×

মুক্তচিন্তা

আত্মহত্যা সমাধান নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:২৮ পিএম

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO-এর মতে, বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে কোথাও না কোথাও মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। প্রতি বছর পৃথিবীতে আট লাখেরও অধিক মানুষ আত্মহত্যা করে নিজের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া আর শত শত মানুষ আত্মহত্যার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ তার মধ্যে দশম অবস্থানে আছে।

আত্মহত্যার জন্য যে পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয় তা হলো- ১. বিভিন্ন ওষুধ অথবা কীটনাশক খাওয়া ২. ফাঁসিতে ঝোলা ৩. আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ইত্যাদি। সারা বিশ্বেই এই প্রবণতা একই রকম। গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবীতে ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যাই মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ। এর অনেক কারণ রয়েছে।

তার মধ্যে অন্যতম হলো- ১. পারিবারিক অশান্তি ২. বেকারত্বের বোঝা ৩. প্রেমের ব্যর্থতা/পারিবারিক অস্বীকৃতি ৪. সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়া ৫. বিভিন্ন হতাশা ও টেনশন ৬. অপমান ও অভিমান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশও এর থেকে পিছিয়ে নেই।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সড়কে দুর্ঘটনা যেমন বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। কিছুদিন আগে তারই প্রকৃত উদাহরণ ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী অরিত্রীর আত্মহত্যা। মানুষ মাত্রই ভুল করে। সমাজে প্রতিটি মানুষই ভুল করে। হোক সে শিক্ষক অথবা ছাত্র। ভুলের ওপর বিবেচনা করা হয় তার অপরাধটা কেমন।

সমাজে প্রতিটি অপরাধেরই সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু কোনো আইনেই লেখা নেই যে আত্মহত্যাই অপরাধের একমাত্র সমাধান। আত্মহত্যা যেমন সামাজিক ব্যাধি তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তার প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সারা পৃথিবীতে যত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে তার ৭৫ শতাংশ বা তিন-চতুর্থাংশই হয়ে থাকে নিম্ন বা মধ্য-আয়ভুক্ত দেশগুলোতে। আমরা স্বীকার করি যে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষক তার পরিবারের সঙ্গে খুব অসামাজিক আচরণ করছে। তাকে খুব অপমান করছে। তার ক্ষমাকে সে উপেক্ষা করছে। তাকে স্কুল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে নেতিবাচক কাজ করেছে। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে আমরা এমন আশা করি না।

কিন্তু তার মানে এই নয় যে বাবাকে অপমান করার জন্য সন্তানকে আত্মহত্যার মতো একটা জঘন্য পথ বেছে নিতে হবে। তার জন্য সমাজে সুনির্দিষ্ট আইন ও শাস্তির বিধান রয়েছে। আত্মহত্যা করলেই যে তার পরিবারের অপমান লাঘব হবে তা কিন্তু নয়।

এর কারণে সমাজে আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ সব সময় অনুকরণ প্রিয়। স্বাভাবিকভাবে একজনের আত্মহত্যা দেখে অন্যজনের মনে কিন্তু এই প্রবণতা জন্ম নিতে পারে। এর জন্য পরিবার, সমাজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে খুব সচেতনভাবে কাউন্সেলিং করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজে এর নেতিবাচক দিক তুলে ধরতে হবে।

এ ক্ষেত্রে পরিবারকে খুব বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলেই মনে হয় অরিত্রীর মতো কোনো তরুণ-তরুণীকে এই পৃথিবী থেকে অকালে বিদায় নিতে হবে না।

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App