ধরনের প্রদর্শনী আয়োজনে ব্যাপক সাড়া জাগায়। প্রদর্শনীর পাশাপাশি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ সম্পর্কিত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা হয়। গোলটেবিল বৈঠকগুলোতে সরকারের নীতি-নির্ধারকসহ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।

৩১ মার্চ ২০০৯ তারিখে মন্ত্রিপরিষদে পাস হওয়া জাতীয় আইসিটি নীতিমালায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২২ নভেম্বর ২০০৯ আয়োজন করা হয় দেশের প্রথম এবং এ পর্যন্ত আয়োজিত একমাত্র ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট’। এই সামিটটি উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

২০১০ সালের ৩১ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত চার দিনব্যাপী হোটেল শেরাটনে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি কর্তৃক সমান্তরালভাবে আয়োজিত ‘বিসিএস ডিজিটাল এক্সপো ২০১০’ এবং ‘অ্যাসোসিও মাল্টিল্যাটারাল ট্রেড ভিজিট ২০১০’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহারের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের অনন্য সাধারণ কার্যক্রমের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ‘অ্যাসোসিও আইটি অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেয়া হয়। আইসিটি খাতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কোনো সরকারপ্রধান হিসেবে এই বিরল সম্মাননা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের আগে অন্য কোনো দেশ বা শেখ হাসিনার আগে কোনো রাষ্ট্রনায়ক দেশের সঙ্গে ডিজিটাল শব্দটি ব্যবহার করেননি।

স্মরণ করা উচিত যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষণার পর ব্রিটেন ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট নিজেদের দেশকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তরের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এখন দেখছি নেপাল ডিজিটাল নেপাল বলে চিৎকার করছে। থাইল্যান্ড শিল্প বিপ্লব ৪.০, জার্মানি শিল্পবিপ্লব ৪.০, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ডিজিটাল শিল্পবিপ্লব, জাপান সোসাইটি ৫.০ ঘোষণাসহ এখন বস্তুত বিশ্বের সব দেশ ইলেকট্রনিক, ইউবিকুটাস বা ডিজিটাল শব্দ দিয়ে তাদের ডিজিটাল যুগের কর্মসূচি প্রকাশ করছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম যেমন করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে গুরুত্ব দিচ্ছে তেমনি বিশ্ব তথ্যসংঘ সমাজ জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে।

আমরা বাংলাদেশের জনগণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার সংগ্রাম করছি বলেই প্রযুক্তি ও সভ্যতায় পিছিয়ে থাকতে পারি না। একাত্তরে রক্ত দিয়ে যে দেশটাকে আমরা গড়েছি সেই দেশটা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ হবে এটিই জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। আমরা সেই স্বপ্নেই মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্নপূরণে তার জীবন ও কর্মকে উৎসর্গ করে যাচ্ছেন। এখন তাই আমরা শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ছি।

মোস্তাফা জব্বার: তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App