কাস্টমসে দুর্নীতি, দুদকের সুপারিশ গুরুত্ব দিন
কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:২৮ পিএম
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন কাস্টমস, এক্সাইজ এন্ড ভ্যাট বিভাগে দুর্নীতির ১৯টি উৎস চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধে ২৬ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট নিয়ে দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক দলের সুপারিশে এসব কথা উঠে এসেছে। দুদক রাজস্ব খাতের দুর্নীতি রোধে কিছু সুপারিশ তৈরি করে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে অনুরোধ করে চিঠিও পাঠিয়েছে। দুদকের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। দুদক সূত্র বলছে, কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক দল বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের (অংশীজন) সঙ্গে আলোচনা, কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট সংক্রান্ত বিভিন্ন নথিপত্র পর্যালোচনা, সরেজমিন বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন, গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যাদি এবং কমিশনের গোয়েন্দা উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পণ্য আমদানিতে পণ্যমূল্য অবমূল্যায়ন, অতিমূল্যায়ন, পণ্যের বিবরণ, এইচএস কোড, ওজন পরিমাণ, গুণগতমান ইত্যাদি বিষয়ে মিথ্যা ঘোষণা, প্রতারণা এবং একই ধরনের পণ্যের একাধিক চালান প্রস্তুতকরণ কাস্টম হাউসগুলোর ব্যাপক প্রচলিত অনিয়ম। উচ্চকর আরোপযোগ্য পণ্যগুলোর ইনভয়েসে প্রকৃত পরিমাণ/ওজনের চেয়ে কম এবং নিম্নহারে কর আরোপযোগ্য পণ্যের ইনভয়েসে প্রকৃত পরিমাণ/ওজনের চেয়ে বেশি দেখানো হয়। এ ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রে অবৈধ সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে আমদানিকারকের ঘোষণা অনুসারে শুল্কায়ন করে ওই সব পণ্য খালাস করা হয়। রেয়াত সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন বা এসআরওর শর্ত অমান্য এবং আমদানিনীতি, পরিবেশনীতি, অন্য বিধিবিধান ও নীতিমালার শর্ত/নির্দেশনা ভঙ্গ করে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দুর্নীতি করা হয়। বিশ্বব্যাপী কাস্টমসের জন্য অটোমেটেড পদ্ধতি চালু থাকলেও বাংলাদেশে কাস্টমস বিভাগ সার্বিকভাবে এখনো এটি চালু করতে পারেনি। এ কারণে কাস্টমস বিভাগের কার্যক্রম ও প্রক্রিয়াগুলো এখনো অস্বচ্ছ এবং সনাতন পদ্ধতিতে হচ্ছে। এ কারণে তা দুর্নীতির প্রবণতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলে দুদক মনে করে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক ২৬ দফা সুপারিশ প্রস্তাব করেছে। সুপারিশের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ওই প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য কমিশনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আমরা মনে করি, দুদকের সুপারিশমালা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তথা সরকার গভীর দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করবে। দুদকের দূরদর্শিতা ও শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন করা না হলে এখানে অনিয়ম-দুর্নীতি আরো বেড়ে যাবে। সরকার দেশের অর্থনীতি উন্নয়নে রাজস্ব খাতকে প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে দেখছে। কিন্তু কিছু অসৎ লোকের কারণে সেসব উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। দুদকের শ্রম যেন পণ্ডশ্রমে পরিণত না হয়। সরকারকে এই ব্যাপারে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে।