×

মুক্তচিন্তা

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বিকেল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:০৯ পিএম

২৩ নভেম্বর বিকেলটি ছিল বাংলাদেশের কিছু উদ্যমী তরুণের জন্য একটি স্মরণীয় বিকেল। ওইদিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের তরুণ সমাজের একদল প্রতিনিধির সঙ্গে তার নিজের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। জানতে চান দেশ বিনির্মাণে তরুণদের ভাবনা কী? তারা কেমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)।

এতে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্যোক্তা, পেশাজীবী, ছাত্র, শিক্ষক, চিকিৎসক, সংস্কৃতিকর্মী, খেলোয়াড়সহ নানা পেশার দেড়শ তরুণ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো প্রধানমন্ত্রী এভাবে তরুণদের মুখোমুখি হলেন। নিজের ব্যস্ততম সময় থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন একটি বিকেল ব্যয় করেন তরুণদের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের জন্য তখন দেশের তরুণ সমাজ আশান্বিত হয়।

দীর্ঘ আলাপচারিতায় শেখ হাসিনা তরুণদের শুনালেন তার জীবনের ধাপে ধাপে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহের কথা। শুরু হয় বাল্যকাল থেকে। বললেন তার কাছে টুঙ্গিপাড়াই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্থান। সেই টুঙ্গিপাড়ার পুকুরে, নদীতে ঝাঁপিয়ে বা দুরন্তপনায় কেটেছে তার শিশুকাল। তখন থেকেই বাবাকে খুব একটা কাছে পেতেন না। বাবাকে দেখতে প্রায়ই যেতে হতো জেলে, হাজতে বা কোর্টে। এরপর বললেন তার ঢাকাবাস ও মাধ্যমিক স্কুলের কথা। জানালেন স্কুল জীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়েছেন। তখনো যেতেন মিছিলে, সভায়। ছাত্রীদের আন্দোলনে যোগদানের সুবিধার্থে সহপাঠিনীদের নিয়ে কৌশলে স্কুলের ঘণ্টি বাজিয়ে স্কুল ছুটি দিয়ে দেয়ার মতো ঘটনারও বর্ণনা দিয়েছেন হাসতে হাসতে।

একবার স্কুলের গেটে এক দীর্ঘকায় পুলিশ তাদের মিছিলে যেতে বারণ করে। ভয় দেখিয়ে বলে মিছিলে গেলে তাদের জেলে পাঠানো হবে। উত্তরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বললেন, ‘জেলে তো প্রায়ই যাই।’ পুরোই অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল সেই পুলিশ। আসলে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে তার পরিবারের সদস্যরা তো তাদের বাবাকে দেখতে প্রায়ই জেলে যান। দেশের মানুষের নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে তাদের বাবার এই জেলে যাওয়াটাকে অনেকেই অসম্মানজনকভাবেও ব্যাখ্যা করতেন। কেউ কেউ দেখতেন সম্মানের চোখে।

ইডেন ইন্টারমিডিয়েট কলেজে পড়াকালীন কলেজের ছাত্রী সংসদ নির্বাচন করা, এ নিয়ে মায়ের শাসন, অভিমান করে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়া, বান্ধবীদের চাপ, অবশেষে দাদাকে দিয়ে মাকে ম্যানেজ করা ইত্যাকার গল্প করলেন তার স্বভাবজাত হাস্যরসে।

বললেন ১৯৭৫ সালে পরিবারের সবাইকে হারানোর পরও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, ১৯৮১ সালে চরম বৈরী পরিস্থিতিতেও দেশে ফিরে আসার গল্প, দল ও দেশের হাল ধরার গল্প ইত্যাদি। তরুণদের অনেকেই জানতে চান কীভাবে শত প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে যাচ্ছেন ব্যক্তি শেখ হাসিনা। এত সাহস কোথা থেকে পান? জানতে চান কেমন ছিল একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের বন্দি জীবন? যে বিষয়টির অবতারণা হওয়ার সঙ্গে পুরো হলঘরজুড়ে নেমে এসেছিল নিস্তব্ধতা, চোখের কোনায় জমে উঠেছিল শিশির বিন্দুর মতো অশ্রু ফোঁটা তা হলো পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার ঘটনা।

তরুণরা জানতে চান, কীভাবে তিনি সামলে উঠলেন? বই পড়ে, গান শুনে সময় কাটানো একটি অলস মেয়ে কীভাবে হয়ে উঠলেন কর্মবীর? তিনি জানান, বাবার অসমাপ্ত কাজ সমাপন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য ভেতর থেকে একটি প্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি। একই সঙ্গে এ দেশের কোটি মানুষের ভালোবাসা তাকে উজ্জীবিত করেছিল। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা উদ্যমী তরুণদের যেন তিনি আপন করে নিয়েছিলেন। যেন বহুদিন পর কারো সঙ্গে প্রাণ খুলে সুখ-দুঃখ বলার একটা জায়গা পেয়েছিলেন ব্যস্ততম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানটি উপস্থিত তরুণদের জন্য যেন ছিল জীবন গঠনের কর্মশালা। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী সবার প্রিয় আপা শেখ হাসিনাকে।

সভাপতি, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App