×

মুক্তচিন্তা

তাজরীন ট্র্যাজেডির ছয় বছর শাস্তি কি হবে না দায়ীদের?

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৫০ পিএম

বহুল আলোচিত তাজরীন ফ্যাশনস ট্র্যাজেডির ছয় বছর পার হয়েছে। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা তাজরীন ফ্যাশনস নামের পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যান হতভাগ্য ১১৩ পোশাক শ্রমিক। আহত হন আরো তিন শতাধিক। শিল্পকারখানায় অগ্নিকাণ্ডে একসঙ্গে এত মানুষের প্রাণহানির ঘটনা দেশে এটাই প্রথম। সেই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা শ্রমিকরা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন ভয়াবহ ঘটনার ক্ষত তাদের শরীরে-মনে। কান্না হয়তো কখনই থামবে না স্বজনহারাদের পরিবারে। যারা মারা গেছেন, তাদের আর ফিরিয়ে আনা যাবে না কিন্তু প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ কি পেয়েছে সব হতাহতদের পরিবার? শাস্তি কি হয়েছে দায়ীদের? ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না এমন ব্যবস্থা কি নিশ্চিত হয়েছে? দুর্ভাগ্যজনক হলো এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে ছয় বছর পরও আমাদের হতাশ হতে হচ্ছে। গত শনিবার দেশের প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার নানামুখী ফলোআপ রিপোর্ট। এ রিপোর্টগুলোতে প্রকাশিত তথ্যগুলো যে কাউকেই হতাশ করবে। প্রথমত শতাধিক মানুষের প্রাণহানির মামলার কূলকিনারা এখনো হয়নি। ১৯৯০ সালে সারাকা গার্মেন্টসে আগুনের ঘটনা থেকে শুরু করে তাজরীন অগ্নিকাণ্ড এসব ক্ষেত্রেই আমরা লক্ষ্য করেছি কারখানা মালিকসহ সব দোষী ব্যক্তি বিচার প্রক্রিয়ায় কালক্ষেপণকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং বিচার ব্যবস্থার বাইরে থেকে গিয়েছে। সাক্ষী হাজির না হওয়ায় অনেকটা থমকে আছে বিচার। তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার তৎকালীন এসআই খায়রুল ইসলাম একটি মামলা করেন। ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত। এরপর থেকে আসামিপক্ষের লোকজনের আর্থিক প্রলোভনের কারণে সাক্ষীরা আদালতে হাজির হচ্ছেন না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এখন পর্যন্ত ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আর সাক্ষীদের মধ্যে দুজন মালিকের পক্ষেই সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা সুবিচার পাবেন কিনা- তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন শ্রমিক নেতারা। বিচার প্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষতিগ্রস্তদের সন্দেহ কাটছে না, প্রকৃত দায়ীরা শাস্তি পাবে কিনা, পেলেও বা কবে পাবে। এদিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি পুরোপুরি সুরাহা হয়নি। এখনো হতাহতদের পরিবার-পরিজনকে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। কথা ছিল একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করার, যেখানে বিদেশি পোশাক ক্রেতারাও আর্থিক অনুদান দেবেন। কিন্তু এতদিনেও সেই প্রক্রিয়ার তেমন কিছু হলো না। হতাহতের কিছু পরিবার কিছু অর্থ অবশ্য পেয়েছে, যা মোটেই সন্তোষজনক নয়। ছয় বছর অনেক সময়। ক্ষতিপূরণের জন্য আর কত অপেক্ষা করতে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের। আমরা চাই, দ্রুত তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ডে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হোক। অনেকে পঙ্গু অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পুনর্বাসনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিশ্চিত জীবনের ধারায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হতে হবে গার্মেন্টস মালিক, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App