×

জাতীয়

কোন কৌশলে প্রচারণা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:১২ এএম

কোন কৌশলে প্রচারণা

আওয়ামী লীগ

দশ বছরের উন্নয়ন সামনে রেখে প্রচার

ঝর্ণা মনি : নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্যে ভোটার তুষ্টির বহুমুখী কৌশল নিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের প্রচার কৌশলে এবার প্রাধান্য পাবে শেখ হাসিনার সরকারের দশ বছরের উন্নয়ন। দৃশ্যমান সাফল্য থেকে মহাকাশ বিজয় প্রতিটি অর্জন তুলে ধরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে ভোট চাইবে সরকারি দল। সেইসঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের দুর্নীতি, সহিংসতা-নাশকতার চিত্রও তুলে ধরা হবে। দলের নির্বাচন পরিচালনা সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা ভোরের কাগজকে জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় গত ১০ বছরে তাদের যে অর্জন, সেগুলোকেই সামনে তুলে ধরা হবে। এর মধ্যে রয়েছে মহাকাশে বিজয় পতাকা, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া, পদ্মা সেতু, মেট্টোরেল, ডিজিটাল বাংলাদেশ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, দারিদ্র্যবিমোচন, চিকিৎসা খাতে উন্নয়ন, ইন্টারনেট সুবিধা, কৃষিতে নিরব বিপ্লব, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিনামূল্যে বই বিতরণ, নারীর অগ্রগতি, ছিটমহল জয়, সমুদ্র বিজয়, ক‚টনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন প্রভৃতি। এ ব্যাপারে দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা মানুষের ঘরে ঘরে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। গত দশ বছরে কী করেছি, আগামী পরিকল্পনা কী, দেশবাসীর কাছে সেগুলো তুলে ধরব। দেশবাসীকে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন ও বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের পার্থক্য বোঝাতে হবে। তাহলে বিজয় সুনিশ্চিত। শীর্ষ নেতাদের মতে, এবারের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে বিজয় অর্জনের জন্য সরকারের ১০ বছরের উন্নয়ন চিত্র প্রচারের কোনো বিকল্প নেই। বিগত সিটি নির্বাচনগুলোই এর প্রমাণ। সরকারের উন্নয়ন প্রচার করার কারণেই আওয়ামী লীগের ওপর সাধারণ জনগণের আস্থা তৈরি হয়েছে। ভোটে সাফল্য এসেছে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কেন্দ্র থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে জনগণের সামনে সঠিক উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরতে পারলে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জিতবে। জানতে চাইলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক ভোরের কাগজকে বলেন, গত দশ বছর ছিল দেশের উন্নয়নের সোনালি সময়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের উন্নয়নের রোলমডেল। দারিদ্র্যের তকমা থেকে মুক্তি পেয়েছি আমরা। মহাকাশে নিজস্ব ঠিকানা পেয়েছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতুর ৫৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে মেট্টোরেলের কাজ। তিনি বলেন, এসবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে। আমরা নির্বাচনী প্রচারে এসব উন্নয়নচিত্র তুলে ধরব। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা মানেই দেশের উন্নয়ন, জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন। এ ছাড়া আগামী ১৬ ডিসেম্বর সারা দেশে ‘বিজয় মঞ্চ’ করে সেখান থেকে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকায় ভোট চাওয়া হবে। বিজয় মঞ্চে বিজয়ের গান হবে, বঙ্গবন্ধুর কথা হবে, স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরা হবে এবং আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিজয়ের জন্য দলের লড়াই, সংগ্রামের কথা বলা হবে। টুঙ্গিপাড়া থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু প্রধানমন্ত্রীর : জন্মভূমি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকাল বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের প্রচার শুরু করবেন তিনি। গতকাল সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিৎ রায় নন্দী ও উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ূয়া। নানক জানান, আগামী বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া যাবেন। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় নির্বাচনী প্রচারণার কাজ ?শুরু করবেন তিনি। এর পর থেকে নির্বাচনী প্রচারের কাজে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাবেন বলে জানান নানক। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পর নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হবে।

বিএনপি

সুশাসন ও গণতন্ত্রে অগ্রাধিকার থাকবে

  রুমানা জামান : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের অধিকার ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে সামনে রেখে ‘ধানের শীষে ভোট দিন’ এই বিষয়টি মূল প্রতিপাদ্য ধরেই প্রচারণায় নামছে বিএনপি। আগামীকাল বুধবার সিলেটে হজরত শাহজালালের মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে জোট ও ফ্রন্টকে সঙ্গে নিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করবে দলটি। উদ্বোধনী প্রচারণায় নেতৃত্ব দেবেন ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন। দলটির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এক বিরূপ পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচন করতে যাচ্ছি। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই শত প্রতিক‚লতার মধ্যে জোট ও ফ্রন্টকে ঐক্যবদ্ধ রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের জন্য নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সমতল পরিবেশ এখানো তৈরি হয়নি। তবে আমরা প্রচারণার মাঠে থাকব। নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নেমে পড়ব। সূত্র জানায়, নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে একটি ছক তৈরি করছে বিএনপি। এই ছকের অধীনে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও প্রচারণাসহ সার্বিক বিষয় দেখভাল করতে ১২টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা কমিটি, মিডিয়া কমিটি, সোশ্যাল মিডিয়া কমিটি, অর্থ কমিটি, প্রচার কমিটি। ভোটকেন্দ্র পাহারার জন্য আলাদা কমিটিও করা হয়েছে। ১২টি উপকমিটির মধ্যে মিডিয়া কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ ও সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহকে। এ ছাড়াও নির্বাচনী প্রচার ও প্রস্তুতি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহিদউদ্দিন চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন নেতা। এ বিষয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে প্রচারণার আলাদা প্রস্তুতি থাকে। বিএনপিও সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ বিষয়ে উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক প্রচারণাও দুয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হবে। সূত্র মতে, নির্বাচনী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি নির্বাচনী প্রচারণা কমিটির গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এই কমিটির আওতায় প্রতিটি আসনে একধিক সাব-কমিটি রয়েছে। যেখান থেকে নির্দেশনা নিয়ে নেতাকর্মীরা নিজ আসনের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে। বিরোধী পক্ষের কাছ থেকে কোনো বাধার সম্মুখীন হলে তাৎক্ষণিক কমিটির মূল নেতাদের জানাবেন। এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে সরব বিএনপি সব ধরনের কৌশলই হাতে নিয়েছে। তবে আমরা সরকারের কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আশঙ্কায় আছি। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাব। ভোটারদের সচেতন করব। নিয়মিত গণমাধ্যমকে বলছি এবং নির্বাচন কমিশনকে জানাচ্ছি। এগুলোও প্রচরণার বাইরে নয়। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করার পরই নেতারা নিজ এলাকায় চলে যাবেন কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নেমে পড়বেন লাগাতার প্রচারণায়। এরই মধ্যে দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, ক্ষমতাসীনদের গত ১০ বছরের নানা অনিয়মের বিষয় ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে একটি লিফলেট তৈরি করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হলে দেশব্যাপী প্রতিটি ঘরে এই লিফলেট পৌঁছে দেয়া হবে। এ ছাড়াও ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণার মূল উপকরণ প্রার্থীর ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরিও সম্পন্ন। ভোটারদের নজর কাড়তে নেতাকর্মীরা গতকাল সোমবার রাত থেকেই তা বিলি করতে শুরু করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কৌশলে কাজ করতে বলা হয়েছে। মামলার আশঙ্কা থেকে নেতাকর্মীদের চার-পাঁচজনে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাতে বলা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণাকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে দলটি। প্রথমত, মাঠ পর্যায়ের প্রচারণা; দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল প্রচারণা। বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত বেসরকারি টিভি চ্যালেনগুলোতে কিছু টিভিসি প্রচার করা হবে। যেখানে বিএনপির নির্বাচনী ইশহাতের বিষয়বন্তু, বিগত সময়ে ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের জনকল্যাণে গৃহীত কাজসমূহ জনগণের সামনে তুলে ধরাসহ ক্ষমতায় গেলে জনকল্যাণে কি ধরনের কাজ করা হবে তার ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে। এ নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। এ ছাড়াও ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারেও চালানো হবে ভিন্নধর্মী প্রচারণা। কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের তরুণ নেতাকর্মীরা ফেসবুকে ভিন্ন নাম দিয়ে গ্রুপ তৈরি করে খালেদা জিয়ার মুক্তির স্লোগানসহ বর্তমান সরকারের শাসনামলে খুন, গুম, ধর্ষণসহ দলের রাজনৈতিক অবস্থান আপলোড করবেন। দেশে এবার আড়াই কোটি নতুন ভোটার রয়েছে। বিএনপির টার্গেট, তাদের কাছে দলের মূল ম্যাসেজ পৌঁছে দিয়ে নির্বাচনী মাঠে তাদের ধরে রাখা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App