×

জাতীয়

জোট ও মহাজোটের হিসাবে পাল্টে যেতে পারে সমীকরণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০১:১৩ পিএম

জোট ও মহাজোটের হিসাবে পাল্টে যেতে পারে সমীকরণ
চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ আসন বাঁশখালীতে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে এবং যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র বিএনপি-জামায়াত ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনে কট্টর সাম্প্রদায়িক ও উগ্রবাদী সংগঠনের আধিপত্য রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থাগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে বড় দুই জোটের শরিকদের মধ্যে চাপ রয়েছে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোটবদ্ধ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুদলকেই ছাড়তে হতে পারে এই আসনটি। জাতীয় পার্টি যদি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে এবং জামায়াত ও ইসলামী জোট যদি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যজোটে থাকে তাহলে জোট-মহাজোটের হিসাবে পাল্টে যেতে পারে সমীকরণ। বাঁশখালী আসনে মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলনের প্রায় ডজনখানেক প্রার্থী। এই আসনের বর্তমান এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী নানা কারণে এলাকায় বিতর্কিত অবস্থানে থাকায় তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে মাঠে আছেন একই দলের আরো দুজন শক্তিশালী প্রার্থী। তাদের মধ্যে আছেন প্রয়াত নেতা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও শিল্পপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত আখতারুজ্জান চৌধুরী বাবুর ভাগ্নে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন। তবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী মহাজোট অথবা সম্মিলিত জোটের পক্ষ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে একাট্টা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী করা হয় সাবেক সিটি মেয়র ও সাবেক এমপি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীকে। কিন্তু সেই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কথামতো শেষ মুহূর্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়ায় তিনি আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। অন্যদিকে বাঁশখালী আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী নানাভাবে বিতর্কিত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে তিনি বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সুলতান উল কবির চৌধুরী। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই জয়লাভ করেন। তবে জোটবদ্ধভাবে ভোট হলে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া ইসলামী ঐক্য জোটের নেতা আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিক মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরীও এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। দলের নিবন্ধন থাকায় ২০ দলের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে লড়তে চান তিনি। জোটের নেতা হিসেবে এবং একটি ইসলামী পার্টির শীর্ষ নেতা হিসেবে তিনি ঐক্যজোটের প্রার্থী হবেন বলে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। এ ছাড়া বাঁশখালী আসন থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা ফরিদুল আলম ও ইসলামী ফ্রন্টের আহম্মদ মহিউল আলম চৌধুরী। নানা কারণে সমালোচিত চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজারের জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও পরিচালক মুফতি ইজাহারুল ইসলাম হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির পদে ছিলেন। ২০১৩ সালে মুফতি ইজাহারের মাদ্রাসার ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে হ্যান্ড গ্রেনেড বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তল্লাশি করে চারটি তাজা গ্রেনেড এবং বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। রাতে মাদ্রাসার ভেতরে মুফতি ইজহারের বাসায় তল্লাশি করে ১৮ বোতল এসিডও পাওয়া যায়। মুফতি ইজাহারের মাদ্রাসায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) প্রশিক্ষণ চলত। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গেও মুফতি ইজাহারের সম্পৃক্ততা আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে বাঁশখালীর বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী নানা কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে জামায়াত সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের অপর অংশের নেতাকর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ, ২০১৬ সালের ১ জুন পছন্দের ব্যক্তির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বানাতে না পেরে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করেন তিনি। বেড়িবাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি, ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে টিআর কাবিখার অর্থ লুট, চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এই এমপির বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমার উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ও বিতর্ক ছড়াচ্ছে। গত ৪ বছরে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে বাঁশখালীতে। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য ফের নৌকার ওপরই আস্থা রাখতে হবে জনগণকে। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাঁশখালীর মাটি বিএনপির ঘাঁটি। ব্রিজ নির্মাণ, অসংখ্য কাঁচা রাস্তা পাকা করাসহ শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতের উন্নয়ন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ স্থাপন করায় জনগণ আমাকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে ধানের শীষের প্রতি তাদের ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। এবার ধানের শীষের প্রার্থী হয়ে শেষ হাসি হাসব। দলকে জয় এনে দেব। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এমপি ও সিটি মেয়র থাকাকালে বাঁশখালীর অধিকাংশ উন্নয়ন আমার হাতে করা। শিক্ষার উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করেছি। দীর্ঘদিন ধরে বাঁশখালীতে তেমন কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় বাঁশখালীর মানুষ এখন আমাকে চায়। এবার যদি আমি এমপি হতে পারি জনগণের জন্য কাজ করব। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে বেশ কিছু স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও নির্মাণ, গরিব ও দুস্থদের সাহায্য করেছি। নিজের প্রতিষ্ঠিত ১৯টি শিল্প-কারখানায় প্রায় ১৬ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছি। দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীই মনোনয়ন দেয়ার মালিক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App