পিএসসি পরীক্ষা উত্তরপত্র জালিয়াতি করেন এটিও!
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০১:৫৪ পিএম
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উত্তরপত্র জালিয়াতির অভিযোগে সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও), অফিসের পিয়ন ও দুই শিক্ষকসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৭ পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিযুক্ত ওই ৪ জনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।
গতকাল শুক্রবার থানা পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র জালিয়াতির অপরাধে মামলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা সাহেদুল ইসলামের ওই জালিয়াতির ঘটনায় শিক্ষা অধিদপ্তরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে গিয়ে পরীক্ষকরা দেখতে পান বাংলা বিষয়ের উত্তরপত্র প্যাকেটের মধ্যে গণিত বিষয়ের উত্তরপত্র। এভাবে একেক বিষয়ের উত্তরপত্রের প্যাকেটে অন্য বিষয়ের উত্তরপত্র থাকার বিষয়টি সন্দেহ হয় পরীক্ষকদের। আরো সন্দেহ হয় যে ৭জন পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে কোনো কাটাকাটি নেই, লেখাও সুন্দর এবং তারা ৯৯ থেকে ১০০ নম্বর পাওয়ার দাবিদার। এ অবস্থায় ওই ৭ পরীক্ষার্থীর সকল বিষয়ের উত্তরপত্রের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। এরপর খতিয়ে দেখে দেখা যায় ওই ৭ পরীক্ষার্থীর সবাই দুটি বেসরকারি মডেল স্কুলের শিক্ষার্থী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায় ওই বিষয়ে নিজেই তদন্তে নামে। এরই অংশ হিসেবে ওই ৭ পরীক্ষার্থীকে গতকাল শুক্রবার উপজেলা পরিষদে ডেকে নিয়ে তাদের সবাইকে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরপত্র লিখতে দেয়া হয়। তাদের লেখা উত্তরপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয় শিক্ষা অফিসে জমা থাকা সমাপনী পরীক্ষার উত্তরপত্রের সঙ্গে। এতে গড়মিল নিশ্চিত হওয়ার পর প্রথমেই শিক্ষা অফিসের পিয়ন সাদ্দাম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি আসল ঘটনা ফাঁস করে দেন। এতে ওই ৭ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে যে উত্তরপত্র লিখেছে তা সরিয়ে বাইর থেকে অন্য হাতের লেখা উত্তরপত্র ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা সাহেদুল ইসলাম এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৃজন মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ওরফে শাহীন মিয়া ও সাকসেস মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু মুছা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, সৃজন মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ও সাকসেস মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু মুছা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা সাহেদুল ইসলামকে ১ লাখ টাকা দেন। বিনিময়ে ওই ৭ পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র সরিয়ে বাইরের অন্য হাতের লেখা উত্তরপত্র ঢুকিয়ে দেয়। অবৈধ ভাবে গোপনে বাইরের লেখা উত্তরপত্র ঢুকাতে গিয়ে এক বিষয়ের উত্তরপত্র অন্য বিষয়ের প্যাকেটে চলে যায়। এর ফলে উত্তরপত্র মূল্যায়নকারি পরীক্ষকদের হাতে ধরা পড়ে ওই জালিয়াতির ঘটনা।
রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা সাহেদুল ইসলামসহ ৪জনের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তাদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র জালিয়াতির অপরাধে মামলা হচ্ছে।