×

বিনোদন

নাটকের চরিত্ররা কি সিনেমায় আসতে পারে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০১:৪৪ পিএম

নাটকের চরিত্ররা কি সিনেমায় আসতে পারে?
বাংলাদেশের টিভি নাটকের বয়স সুবর্ণজয়ন্তী পার করেছে আরো আগেই। এই পাঁচ দশকে দর্শকনন্দিত ও শিল্পসম্মত অসংখ্য নাটক প্রচার হয়েছে। যার মধ্যে সিংহভাগ নাটকের স্বত্ব বাংলাদেশ টেলিভিশনের। গত দশকের পূর্ব পর্যন্ত স্যাটেলাইট চ্যানেল উন্মুক্ত না হওয়ায় বিটিভিই ছিল দর্শকদের নাটক দেখার একমাত্র প্ল্যাটফর্ম। বিপুল দর্শকের আশীর্বাদধন্য বিটিভি একের পর এক সময়োপযোগী নাটক পরিবেশন করে তার গ্রাহকদের তুষ্ট করেছে। প্রথম স্যাটেলাইট চ্যানেল একুশে টেলিভিশনও যাত্রার সূচনা থেকে নাটককে দর্শকতুষ্টির হাতিয়ার বলে বিবেচনা করেছে। পরবর্তী সময়ে আরো দুই ডজন স্যাটেলাইট চ্যানেল বাজারে এসে নাটকের ঐতিহ্যকে লালন ও পালন করতে মোটেও পিছপা হয়নি। এখনো টেলিভিশনে প্রচারিত বারো রকমের অনুষ্ঠানের মধ্যে নাটকই দর্শকদের প্রথম পছন্দ। বাংলাদেশের টিভি নাটকের ইতিহাস বৈচিত্র্যময়। কালের গর্ভে অকাতরে হারিয়ে যাওয়ার মতো অজস্র নাটকের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে কালজয়ী অগণিত নাটকও। আর এই নাটকগুলো থেকে বেরিয়ে এসেছে দর্শকদের বুকে তোলপাড় করে ফেলা কিছু চরিত্র। চরিত্রগুলো দর্শকদের বহু বছর ধরে মুগ্ধ করে রেখেছে। সংখ্যায় কম হলেও এ সময়ের কিছু কিছু চরিত্র দর্শকদের মনে দাগ ফেলছে। নাটকের আলোচনা এলে ঘুরে-ফিরে কিছু চরিত্রের কথা চলে আসে। প্রশ্ন হচ্ছে নাটকের আলোচিত চরিত্রগুলো কি দর্শকদের মনের মুকুরেই থেকে যাবে? নাকি চরিত্রগুলোর নতুন কোনো সম্ভাবনা আছে? এই যেমন, চরিত্রগুলো ছোটপর্দা থেকে আসতে পারে বড়পর্দায়। বোকা বাক্সের সীমিত পর্দা থেকে ঝাঁপ দিতে পারে ত্রিশ ফুট প্রশস্ত রুপালি পর্দায়! বছর আটেক আগে শোনা গিয়েছিল, নির্মাতা সাগর জাহান তার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘আরমান ভাই’কে সিনেমায় নিয়ে আসবেন। কিন্তু সেই আলোচনা পরে আর ফলবান হয়নি। নাটক বিস্ফোরণের এই যুগে শত শত নাটকের ভিড়ে ‘আরমান ভাই’ টিভি সেটের সামনে দর্শকদের বসিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। উৎসবের দিনগুলোতে দর্শকদের মনোরঞ্জন করেছে পুরান ঢাকার ফুর্তিবাজ যুবক আরমান। জাহিদ হাসান এই চরিত্রে অভিনয় করে তার ক্যারিয়ারকে নবজীবন দান করেন। তিনি তখন পঞ্চাশের কাছাকাছি, এরকম একটা মজার চরিত্র জাহিদ হাসানের ক্যারিয়ারের শীর্ষ আসনকে আরো কয়েক বছরের আয়ু দেয়। আরমান ভাইয়ের জনপ্রিয়তার মোহকে দাবিয়েই সাগর জাহান পরে আনেন ‘সিকান্দার বক্স’কে। এই ধারাবাহিকে নাম ভ‚মিকায় অভিনয় করে ক্যারিয়ারে আরো এক ধাপ এগিয়ে যান মোশাররফ করিম। টিভি নাটকে জনপ্রিয়তার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত আরমান ভাই কিংবা সিকান্দার বক্স আসতে পারত সিনেমায়। সেই দাবি দর্শকরা তুলেছিলেন। তাদের প্রত্যাশা মেটানোর উদ্যোগ কেউ নেয়নি। স্যাটেলাইট জমানায় টিভি নাটকের খুব বেশি চরিত্র দর্শকদের মোহাবিষ্ট করতে পারেনি। এই স্বল্পসংখ্যক চরিত্রগুলোর মধ্যে একটি নুরুল হুদা। অরণ্য আনোয়ারের সৃষ্টি ধারাবাহিক ‘নুরুল হুদা একদা ভালোবেসেছিল’। স্যাটেলাইট রাজত্বে এই নাটকটি দিয়ে দর্শকদের নিজের দিকে মুখ ফেরায় বিটিভি। নাটকটির কেন্দ্রীয় চরিত্র, গ্রামীণ যুবক নুরুল হুদার সরলতায় বুঁদ হয়ে যান দর্শকরা। নুরুল হুদা, মাহফুজ আহমেদকে তার শহুরে রোমান্টিক ভাবমূর্তি ভেঙে সর্বশ্রেণির কাছে গ্রহণযোগ্যতা এনে দেয়। নুরুল হুদা চরিত্রটিকে নিয়ে প্রযোজক মাহফুজের নানা ধরনের উদ্যোগের মধ্যে ছিল নাটকটির কয়েকটি সিরিজ করা। চাইলে তিনি সিনেমায়ও নুরুল হুদাকে রূপায়ণ করতে পারতেন। কিন্তু এরকম কোনো পরিকল্পনা নাটকটির প্রচার সময়ে মাহফুজের ছিল কিনা আমাদের জানা নেই। সিনেমায় শুধু নায়কোচিত চরিত্রগুলোই আসতে পারে, এমন ভাবনার অবকাশ নেই। সিনেমায় আসতে পারত, এখনো পারে, ইমদাদুল হক মিলনের সৃষ্টি ‘হেলাল’। এই চরিত্রটি অন্য মাত্রার দর্শকপ্রিয়তা দিয়েছিল প্রয়াত অভিনেতা খালেদ খানকে। ‘বারো রকমের মানুষ’ ধারাবাহিকের খল চরিত্র হেলালের উচ্চারিত সংলাপ ‘ছি! ছি! তুমি এত খারাপ’ ছিল নগর-গ্রাম-গঞ্জের মানুষের মুখে মুখে। এখানে বলাটা প্রাসঙ্গিক হবে যে, নাটকের এমন কিছু ‘কমন ডায়লগ’ নাটক থেকে সিনেমায় এসেছে। কিন্তু তাদের উপস্থাপনা খুবই স্থ’ূল হওয়ায় নাটকের মতো সিনেমা দর্শকদের মন জয় করতে পারেনি। বিটিভির নাটকের জনপ্রিয় চরিত্রগুলো কখনো ইতিবাচক ছিল, কখনো ছিল নেতিবাচক। কিন্তু যে চরিত্রটি ভালো-মন্দের ফারাককে মাটিতে গুঁড়িয়ে দিয়ে জনপ্রিয়তার নতুন সংজ্ঞা দাঁড় করায়, সেই চরিত্রটি হচ্ছে ‘বাকের ভাই’। হুমায়ূন আহমেদের এই চরিত্রটিকে টেলিভিশন ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের এই চরিত্রটি শুধু দর্শকদের হৃদয়ের গভীরেই নাড়া দেয়নি, গল্পে বাকেরের ফাঁসির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে জনতা। এমনকি আক্রান্ত হয় নাট্যকারের বাড়িও। আরো অনেক বিতর্কে জড়ায় বাকের ভাই ও ‘কোথাও কেউ নেই’। আজ প্রায় তিন দশক পর নাটকটিকে ছাপিয়ে নাটকের প্রধান চরিত্র বাকের ভাইকে নিয়েই আলোচনা হয় বেশি। এই চরিত্রটি অনায়াসে আসতে পারত সেলুলয়েডে। স্বয়ং এর স্রষ্টা হুমায়ূন আহমেদ চরিত্রটি আনতে পারতেন ঢালিউডে। কিন্তু তিনি ওপথে হাঁটেননি। বাকের ভাইয়ের রূপায়ণকারী আসাদুজ্জামান নূর, হুমায়ূন আহমেদের আরো কিছু জনপ্রিয় টিভি চরিত্রের অভিনেতা। ছোট মীর্জা, নান্দাইলের ইউনূস, হিমু চরিত্রগুলো নূর মমতার সঙ্গে রূপায়ণ করেছেন। চরিত্রগুলোর কোনোটিই কখনো ছবিঘরে আসেনি। আরেকটি নেতিবাচক চরিত্রের কথা না বললেই নয়। এটি ‘সংশপ্তক’ নাটকের কানকাটা রমজান। দু’বার শহীদুল্লাহ কায়সারের একই নামের উপন্যাস আসে টিভি পর্দায়। একবার চরিত্রটি পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন এ টি এম শামসুজ্জামান। দ্বিতীয়বার চরিত্রটি প্রাণ পায় হুমায়ুন ফরীদির অভিনয়ে। চরিত্রটি এতটা শক্তিশালী যে, এটিকে নিয়ে আস্ত সিনেমা হতে পারত। কিন্তু শহীদুল্লাহ কায়সারের চরিত্রে আর কে হাত দেবেন! তবুও কানকাটা রমজান নামটি এসেছে শহীদুল ইসলাম খোকনের একটি ছবিতে। যে চরিত্রটিতে অভিনয় করেছিলেন ফরীদি নিজেই। কিন্তু নামের মিল ছাড়া রমজানের কোনো বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে পারেনি চরিত্রটি। দর্শকদের মনেও সেভাবে রেখাপাত করতে পারেনি যতখানি হলে আলোচনা করা যায়। টিভি নাটকের সাড়াজাগানো চরিত্র অনুপস্থিত থাকলেও সেলুলয়েডে ‘প্রজাপতি’সহ এরকম কিছু ছবি তৈরি হয়েছে যেগুলোর গল্প টিভি নাটক থেকে অনুপ্রাণিত। স্বাভাবিকভাবে চরিত্রগুলোও নাটকেরই চরিত্র। কিন্তু চরিত্রগুলোর জনপ্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ। আজকাল যে গল্প সংকটের কথা জোরেশোরে শোনা যায়, সেই সংকটে টিভি নাটকের জনপ্রিয় চরিত্রগুলো কি কোনো আলোর ইশারা হতে পারে? দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে পুরনো চরিত্রগুলো কি মাধ্যম বদলে নতুনভাবে আসতে পারে? এই আলোচনা জারি থাকুক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App