×

জাতীয়

কে হতে যাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:৪৪ পিএম

কে হতে যাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ
আগামী ৩০ ডিসেম্বর আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে জমে উঠেছে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা। প্রার্থী ও প্রতীকের পক্ষে ভোট চেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। শ্রীনগর-সিরাজদিখান উপজেলা নিয়ে গঠিত মুন্সীগঞ্জ-১ আসন। সংসদীয় আসন নং ১৭১। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৮ টি। ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪০ হাজার ২’শত ৫৯ ভোট। নারী ভোটার থেকে প্রায় ৯ হাজার ভোট পুরুষ ভোটার বেশী রয়েছে। এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর সকালে জেলা রিটার্নিং অফিসার কার্যালয় থেকে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মোট ৬ জন প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং অফিসার। এরি মধ্যে বিভিন্ন চায়ের দোকান ও তৃনমূল জনগণের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে কে হতে যাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ? মহাজোটের মাহি বি চৌধুরী না বিএনপি’র শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন! প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা গণসংযোগ করে নিজ নিজ প্রার্থী এবং মার্কার পক্ষে ভোট চেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শ্রীনগর-সিরাজদিখান উপজেলার রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন দোকানে দোকানে গিয়ে ভোটাদের কাছে ভোট ও দোয়া চাচ্ছেন তারা। নির্বাচনী হাওয়ায় মানুষের মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ ও উল্লাস বিরাজ করতে দেখা গেছে। দফায় দফায় মাইকিং ক্যানভাসে মার্কা ও প্রার্থীদের গুনগানে মুখরিত হয়ে উঠছে পুরো নির্বাচনী এলাকা। মহাজোট ও বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী (নৌকা), বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপ প্রধানমন্ত্রী শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ কেএম আতিকুর রহমান (হাতপাখা), জাতীয় পাটি’র এড্যাভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম (লাঙ্গল), জাকের পার্টি’র শেখ আলহাজ আতাউর রহমান (গোলাপ ফুল) ও বাংলাদেশের কমিনিস্ট পার্টি’র সমর দত্ত (কাস্তে) দলীয় মার্কা নিয়ে নির্বাচনে করেছেন। আসনটি এক সময় বিএনপি’র ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিল। গত ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি পুনরায় জয়লাভ করেন। বর্তমান মহাজোটের প্রার্থী মাহি বি চৌধুরীর বাবা অধ্যাপক ডাঃ বি চৌধুরী বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তার দখলেই ছিল আসনটি। তিনি রাষ্ট্রপতি হলে তার ছেলে মাহি বি চৌধুরী উপ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে জয়লাভ করে সংসদ সদস্য হন। তারপরে রাজনৈতিক টানাপোড়নে অধ্যাপক ডাঃ বি চৌধুরীকে বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হলে সংসদ সদস্য মাহি বি চৌধুরীও বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। তারা বিকল্পধার বাংলাদেশ নামে আলাদা দল গঠন করেন। তার পরে আসনটিতে পুনরায় ২০০৪ সালের উপ নির্বাচনে মাহি বি চৌধুরী দলীয় প্রতীক কুলা মার্কা নিয়ে নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী বর্তমান শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মমিন আলীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত কোন প্রার্থী ছিলেন না। এর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ বিএনপি’র প্রার্থী শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন ও বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ বি চৌধুরীকে পরাজিত করে আসনটি দখল করে নেন। বর্তমান সাংসদ অসুস্থ্যতার জন্য এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা গোলাম সারোয়ার কবীর, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলু, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের প্রেসিডেন্ট নূরুল আলম চৌধুরী, সিরাজদিখান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী তোফাজ্জল হোসেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাকসুদ আলম ডাবলুসহ প্রায় ১২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। অপরদিকে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেনসহ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন আলহাজ্ব মমিন আলী, শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ, মীর সরফত আলী সপুসহ প্রায় ৮-১০ জন। এদের মধ্যে বিএনপি’র দলীয় মনোনয়ন পান সাবেক উপ প্রধানমন্ত্রী শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন। কিন্তু সকল কল্পনা-জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন প্রার্থী না দিয়ে তারা মহাজোটের পক্ষথেকে মাহি বি চৌধুরীকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের জন্য মনোনীত করেন। এতে করে আওয়ামী লীগের তৃনমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার ছায়া নেমে আসে। এখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে তৃনমূল নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে তোলার মধ্যে দিয়ে এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন গোলাম সারোয়ার কবীর। বর্তমানে আসনটিতে আওয়ামী লীগের ব্যাপক আদিপত্য রয়েছে। ইতিমধ্যেই দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত সব প্রার্থীরা মান অভিমান ভুলে সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তাদের মহাজোটের প্রার্থী ও নৌকার নিশ্চিত বিজয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এবং মাহি বি চৌধুরীর পক্ষে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত আল মুসলিমের গ্রুপের কর্নধার ও বিএনপি নেতা শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ’র মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষনা করা হলেও পরে তা বৈধ ঘোষনা করা হয়। কিন্তু বিএনপি’র দলীয় মনোনয়ন পান শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন। এতে করে গত ৮ ডিসেম্বর সকালে সিরাজদিখানে আব্দুল্লাহ’র সমর্থকরা শাহ্ মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ঝাড়– মিছিল করেন ও বিকালে তার গাড়ীবহরে হামলা চালিয়ে ৫-৬ টি গাড়ি ভাংচুর করেন। এসময় প্রায় ১০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এঘটনায় মামলা হয়েছে বলে জানাযায়। এছাড়াও বিএনপি’র অপর প্রার্থী আলহাজ মমিন আলীও দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে চুপচাপ রয়েছেন। সেও বিএনপি’র একাংশের নেতাকর্মীদের সমর্থন নিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তারপরেও প্রবীন নেতাকর্মীদের দাবি শেষ পর্যন্ত বিএনপি’র সকল নেতাকর্মীরা মান-অভিমান ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রতীক ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর রবিবার আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলে অংশগ্রহনের প্রচার প্রচারনার মধ্যে দিয়ে জমে উঠেছে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচনী এলাকা। নির্বাচনী ধারা বাহিকতায় জনগণের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা কে হতে যাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App