×

মুক্তচিন্তা

দেশপ্রেম জাগাতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৫১ পিএম

দেশে বইছে এখন নির্বাচনী হাওয়া। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় একটি সুষ্ঠু দেশ গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন মতাদর্শের দলভিত্তিক পছন্দের প্রার্থীর মহাসমারোহ সরব উপস্থিতির মাধ্যমে মাঠ চাঙ্গা হচ্ছে। ঘনিয়ে আসছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ৩০ ডিসেম্বর জাতি বেছে নেবে তাদের প্রিয় দলকে। আমরা চাচ্ছি সব দলে সমান সুযোগ পাক। কারণ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চলে জনগণের মতামতের ওপর। কোনো উটকো লোক উড়ে এসে জুড়ে বসতে পারে না এমন ধারণা ও নীতি বহন করে গণতন্ত্র।

বিগত সংসদ নির্বাচনগুলো একটু পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সহিংসতায় ভরপুর ছিল। কখনো রক্ত ছাড়া কোনো নির্বাচন তোলা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এমন কেন হবে এ স্বাধীন রাষ্ট্রে? কারণ একটাই আমাদের একে অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করি না, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি না এমনকি আমাদের ঐক্য কম। সবচেয়ে বড় কথা হলো দেশপ্রেম জাগে না সহজে আমাদের ভিতর থেকে, একটা দেশ গঠনে যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার। কেন আমরা নিজের মাতৃভূমিকে মন থেকে আজো ভালোবাসতে পারি না, তা কাজকর্মে প্রতিফলন দেখাতে পারছি না। এটা বোধগম্য নয়।

দেশে এখন উন্নতির অনেকটা পথ মসৃণ হয়ে এসেছে বৈকি। বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদেরও ইতিবাচক মনোভাব ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তাই একটি সুষ্ঠু নীতিবান দেশবান্ধব সরকারের প্রয়োজনীয়তা আছে বৈকি।

এ দেশের বিভিন্ন দলের কাগজগত নীতিমালা বলি বা উদ্দেশ্যগত বলি প্রায় সব দেশের উন্নয়নের কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে কাজ করতে গেলে দেখা যায় তারা তাদের নীতি থেকে সরে গিয়ে নিজের আখের গোছাতে থাকে। ব্যাপারটা সত্যিই উদ্বেগজনক। একজন সদ্য সাংসদ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে যেই সংসদে পদার্পণ করে বছরখানেক না যেতেই তিনি সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন সাধারণ জনগণকে শোষণ করে।

এই দেশেই যেন রাজনীতি করে কামাই করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়। দিনের পর দিন উনারা এতটাই ক্ষমতাধর হয়ে যান সাধারণ মানুষের একটা একটা মূল্যবান ভোটে তিনি এই পর্যায় এসেছেন তা ভুলেই যান। আর নির্বাচিত হওয়ার পর বেশিরভাগ সাংসদ নিজের এলাকায় চরণ ফেলেন কালেভদ্রে। অথচ ভোট চাওয়ার সময় সেই গরিব কৃষক, কামার, কুমোরের পা ধরার জোগাড় ছিল। ঠিক এই কারণে আমাদের দেশে রাজনীতির বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকে। কারণ এ দেশের মানুষ খুবই স্বার্থের তাবেদার জনগণের সেবা করার জন্য তাদের যে বেছে নিয়ে সংসদে পাঠানো হয়েছে তা তারা ক্ষমতা পেয়ে ভুলেই যায়।

একটি দেশ উন্নতির স্বর্ণশিখরে উঠে সরকার ও জনগণের সমন্বিত মিথস্ক্রিয়ার শৌখিন স্মার্ট পরিকল্পনানুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়নে। আর আমাদের দেশে দেখা যায় সরকার বদলালে পূর্ববর্তী সরকারের সব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে ভণ্ডুল করে দেয় এমনকি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম পর্যন্ত পাল্টিয়ে ফেলে। কি রকম প্রতিহিংসার রাজনীতি ভাবা যায়! এটা কখনো সুস্থধারার রাজনীতির পরিচয় বহন করে না।

আমাদের মধ্যে কখন যে সহনশীলতা, নিজেকে বিশালতায় প্রকাশ করার মনোবাসনা জাগবে তা বিধাতায় জানেন শুধু। যেতে হবে অনেক দূর, গণতন্ত্রের রাজনীতি একটি চর্চার বিষয় হয়েও আমরা তা অবুঝের মতো জনগণের মাথার ওপর বোমা ফাটানোর মতো একপেশে করে ফেলি। জনগণ সব ক্ষমতার উৎস। কিন্তু সেই জনগণ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, নিরাপত্তা এই মৌলিক অধিকারগুলো সর্বদা যথাযথ ফল ভোগ করতে পারে না। আমাদের মাঝে নীতি-নৈতিকতার সংমিশ্রণ থাকলে তা সহজে কাটিয়ে উঠা সম্ভবপর হয় তা দৃঢ় চিত্তে বলতে পারি।

পৃথিবীতে অসম্ভব বলতে কিছু নেই। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে গেলে, মায়ের মতো, সন্তানের মতো ভালোবাসলে এ দেশে সবকিছুই মঙ্গলের জন্য সৃষ্টি হবে। রাজনৈতিক কূটবুদ্ধি, অচেনা গলিতে হাঁটা বন্ধ করে আসুন সব রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের মূল কথার ছায়াতলে সবাই অবস্থান করি। জনগণের আশা প্রত্যাশা প্রতিটি দলের মাঝে প্রতিফলিত হোক। রাজনীতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না বানিয়ে জনগণের সেবার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠুক, বিশ্বাসের উজ্জ্বল বাতিঘর হোক এই কামনা করি।

শিক্ষক, রাগুনিয়া, চট্টগ্রাম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App