×

বিনোদন

গানে গানে শচীন দেব বর্মণকে, মূর্ত করে তোলেন শিল্পীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৪:৫৩ পিএম

গানে গানে শচীন দেব বর্মণকে, মূর্ত করে তোলেন শিল্পীরা
উপমহাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার ও গায়ক শচীন দেব বর্মণ। যিনি অসংখ্য কালজয়ী গানের মধ্য দিয়ে এ দেশের সঙ্গীতাঙ্গনকে করেছেন সমৃদ্ধ। সব ঘরানার গানেই সঙ্গীতপিপাসুদের আলোড়িত করেছেন গানের এই বরেণ্যজন। উপমহাদেশের কিংবদন্তি এই সঙ্গীতজ্ঞকে স্মরণে তারই কালজয়ী গানে রাজধানীর কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে সুরের ঢেউ তুললেন বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীরা। বাংলার সঙ্গে হিন্দি, লোকগানের সঙ্গে আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গানে শচীন দেব বর্মণকেই মূর্ত করে তুললেন শিল্পীরা। গানের সুরের সঙ্গে নাচের মুদ্রার অনন্য সেতুবন্ধনে ভিন্ন এক ভালো লাগা শিল্পের সন্ধ্যা সৃষ্টি হলো অনুষ্ঠানস্থলে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এমন দৃশ্যকল্পই চিত্রিত ছিল তিন দিনের ‘শচীন দেব বর্মণ সঙ্গীত উৎসব’-এর প্রথম দিনে। সঙ্গীতের এই কিংবদন্তি স্মরণে এ উৎসবের আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠন বহ্নিশিখা। সন্ধ্যায় এই উৎসবের উদ্বোধন করেন উদ্বোধনী আয়োজনের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বহ্নিশিখার সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শাহ এ সারওয়ার ও ঢাকাস্থ ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক ড. নীপা চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে আয়োজক সংগঠনের শিল্পীরা। এরপর সম্মেলক কণ্ঠে তারা পরিবেশন করে ‘তুমি আর নেই সে তুমি ও ‘নিটল পায়ে রিনিক ঝিনিক’ এ দুটি গান। এরপর একক কণ্ঠে তানসেন রহমান গেয়ে শোনান ‘রাতের আতরে’ ও ‘কে যাসরে’। একক কণ্ঠে আরো সঙ্গীত পরিবেশন করেন চন্দনা মজুমদার ও সন্দীপন। বাংলাদেশের শিল্পীদের পরিবেশনা শেষে মঞ্চে আসেন ভারতের আসামের আমন্ত্রিত শিল্পী মঞ্জুশ্রী দাস। সুকণ্ঠী ও প্রিয়দর্শিনী এই শিল্পী মঞ্চে এসে বাংলা ও হিন্দি গানের মিশেলের অনন্য ফিউশনে শ্রোতাদের সুরের চাদরে ঢেকে দেন। বর্ণে-গন্ধে-ছন্দের সঙ্গে গানটির হিন্দি ভার্সন ‘পুলকে রাঙছে’, ‘ও বন্ধু রঙিলা রঙিলা রঙিলারে’ গানের সঙ্গে এর হিন্দি ভার্সন ‘তাদবির ছে বিগরি’ বাঁশি শুনে আর কাজ নেই’-এর হিন্দি ভার্সন ‘নিন চুরায়ে চায়না চুরায়ে। ‘কি যে করি এই মন নিয়া’ হিন্দি ভার্সন ‘তু ন্যাও রঙিলা ক্যায়সে জাদু কিয়া’ বাংলা ও হিন্দি গানের মিশেলে অনুষ্ঠানে আগতদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়ান আসামের এ শিল্পী। এ ছাড়া তিনি আরো পরিবেশন করেন ‘তুমি এসেছিলে পরশু কাল কেন আসোনি, ঝিলমিল ঝিলমিল ঢেউয়ের জলে, নিশীথে যাইও ফুল বনে, যদি সময় থাকে, শোন গো দখিনাও হাওয়া’, নজরুলের ‘চোখ গেলো চোখ গেলো’। সুরের জাদুতে শ্রোতাদের হৃদয়ের গভীরে দাগ কেটেই মঞ্চ ছাড়েন মঞ্জুশ্রী দাস। এরপর নাচ নিয়ে মঞ্চে আসে আসামের শিলচরের সৌমিত্র শংকরের নাচের দল ‘ড্যান্সার সার্কেল’। ‘নৃত্যের ছন্দে শচীনকর্তা’ শিরোনামের নাচ দিয়ে অনুষ্ঠানে এস ডি বর্মণকে মূর্ত করে তোলেন এই নাচের দলটি। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের গানের অনুকরণের সুর, লোকগান ও শচীন দেব বর্মণের বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের গানে গানে নাচের এই পর্বটি সাজান সৌমিত্র শংকর। গানের সুরের সঙ্গে নাচের মুদ্রায় নাচের মধ্যে গল্প বুনে যান আসামের এই নাচের দলটি। কাল রবিবার একই মিলনায়তনে শেষ হবে বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীদের অংশগ্রহণের তিনদিনের এ উৎসব। রাধারমণের গানে মুখর শিল্পকলা প্রাঙ্গণ : গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে শিল্পকলা প্রাঙ্গণ জমে উঠেছিল বাংলা লোকসংগীতের পুরোধা রাধারমণ দত্তের গানে গানে। বাউল, কীর্তন, দেহতত্ত¡, ধামাইল ও ভাটিয়ালি গান পরিবেশনার আয়োজন নিয়ে বিকালে শিল্পকলার উন্মুক্ত মঞ্চে শুরু হয় রাধারমণ সংগীত উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এদিন শুরু হয় ‘কী রূপ দেখছি নি সজনী সই জলে’ ও ‘জলে গিয়াছিলাম সই’ গীত শতদলের সম্মেলক গানের মধ্য দিয়ে। একক সংগীতে বাউলানী শাহানা আক্তার গাইলেন ‘দুঃখে গেল কাল গো আমার’ ও ‘সকলে গিয়াছে আমার’, আবদুল কাহহার গাইলেন ‘রূপে প্রাণ নিল গো’ ও কাইন্দো না কাইন্দো না’, বিন্দু সূত্রধর গাইলেন ‘আমার বাড়ি যাইও রে’ ও ‘একটা পান চাইলাম’, আমির আলী গাইলেন ‘দারুণ পিরিতে শেল রইল’ ও ‘শ্যাম শোকেতে আমারই মরণ’, বায়েজিদ শাহ গাইলেন ‘আমারে আসিবার কথা কইয়া’, ‘জলে যাইও না গো রাই’, নেভী তালুকদার গাইলেন ‘বাঁশি কে বাজায়’ ও ‘আমারে বন্ধুয়ার মনে নাই’, নান্টু দাশ গাইলেন শ্যাম বিচ্ছেদে প্রাণ বাঁচে না’ ও ‘ও বাজাওরে শ্যাম চাঁন্দের বাঁশি’, স্বপ্না দেবনাথ গাইলেন ‘জলে যাইও না গো রাই’, ও ‘জলে গিয়াছিলাম সই’, মাহবুব আলম গাইলেন ‘ইতা কিতা করে গো বন্ধু’ ও ‘শ্যাম শোকেতে আমার মরণ’, ধীরেন দাস গাইলেন ‘আমি সহিতে পারি না’ ও ‘জলে আসলাম তোমার লাগিয়া’, শংকর ধর গাইলেন ‘জলে না গেলে না হয়’ ও ‘ভ্রমর কইও গিয়া’। ‘জলের ঘাটে দেইখা আইলাম’, ‘সুরধ্বনির কিনারায়’ ‘অনাথের নাথ গৌরারে’সহ মনোমুগ্ধকর দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন বিবিয়ানা মডেল ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এবার বসেছে উৎসবটির ৮ম আসর। তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি ও রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র। সহযোগিতায় রয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ও গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। উল্লেখ্য, লোককবি রাধারমণ দত্তের রচিত ধামাইল গান সিলেট ও ভারতের বাঙালিদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত। কৃষ্ণ বিরহের আকুতি আর না পাওয়ার ব্যথা কিংবা সব পেয়েও না পাওয়ার কষ্ট তাকে সাধকে পরিণত করেছে। তিনি দেহতত্ত¡, ভক্তিমূলক, অনুরাগ, প্রেম, ভজন, ধামাইলসহ নানা ধরনের কয়েক হাজার গান রচনা করেছেন। আজ শনিবার শেষ হচ্ছে তিন দিনের এ উৎসব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App