×

জাতীয়

‘একটি বাড়ি একটি খামার’ এখন বিশ্বের উদাহরণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:০৬ পিএম

‘একটি বাড়ি একটি খামার’ এখন বিশ্বের উদাহরণ
দশ বছরের উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে সুবিধাবঞ্চিত দেড় কোটি মানুষের জীবন। বদলে গেছে ৩৪ লাখ পরিবার। টার্গেট রূপকল্প-২০২১। এর মধ্যেই ৩ কোটি দরিদ্র মানুষের ভাগ্য বদলে দেবে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প। ২০২০ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে এর আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়’ বিভাগের অধীনে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংগ্রহ করে স্থায়ী তহবিল গঠনের মাধ্যমে পুঁজির অভাব দূর এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। প্রকল্পের সদস্যরা প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক, যাদের জমির পরিমাণ ০ দশমিক ০৫ থেকে ১ দশমিক ০ একর। এদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ নারী সদস্য। প্রতিটি সমিতির সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬০ জন, সর্বনিম্ন ৪০ জন। সমিতিগুলো নিজেদের সুবিধা বা পছন্দ অনুযায়ী এবং যে এলাকায় যে ধরনের জীবিকা গ্রহণ করা সম্ভব তা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে হাঁস-মুরগির খামার, মৎস্য খামার, দুগ্ধ উৎপাদন, মৌমাছি পালন, শস্য উৎপাদন, বনায়নসহ নানা ধরনের ক্ষুদ্র শিল্প রয়েছে। সমিতির সদস্যরা বাধ্যতামূলক যে সঞ্চয় করেন, সরকারের পক্ষ থেকে ঠিক সমপরিমাণ টাকা দিয়ে তহবিল গঠনে সমিতিগুলোকে সহায়তা করা হয়। সেইসঙ্গে প্রতিটি সমিতিকে সরকার থেকে ঘূর্ণায়মান ঋণ হিসেবে সমপরিমাণ টাকাও দেয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে সারা দেশে ৪৯০টি উপজেলার ৪ হাজার ৫০৩টি ইউনিয়নে এ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। গঠন করা হয়েছে ৬২ হাজার ৪০০ গ্রাম উন্নয়ন সমিতি। এসব সমিতি থেকে সুফল পাচ্ছেন দেড় কোটি মানুষ। তাদের বার্ষিক আয় বেড়েছে গড়ে ১১ হাজার টাকা। জানা গেছে, দারিদ্র্য বিমোচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘একটি বাড়ি একটি খামার।’ শেখ হাসিনার নির্দেশেই ২০০৯ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। ওই বছরের ৫ নভেম্বর এটি অনুমোদন দেয় একনেক। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ। প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সুবিধাভোগীদের মধ্যে অনেক সচ্ছল লোকও ঢুকে পড়ে। তাই নীতি সংশোধন করে পুনরায় বাজেট নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৪৯২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তখন প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর কমিয়ে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। প্রথম পর্যায়ের সাফল্যের পর এর মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৬ সাল পর্যন্ত। শুরু থেকে ওই সময় পর্যন্ত বরাদ্দ করা হয় ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। পরে ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর তৃতীয় পর্যায় অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পর থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৮ হাজার ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটির সাফল্য সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে প্রকল্পের আওতাভুক্ত ১৫ শতাংশ মানুষই ছিলেন নিম্ন আয়ের। এখন এ হার ৩ শতাংশ। আগে অধিক আয়ের পরিবার ছিল ২২ দশমিক ৮ শতাংশ। এখন তা ৩১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গত এক বছরে সুবিধাভোগীদের মধ্যে ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ মানুষের আয় বেড়েছে। এ সময়ে ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ সদস্যদের খাবারের ঘাটতি হয়নি। পরিবার প্রতি বছরে আয় বেড়েছে ১০ হাজার ৯২১ টাকা। বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্ব ভ‚মিকা রাখছে এমনটি মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক বিশ্বেও এই প্রকল্প এখন সাফল্যের উদাহরণ। দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখার জন্য নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল ফেয়ারে সাউথ এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩৬টি দেশের ১৬৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অ্যাওয়ার্ড-২০১৩ অর্জন করে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এই তথ্য তুলে ধরে বলেন, আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রধান একটি শর্ত হচ্ছে একটি বাড়ি, একটি খামার। আমরা বহির্বিশ্বে এই উদাহরণ দিচ্ছি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কাছে এসব থিওরিগুলোই কিন্তু বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোলমডেলে পরিণত করেছে। অনেক উন্নত দেশ আমাদের এই বিষয়টিকে উৎসাহ দিচ্ছে। আমরাও অনেক দেশকে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে এই কৌশলটি তুলে ধরছি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকটি দেশকে আমরা এ ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করছি। সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান দশকে কৃষি উন্নয়ন ও গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে একটি উল্লেখযোগ্য ও অভিনব সংযোজন হলো ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প। জানতে চাইলে উপপ্রকল্প পরিচালক প্রণব কুমার ঘোষ ভোরের কাগজকে বলেন, দ্রুত আয় ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর স¤প্রসারণে নিত্যনতুন কর্মসূচি গ্রহণ করছে সরকার। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ সুফল পাচ্ছেন। সুবিধাভোগীদের জীবনেও এসেছে পাঁচটি ইতিবাচক পরিবর্তন। জীবনযাত্রার উন্নতি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, খাদ্য ঘাটতি হ্রাস ছাড়াও তাদের আয় বেড়েছে। তিনি বলেন, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চায়। তাই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত করে তাদের সম্পদে পরিণত করতেই এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পটির দুটি ধাপ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। এখন চলছে তৃতীয় পর্যায়। মেয়াদের মধ্যেই ৩ কোটি দরিদ্র মানুষের ভাগ্য বদলাবে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App