×

পুরনো খবর

কাদের-মওদুদের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০১৮, ০৪:২৯ পিএম

কাদের-মওদুদের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি
জেলার ৬টি আসনের মধ্যে গুরুত্ব বিবেচনায় নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) ভিআইপি আসন হিসেবে বিবেচিত। এ আসনে যিনিই নির্বাচিত হন তিনিই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন। ভোটের মাঠে এ আসনে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আর রাজনীতির মাঠেও মূল প্রতিদ্ব›দ্বী দুদলেরই শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা। একজন বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অন্যজন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। মূলত এ দুজন রাজনীতিবিদের কারণেই এ আসনটি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। দুটি উপজেলার বসুরহাট ও কবিরহাট পৌরসভা এবং ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ সংসদীয় আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬১ হাজার। এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একচেটিয়া আধিপত্য নেই। পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, ১৯৯১ জাতীয় পার্টি থেকে ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে হেরে গিয়ে মওদুদ আহমদ বগুড়া থেকে এমপি হন। অন্যদিকে ১৯৯৬, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসনে এমপি হন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ অবস্থায় বিএনপি যেমন হারানো আসন পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট, তেমনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও চায় জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। দুই দলের নেতাকর্মীদেরও মনোভাবÑ কেউ কারে নাহি ছাড়ে, সমানে সমান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দল, প্রার্থী ও জয়-পরাজয় নিয়ে এ আসনেও ভোটের হাওয়া বইছে। যেহেতু এ আসনে ওবায়দুল কাদের এবং ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত তাই ইতোমধ্যেই দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়ে গেছে। দুজনের অনুসারীরাই সমানে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, আলোচনা সভা, ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ভোটারদের মাঝেও উৎসাহের কমতি নেই। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল ভোরের কাগজকে বলেন, বিগত নির্বাচন আর এখনকার নির্বাচন এক নয়। মওদুদ সাহেব একাধিকবার বিজয়ী হয়েছেন, অনেক বড় বড় দায়িত্বও পালন করেছেন। কিন্তু সে অনুযায়ী তিনি এলাকার উন্নয়নে কিছুই করেননি। তখন গ্রামীণ অবকাঠামোগুলোও অরক্ষিত ও উন্নয়নবঞ্চিত ছিল। অথচ ওবায়দুল কাদের বিজয়ী হয়ে যোগাযোগ-শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় উন্নয়নের বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তার তিন মেয়াদে কল্পনাতীত উন্নয়ন দেখেছে কোম্পানীগঞ্জের মানুষ। পুরো জেলায় যত উন্নয়ন হয়েছে তার চেয়ে বেশি হয়েছে এ আসনে। মিজানুর রহমান বাদল এ সময় মুছাপুর ক্লোজার, জোড়ালগঞ্জ-সোনাপুর সড়ক, নোয়াখালী খাল পুনঃখনন ও নদী রক্ষা বাঁধ, বসুরহাট কল্যান্দি-সেনবাগ সোনাইমুড়ি সড়ক সব মিলিয়ে হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, এ ছাড়া শতভাগ বিদ্যুতায়ন অনেক বড় সাফল্য। স্কুল, কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসায়ও ব্যাপক উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করেছেন ওবায়দুল কাদের। তাই শুধুমাত্র দলের নয়, এলাকার সাধারণ মানুষ তার প্রতি সন্তুষ্ট। এসব উন্নয়নের বিষয় মাথায় রেখেই আগামী নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই সেলিম ভোরের কাগজকে বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একজন বিশ^াসযোগ্য ব্যক্তি। তিনি উপরাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রী ছিলেন। কোম্পানীগঞ্জের উন্নয়নে তিনি অনেক কাজ করেছেন। তার সময়কালে এ এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ হয়েছিল, বিসিক শিল্প নগরী, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, বসুরহাটের চর কাকরায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (নোবিপ্রবি), নোয়াখালী জেলা জজ আদালত কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়নকাজ করেছেন। আমি মনে করি মানুষ তার উন্নয়ন কর্মকাÐের কথা স্মরণে রেখেছেন। এদিকে নির্বাচনী এলাকার সাধারণ ভোটাররা বলছেন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদকমুক্ত পরিবেশ বজায় রেখে যিনি এলাকার উন্নয়ন করবেন তাকেই ভোট দেবেন তারা। কোম্পানীগঞ্জের চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের রামেশ^রপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন (৪৪) বলেন, আমাদের এলাকার সড়ক যোগাযোগ খুবই খারাপ। আমরা চাই এলাকার উন্নয়ন। উন্নয়নের পক্ষে যারা কাজ করবেন আমরা তাদের পক্ষেই কাজ করব। কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়নের কৃষক আবুল বাশার (৬৫) বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছে। আমি উন্নয়নের পক্ষেই আছি। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিকভাবে অনেক উজ্জীবিত। তারা বলছেন, ওবায়দুল কাদেরের জনসমর্থন এখন অনেক ভালো। তবুও তারা বসে না থেকে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। কেন্দ্র কমিটি, কেন্দ্র রক্ষা কমিটি, প্রতিটি ওয়ার্ডে মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি করা হয়েছে। মন্ত্রীর ঘন ঘন এলাকা সফর এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়, এলাকার উন্নয়নকাজের উদ্বোধন, খোঁজ-খবর নেয়ায় সবাই সন্তুষ্ট। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে আগামী নির্বাচনে জয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তারা আশাবাদী। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি তার হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায়। কিন্তু দলীয় ও পুলিশি হয়রানি, পাশাপাশি প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভ‚মিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দলের উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে বিএনপির এ হারানো আসন পুনরুদ্ধার করা সম্ভব বলে আশাবাদী স্থানীয় বিএনপি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App