×

জাতীয়

চাপে আছেন আ.লীগের অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৪৯ এএম

চাপে আছেন আ.লীগের অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী
চাপে আছেন আ.লীগের অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে চাপের মুখে রয়েছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীরা। কমপক্ষে দেড় ডজন আসনে একাধিক হেভিওয়েট নেতা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। শেষ পর্যন্ত কে পাবেন দলীয় মনোনয়ন এ নিয়ে প্রার্থীদের পাশাপাশি নেতাকর্মীরাও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের বিপরীতে চার হাজারেরও বেশি দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। তবে ৭টি আসনে দলটির একজন করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তারা হলেন শেখ হাসিনার ২টি গোপালগঞ্জ-৩, আরেকটি এখনো প্রকাশ করা হয়নি। নোয়াখালী-৫ ওবায়দুল কাদের, গোপালগঞ্জ-২ শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বাগেরহাট-১ শেখ হেলাল উদ্দিন, মৌলভীবাজার-২ মো. শাহাবুদ্দিন এবং বরিশাল-১ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। এ বছর প্রতিটি আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের গড় প্রার্থী ১৩ জন। ক্ষেত্র বিশেষে এ সংখ্যা ১০ থেকে ৫০ ছাড়িয়ে গেছে। এ সংখ্যা থেকে বাদ যায়নি আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীরাও। কোনো কোনো আসনে তাদের বিরুদ্ধে ১০টিরও বেশি মনোনয়ন জমা পড়েছে। কোনো কোনো আসনে দলটির হেভিওয়েট বনাম হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যেই মনোনয়ন যুদ্ধ এখন তুঙ্গে। এ নিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডও সহজে সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না বলে জানা গেছে। তার ওপর মহাজোটের প্রার্থীর চাপ তো আছেই। ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমানে এগুলো যাচাই-বাছাই শেষে চ‚ড়ান্তকরণের কাজ চলছে। আজকালের মধ্যে মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ২৫ তারিখের মধ্যেই মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে। প্রথমে দলগতভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ। এরপর মহাজোটের শরিকদের আসন ছাড় দেয়া হবে। মনোনয়ন যুদ্ধ এখন তুঙ্গে ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসামরিক খাতবিষয়ক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট আবদুল মান্নান খান। প্রত্যেকেই দলের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে নেতাকর্মীদের শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এ নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে আরো যারা মনোনয়ন ফরম তুলেছেন তাদের মধ্যে আছেন সাবেক ছাত্রনেতা এডভোকেট নূরে আলম উজ্জ্বল, পনীরুজ্জামান তরুণ প্রমুখ। ফলে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীই যেমন আশাবাদী তেমনি চিন্তিতও বটে। এ ছাড়া আসনে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট সালমা ইসলামও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তিনিও আসনটি কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চাইবেন না। জাপা থেকে সালমা মনোনয়ন পেলে বাদ যাবেন আ.লীগের এই দুই হেভিওয়েট নেতা। ঢাকা-২ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ ও খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামের আসনে এবার নৌকার মনোনয়ন যুদ্ধে এগিয়ে আছেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। দলটির তরুণ এই নেতা কেরানীগঞ্জ-কামরাঙ্গীরচরে শক্ত ঘাঁটি স্থাপনে সক্ষম হয়েছেন। তার পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ মাঠে নেমেছেন। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কামরুল ইসলাম। ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর-আদাবর) আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানকের দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। আসনটি নিয়ে নানক ও সাদেক খানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই গোপন লড়াই চলছে। গত ১০ নভেম্বর ওই লড়াই প্রকাশ্যে আসে। ওই দিন দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন ২ জন। শেষ পর্যন্ত কে মনোনয়ন পাচ্ছেন এ নিয়ে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি হেভিওয়েট দুই প্রার্থীই সংশয়ে রয়েছেন। শেরপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিপরীতে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বদিউজ্জামান বাদশা। দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি মতিয়ার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ-তারাবো) আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ বিশিষ্ট শিল্পপতি গাজী গোলাম দস্তগীরের বিপরীতে দলটির ৪০ জন নেতা মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদও ওই আসনে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন দলটির তিন প্রভাবশালী নেতা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান সাংসদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও আ.লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কে পাচ্ছেন মনোনয়ন? এ নিয়ে তিন জনই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। চাঁদপুর-৩ আসনের মনোনয়ন নিয়ে হাইকমান্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এবং ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। পরপর দুবার নির্বাচিত দীপু মনি এবার সুজিত নন্দীকে নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। চাঁদপুর-২ আসনে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম মামলাজনিত কারণে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত। সে ক্ষেত্রে তার ছেলে সাজেদুল ইসলাম চৌধুরী দীপুও মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। এ ছাড়া মনোনয়ন নিয়ে চিন্তিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট সাহারা খাতুন। ঢাকা-১৮ আসনে পরপর দুবার মনোনয়ন পেলেও এবার তার মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সংসদীয় মনোনয়ন বোডের্র সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে জানান, আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট বলে কোনো প্রার্থী নাই। জরিপের ভিত্তিতে যিনি এগিয়ে আছেন, তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App