×

মুক্তচিন্তা

বধ্যভূমি রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা কেন?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৫৯ পিএম

অযত্ন, অবৈধ দখল, অবহেলা আর উদাসীনতায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিগুলো নিশ্চিহ্ন হতে চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের যে কোনো স্মৃতি সংরক্ষণ করা আমাদের জাতিসত্তার জন্যই অপরিহার্য। যে কোনো কারণেই হোক যদি এ বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয় তবে তা দুঃখজনক।

গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন একটি প্রতিবেদন আমাদের হতাশ না করে পারে না। প্রতিবেদনে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসরদের হাতে শহীদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত সদরের চৌধুরীপাড়া, আলোহালী পদ্মপুকুরসহ কয়েকটি বধ্যভূমি অযত্নে অবহেলায় অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও অরক্ষিত থাকা খুবই দুঃখজনক। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেন, দুপচাঁচিয়ার বধ্যভূমি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা সদরের বধ্যভূমিটি সারা বছরই অবহেলা-অযত্নে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে। বছরে দুটি দিন মহান বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস এলেই বধ্যভূমির চারপাশের জঙ্গল পরিষ্কার করে বেষ্টনীতে রংচংও করা হয়। বিশেষ দিন ছাড়া বধ্যভূমিগুলোর কোনো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। এটি শুধু দুপচাঁচিয়ার চিত্র নয়, সারাদেশে এমন অসংখ্য বধ্যভূমি গণকবর অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে।

বেসরকারি একটি সংস্থার তথ্যে, ১৯৭১ সালে দেশে প্রায় ৫ হাজার ছোট-বড় বধ্যভূমি ছিল। এর মধ্যে সারাদেশে ৯২০টি শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৮৮টি নদী ও ৬৫টি ব্রিজ-কালভার্ট শনাক্ত করা হয়েছে, যেগুলোতে শত শত বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। বধ্যভূমি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণের পক্ষে উচ্চ আদালত রায় দিয়েছিল ২০০৯ সালে।

অবশ্য এর আগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ৩৫টি বধ্যভূমি ও স্মৃতিবিজড়িত স্থান সংরক্ষণ করতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছিল। কিন্তু এ কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। দেশে তো অনেক এরূপ স্থান রয়েছে। তাহলে উচ্চ আদালতের রায় মেনে এগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না কেন?

জানা যায়, আদালতের রায়ের পর ২০১০ সালের শেষ দিকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সারাদেশের ২০৪টি বধ্যভূমি চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু ওই চিহ্নিত করা পর্যন্তই। সেগুলো সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি আজো। বধ্যভূমি সংরক্ষণের দায়িত্ব সরকারের একার নয়। মুক্তিযুদ্ধে নিহত ব্যক্তির পরিবার ও নাগরিকদের উদ্যোগে দেশের বধ্যভূমিগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব। তবে সরকারকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App