×

জাতীয়

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০১:২০ পিএম

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা
বাড়ির উঠানে খেলতে গিয়ে পায়ের হাড় ভেঙে গেছে ৪ বছর বয়সী শিশু আবিদার। হতদরিদ্র পরিবারের শিশুটিকে তার মা জাহানারা বেগম নিয়ে এসেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ডাক্তারকে দেখানোর পর প্রয়োজন হয় এক্স-রে করার। এক্স-রে করার বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক্তার বাইরের কোনো ল্যাব থেকে করে আনতে বলেন। জাহানারার হাতে সর্বসাকুল্যে ২শ টাকা আছে। সেই টাকায় ওষুধ কিনে এক্স-রে না করেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। বাইরে থেকে এক্স-রে করানোর মতো টাকা তার হাতে নেই। বললেন, শুনেছি সরকারি হাসপাতালে কম টাকা দিয়ে এক্স-রে করা যায়। বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তব অনেক কঠিন। এটি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র। সরেজমিন হাসপাতাল পরিদর্শনে জানা গেছে, ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি ১ বছর থেকে বিকল। আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও জনবল সংকটে তা চালু করা যায়নি। সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি ও এনেসথেসিয়া বিভাগে ৪ জন কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও একজনও নিয়োগ দেয়া হয়নি। এ ৪টি বিভাগের ৩টিতে ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসা কর্মকর্তা দিয়ে চালানো হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। গুরুত্বপূর্ণ গাইনি বিভাগটি একেবারেই শূন্য। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার পদটিও খালি। হাসপাতালের নথিপত্র থেকে জানা যায়, বহির্বিভাগে দৈনিক ৫০-৬০ জন চিকিৎসাসেবা নেন। ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। ৫০ শয্যার ভবন ও অবকাঠামো থাকলেও লোকবলের অভাবে ৩১ শয্যার বেশি রোগী ভর্তি করা যায় না। হাসপাতালের ল্যাব মেডিকেল টেকনোলজি স্টিফেন কুমারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোগ নির্ণয়ের জন্য যে পরীক্ষাগুলো করতে হয় তার মধ্যে ৯টি পরীক্ষা করা যায় না ওষুধপত্র ও যন্ত্র না থাকায়। দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চিকিৎসা দিচ্ছেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, চিকিৎসা কর্মকর্তাকে বহির্বিভাগও সামাল দিতে হচ্ছে। হাসপাতালের এক্স-রে কক্ষ ও অস্ত্রোপচার কক্ষে তালা ঝুলতে দেখা যায়। ওয়ার্ড ঘুরে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন গহিরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসা কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন তালুকদার। কথা বলে জানা গেল, ৬ দিনের ছুটিতে আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। হাসপাতালে ভর্তি থাকা উপজেলার জানিপাথর গ্রামের রুবি আকতারের একটি বাচ্চা প্রসব হয়। তিনি বলেন, ভর্তি হওয়ার পর থেকে বাইরের ফার্মেসি থেকে ১২শ টাকার ওষুধ কিনে আনতে হয়েছে। চিকিৎসা পেলেও ওষুধ দেয়া হচ্ছে না হাসপাতাল থেকে। রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, তিনি ৬ দিনের ছুটিতে আছেন। হাসপাতালটি ৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও জনবল নিয়োগ না দেয়ায় কার্যক্রম চলছে ৩১ শয্যার। এ অবস্থায়ও কনসালটেন্ট, আবাসিক চিকিৎসক, ঝাড়–দার ও এমএলএস পদের একাধিক পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে কষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন এক্স-রে মেশিনের জন্য এবং শূন্য পদগুলোতে নিয়োগদানের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App